নূর মোহাম্মদ স্বজন-

কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘নারী’ কবিতায় যথার্থই বলেছেন-
‘কোনো কালে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।’
ব্যারিস্টার ড. ফারজানা কবির শীলা। একজন ব্যারিস্টার । যিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের আমৃত্যু সভাপতি , সাবেক সাংসদ প্রয়াত অ্যাড. আব্দুর রইছ সাহেবের ছেলে ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনের সাথে। বিবাহপূর্বেই তিনি জানতেন তার শ্বশুর একজন মহান রাজনীতিবিদ ছিলেন। এমনকি তার স্বামী সাবেক ছাত্রনেতা । যখন উনারা ব্যারিস্টারি পড়তে যুক্তরাজ্য যান তখন তাদের পড়া শেষ করে যুক্তরাজ্যে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। উভয়ের আইন পেশায় জীবিকানির্বাহ ছিল অনেক আনন্দের । দুজনের আয়ও ছিল অনেক। বেশ সুনামও কুড়িয়েছিলেন দুজন।
স্বামী ব্যারিস্টার ইমন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন।  বাংলাদেশে চলছে থমথমে পরিবেশে। চারিদিকে খুন রাহাজানি । বোমা বিষ্ফোড়নের হিড়িক ছিল দেশে। দেশের এই অরাজকতা পরিবেশে যখন স্বামী দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন স্ত্রীর কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন যেখানে জীবনের কোন গ্যারান্টি নেই সেখানে কেনো যাবেন? উত্তর একটাই বাবার পথেই হাঠতে চাই। এরকম পরিস্থিতিতে সব স্ত্রী যেখানে সর্বোচ্চ বাধা প্রয়োগ করবেন সেখানে ফারজানা কবির শীলা স্বাগত জানালেন।
যুক্তরাজ্যের অনেকগুলো পত্রিকায় খবর ছাপা হলো ” চকচকে পাউন্ডের মায়া ছেড়ে ব্যারিস্টার দম্পতি দেশে চলে যাচ্ছেন। দেশে ফিরলেন ব্যারিস্টার দম্পতি। শুরু হল নতুন যুদ্ধ। চারপাশে অরাজকতা । বাংলা ভাই, শায়েখ আব্দুর রহমান যেখানে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে বোমা বিষ্ফোড়ন খেলায় মত্ত তখনকার সময়ে দাপুটে নেতা ব্যারিস্টার ইমনের পাশে বুকভরা সাহস আর অফুরন্ত অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে ছিলেন ব্যারিস্টার ফারজানা শীলা।
জীবনের ঝুকি নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনায় যুক্ত হলেন ব্যারিস্টার ইমন । একের পর এক সংঘাতময় সময় অতিক্রান্ত করে যুবলীগ রাজনীতিতে সক্রিয় ব্যারিস্টার ইমন। সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হলে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের। সুনামগঞ্জ যখন দুর্বৃত্তায়নে অন্ধকারাচ্ছন্ন তখন মানুষ ব্যারিস্টার ইমনকে আশার আলো হিসেবে পেলেন। একের পর এক শুরু হল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছি ন্ন করতে সর্বদা পাশে থেকে সাহস আর অনুপ্রেরণা যুগানো মহীয়সী নারী ফারজানা কবির শীলা। শুরু হল যুবজাগড়ন। সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে যুবতারকা রুপে রূপ নিলেন ব্যারিস্টার ইমন ।
তার পরে শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা পরিষদ প্রশাসক, এমপি মনোনয়ন , জেলা আওয়ামীলীগ সেক্রেটারি । প্রতিটি ধাপে সাহস আর অনুপ্রেরণার যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন ব্যারিস্টার ফারজানা কবির শীলা। উনার কাছে প্রতিটি নেতাকর্মী হয়ে উটল আপনজনের মত। উনি যেন কারো ভাবী না হয়ে, হয়ে উটলেন সবার বোন । সুপ্রিমকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত থাকায় বেশিরভাগ সময় ঢাকা থাকেন। ঢাকা কোন নেতাকর্মী বাসায় গেলে শুরু হয় উনার আপ্যায়ন । লা্চ্ছি, সেমাই, মিষ্টি ছাড়া কতধরনের নাস্তা । সবকিছুই নিজের হাতে তৈরী। তারপর বিভিন্ন ধরনের সুস্বাধু তরকারী দিয়ে ভাত খাওয়া।। এ যেন মাতৃস্নেহ। কেউ যদি ভাত না খেয়ে আসে উনি বড্ড রাগ করেন। যারা জুনিয়র তাদের কাছে খরছের টাকা আছেকিনা খবর নেন এবং নিজের স্নেহ থেকে বাহিরে কিছু খাওয়ার জন্য কিংবা খরছের জন্য টাকা পয়সা ও দিয়ে দেন। সুনামগঞ্জ আসেন প্রতিনিয়ত শতশত নেতাকর্মী দল বেধে বাসায় যায় নেতার কাছে। ভাবী বাসায় থাকা মানেই বাহারি ধররনের নাস্তা যেন অত্যাবশ্যকীয় । প্রতিটি ঈদে এসে সকল গরীব-দুঃখী দের খবর নেয়া যেনো তার নেশা। সবার মধ্যে শাড়ি লুঙ্গী বিতরণ করেন। নিজ হাতে সুস্বাদু তরকারী রান্না করে সবাইকে খাওয়ানোতে যেন ঈদের পূর্ণতৃপ্তি পান তিনি। অবাক হওয়ার মত যেটা কুরবানী ঈদে পশু জবাইর পর থেকে মাংস বিতরণ, আত্মীয় স্বজনের বাসায় মাংস পাঠানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রান্না করে সবাই কে খাওয়ানো।। মাঝে মাঝে অবাক হই একজন ব্যারিস্টার যিনি তার এই এত বড় পেশায় থেকে এত্তসব পরিশ্রম করেন ভেবে পাইনা। কি করে সম্ভব।
ভাবী সুনামগঞ্জ যখনই আসেন মনে হয় যেনো ঈদ শুরু হয়েছে। হঠাত করে সবার আবদার ভাবী খিচুড়ি খাবো আমরা, ভাবী রুটি দিয়ে গরুর মাংস খাবো। হাসিমুথে তড়িৎ তা তৈরি কের আপ্যায়ন করেন। গরুর মাংসর পাশাপাশি তিনি খাশির মাংসও রান্না করেন যদি কেউ গরুর মাংস না খায়। এত মহানুভব মানুষ খুব বিরল। তিনি সুনামগঞ্জ কে এগিয়ে নিতে স্বামী কে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। সুনামগঞ্জের শিশুদের আরো বেশি মানসম্মত পাঠদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করছেন “নান্দনিক পাঠশালা””।। নান্দনিক পাঠশালার শিশুদের স্কুল ড্রেস , স্কুল ব্যাগ সবকিছু প্রদান করছেন নিজ তহবিল হতে বিনামূল্যে। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় নান্দনিক পাঠশালা তৈরী করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন । একজন ব্যারিস্টার , একজন পিএইচডি ধারী, একজন এতব নেতার স্ত্রী যার মাঝে নূন্যতম কোন অহংকারবোধ নেই।
ব্যারিস্টার ড. ফারজানা কবির শীলা ভাবী আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম। আপনার মত হয়ে ওঠুক প্রতিটি নারী। আমার এই সল্পলিখনিতে যদি কোন ভুলভ্রান্তি ঘঠে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন । পরিশেষে আপনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। সর্বোপরী ভালো থাকবেন।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn