পীর হাবিবুর রহমান-আওয়ামী লীগের উপকমিটি ঘিরে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বুকে পুঞ্জিভূত মূল্যায়ন না হওয়ার অন্তহীন দহনে ক্ষতবিক্ষত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ২০০৮ সালে গণরায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে বৎসন্তের কোকিলেরা ভীড়তে থাকেন আওয়ামী লীগে। সুযোগসন্ধানি সুবিধাভোগী নষ্টদের মিছিল বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগে। দলীয় কার্যালয় থেকে মন্ত্রী পাড়া,সচিবালয়,সংসদ সব খানেই তাদের ভীড়।  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছায়ায় আশ্রিত এইসব সুবিধাবাদীরা রাতারাতি বিত্ত বৈভবের মালিক হতে থাকে। এদেখে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোটেক সাজেদুর রহমান খান প্রথম এদেরকে হাইব্রিড বলে তাচ্ছিল্য করেছিলেন। তিরস্কারের মুখে হাইব্রিড শব্দটি আওয়ামী লীগে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। লাজশরম হীন সুবিধাভোগী হাইব্রিডরা তবু দমেনি। বেলা যত গড়িয়ে যেতে থাকে এদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। যতদূর চোখ যায় সবশ্রেনী পেশায় কেবল আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ দেখা যায়।

অতিষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এদেরকে হাইব্রিড বলে ভৎর্সনা করেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও কাউয়া বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অনেকেই তখন বলেছেন দলে কাউয়া তাড়াও বা শুদ্ধি অভিযান জরুরি। ইতিমধ্যে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্কার বলে দিয়েছেন জামায়াত থেকে কাউকেই দলে না নিতে। এরআগে চাপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত মামলার জালে বন্দি জামায়ত নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ এমপিরা দলে ভীড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের দুভার্গ্যই এটা যখন ক্ষমতাচ্যুত হয় বা ক্ষমতার বাইরে যায় তখন মিছিল করার লোক পায় না। বঙ্গবন্ধুর আর্দশে লালিত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের নিবেদিতপ্রাণ আর্দশিক কর্মীরা মরিয়া হয়ে লড়ে। জীবন দেয়, সংগঠন করে, আন্দোলন করে, জেল খাটে, নির্যাতিত হয় কিন্তু ক্ষমতায় এলে ক্ষমতাবান মন্ত্রী এমপি নেতাদের আচরণে দূরে সরে যায়। হাড়ির খবর শেখ হাসিনা রাখেন বলেই বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা অভিমানী হলেও তারাই প্রকৃত কর্মী। দলের দুঃসময়ে তারাই ছুটে আসে।

কথায় আছে আওয়ামী লীগ হয়ে জন্মাতে হয়, আওয়ামী লীগ হওয়া যায় না। ৭৫-এর পর কঠিন দুঃসময়ে একুশ বছর লড়েছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীরা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আর্দশে এরা জন্মেছিলো আওয়ামী লীগ বলে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর এদের টপকে নানা দল থেকে আসা সুযোগ সন্ধানিরা শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুতির পর বিএনপি-জামাত শাসনামলে সুবিধাবাদীরা সরে যায় না হয় আড়ালে চলে যায় অথবা বিএনপি-জামাতের সঙ্গে আঁতাত করে শান্তিতে বাস করে।

অন্যদিকে দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা আবার নির্যাতন জেলজুলুম সহ্য করে কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। সেই কঠিন যুদ্ধের দগদগে ক্ষত নির্যাতনের চিহ্ন গ্রেনেড বোমার আঘাত কারা দহনের স্মৃতি এখনও মুজে যায়নি। কিন্তু বিগত নয় বছর ধরে দলে আসা নষ্ট বাম থেকে সুযোগ সন্ধানি হাইব্রিড বা কাউয়াদের রমরমা বাণিজ্য দেখছে বাংলাদেশ। ক্ষমতা, ভোগবিলাস সব যেন তাদের জন্য। দলের পদপদবী সবখানে হাইব্রিডরাই নয় এদের হাত ধরে নানা লোভমোহের পথে বিএনপি-জামাতও ঠাঁই নিয়ে নেয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিয়ত মানুষের মনের ভাষা কর্মীদের আবেগ অনুভুতি লালন করে কথা বলেন। এরআগে উপকমিটিতে শত শত কর্মীকে ঠা্ইঁ দেয়া হয়েছিল। সেখানে অবস্থা এমন দাঁড়ায়। তিনি যর্থাথই বলেছিলেন, ঘায়ে ধাক্কা লাগলেই বলে আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক, এলাকায় গিয়ে দলের ওপর খবরদারি করে এসব চলবে না। দলের সাধারণ সম্পাদক হবার পর দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে দলের পদবঞ্চিত ও আর্দশিক কর্মীদের সমন্বয়ে উপকমিটি করার প্রস্তুতি নেন।

এই উপকমিটি দলের বিভিন্ন শাখায় অভিজ্ঞ নেতাদের ছায়ায় আওয়ামী লীগের জন্য পরিকল্পিত কাজে যুক্তই হবেন না ভ’মিকা রাখবেন মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশই ঘটাবেন না নিজেরকে নেতৃত্ব উপযোগী গড়ে তুলবেন উপকমিটির সদস্যরা। আওয়ামী লীগে সরকার দলীয় পদপদবীর বাইরে অসংখ্য মেধাবী নারী পুরুষ তরুণ-তরুণী রয়েছেন যারা রাজনীতি সমাজ অর্থনীতি সব ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করছেন। দলের নিবেদিতপ্রাণ এই শক্তিকেই উপকমিটিতে তুলে এনে দলের জন্য তাদের শক্তিকে মেধাকে মননশীলতাকে এবং সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগানোর কথা। কিন্তু দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাম স্বাক্ষরিত উপকমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় দলে ত্যাগী কর্মীরা বিদ্রোহ করেন।

দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে বলেই দপ্তর সম্পাদক অদ্ভুতভাবে বলেছেন তার স্বাক্ষরিত উপকমিটির কোন বৈধতা নেই। এতে প্রমাণ হয় এই উপকমিটি গঠনে দলের শীর্ষ নেতাদের বা নেতৃত্বের কোনো হাত ছিল না। এতে দপ্তর সম্পাদকের বিরুদ্ধেই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন তিন মাসের মধ্যে সহ সম্পাদক পদ না রেখে নতুন উপকমিটি ঘোষিত হবে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দলের খাটি কর্মীদের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। যারা দুঃসময়ে বা দুর্দিনে দল ছেড়ে যাবে না। আওয়ামীলীগে আরেকটি ট্র্যাডিশন চালু হয়েছে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। মন্ত্রী এমপিরা মারা গেলে তাদের স্ত্রী পুত্রদের আনা হয় আবেগের নৌকায় তুলে। সারাজীবন দল করে জেল খেঁটে পুলিশের মার খেয়ে দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পান না। যেন রাজার ছেলে রাজা হবে কর্মী যাবে জেলে এই অবস্থারও পরিবর্তন দরকার মনে করেন অনেকে। তার আগে আজকের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুবিধাবাদী  হাইব্রিড কাউয়ারা আওয়ামী লীগের মতো তৃণমূল বিস্তৃত বনেদি সংগঠনের শক্তি ক্ষয় ঘটাচ্ছে ঘুণে পোকার মতো দলটি খেয়ে খেয়ে। আওয়ামী লীগে এখন কাউয়া তাড়িয়ে নিবেদিতদের তুলে আনার সময়।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn