‘যাইত্যাছে যাইত্যাছে; কই যাইত্যাছে, জানে না’
কথা এই— অতীতের সুকীর্তিতে বর্তমান ছাত্রলীগ যেমন ছাড় পায় না, শুরুর প্রত্যয়ে ভিপি (সাবেক) নূর ও তার অনুগতদেরও রেয়াৎ নেই। ‘যাইত্যাছে যাইত্যাছে, কই যাইত্যাছে’, জানেন না নূর। ফলত, ধর্ষণবিরোধী লক্ষ্যে স্থির না থেকে এখন তিনি সরকারবিরোধী অগণন ইস্যুতে উন্মাদের মতো দৌড়াচ্ছেন। সরকারপতনও দাবি করছেন। নূরের বহুরৈখিক দৌড়ঝাঁপে কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত পঙ্ক্তি মনে পড়ছে—“যে যাবে অনেকদূর, তাকে বলি, ধীর পায়ে হাঁটো।”
নূর যে বেশিদূর যেতে আসেননি, সেটা তার অতিশয় দৌড়ঝাঁপে স্পষ্ট। এ দায় প্রথমত কেনাবেচার রাজনীতির। দেশ থেকে হত্যা, দুর্নীতি, গুমখুন, ধর্ষণসহ সব অন্যায়-অপরাধ তলানিতে নিয়ে আসতে হলে সবার আগে আমাদের বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। শুরুতে নূরের মুখেও এ ধরনের কথা ছিল। তার প্রারম্ভিক কথা শুনে অনেকে আশাবাদী হয়েছিলেন। কথায় ও আচরণে মিল না-পেয়ে এখন তারা হতাশ। নূর যে কুসুমকুমারী দাশের ‘কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়’ ছেলেটি নয়, তা তার সাম্প্রতিক আচরণে স্পষ্ট। ভারতচন্দ্রের ভাষায় অতিভাষী নূর এখন— ‘সে বলে বিস্তর মিছা, যে বলে বিস্তর।’
আমাদের রাজনীতিবিদরা মুখে এক, কাজে আরেক। ভিপি (সাবেক) নূরও এর ব্যতিক্রম নন। সমর্থনের পালে বিএনপি-জামাত-শিবির-কওমির হাওয়া লাগতেই তার সামন্তবাদী চেহারা বেরিয়ে এসেছে। এখন তিনি হুমকি-ধমকি ছাড়া কথা বলতে পারেন না। কখনও কখনও তাকে তারেক রহমানের মতো বেয়াদব মনে হয়। ক্ষমতার বাইরে থাকতেই যার এত দম্ভ, কোনও দূর ভবিষ্যতে যেনতেনপ্রকারণে ক্ষমতায় গেলে তার আচরণ কতটা স্বৈরাচারী হবে, তা অনুমান করতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন হয় না। কাদের দ্বারা নূর ব্যবহৃত হচ্ছেন, তা সাদাচোখেই বোধগম্য।
নতুন রাজনৈতিক দলগঠনের ঘোষণা দিলেও এই জনবোধ মুছে যাবে না। অশুভ শক্তির ইশারায় তেমন দল নোবেলবিজয়ী প্রফেসর ইউনুসও গঠন করেছিলেন, যার আয়ু একমাসও ছিল না। একই ইশারায় সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনও নির্বাচনী জোটের সাইনবোর্ড হয়েছিলেন। যত হাঁকডাকই থাক মুখে, ভিপি (সাবেক) নূর ইউনুস-কামালের পদনখকণামাত্রও নন। পঁচাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি সার্কাসের মঞ্চ। সেই মঞ্চে ভিপি নূর রিংমাস্টার নাকি ভাঁড়, তা অচিরেই জানা যাবে। লেখক: কবি, সাহিত্যিক ও সিনিয়র সাংবাদিক।