মায়ানমারে দীর্ঘদিন যাবৎ নিরীহ মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের সন্ত্রাসী হামলা, খুন, নির্যাতন, নিপীড়ন চলছে। রোহিঙ্গাদের উপর ইতিহাসের জঘন্যতম জুলুম, নির্যাতন, বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে হিউমিনিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী এডভোকেট এক সাংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের দাবীতে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মায়ানমার অভিমুখে রোডমার্চ ঘোষণা করেছেন। ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে রোডমার্চ এর যাত্রা শুরু হবে। ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার টেকনাফে রোডমার্চ পরবর্তী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবেক এমপি শাহীনূর পাশা চৌধুরী বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্মায় রোহিঙ্গাসহ ভিন্নধর্মী লোকদের উপর নির্যাতন, নিপিড়ন চলছে। রোহিঙ্গাদের উপর ইতিহাসের জঘন্য বর্বরতা ও গণহত্যা চলছে। নারী শিশুদের ধর্ষণ করে টুকরোটুকরো করে কেটে ফেলা হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে কোন বিবেকবান মানুষ নিশ্চুপ থাকতে পারেনা। বার্মায় বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের গণহত্যা বন্ধে সবাইকে সোচ্চার হয়ে কার্যকরী প্রতিবাদ গড়ে তুলা প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকে পুণ্যভূমি সিলেটের সর্বস্তরের জনগণের সহায়তায় হিউমিনিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশের উদ্যোগে মায়ানমার অভিমুখে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর রোডমার্চের ঘোষণা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রোডমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জামেয়া তোওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, সমন্বয়কারী মদন মোহন কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল লেঃ কর্নেল পীর আতাউর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী প্রিন্সিপাল মাওলানা শায়েখ আব্দুল বছির, মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আলীনূর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী, ইউরোপ জমিয়ত নেতা মাওলানা হাফিজ লোকমান আহমদ, মাদানী কাফেলা বাংলাদেশ-এর সভাপতি মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী,  মাওলানা মনজুর আহমদ, যুবনেতা মাওলানা মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আবু বকর সরকার, মাওলানা কবির আহমদ, মুফতী মুতিউর রহমান, মাওলানা নাজিম উদ্দিন, শেখ আলবাব হুসাইন, ছাত্রনেতা এম. বেলাল আহমদ চৌধুরী, লুৎফুল করিম রাজ্জাক প্রমুখ।
সাবেক এমপি শাহীনুর পাশা আরোও বলেন- হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি অঞ্চল মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক সময় রোহিঙ্গা’রা শাসন করলেও আজ তারা ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের জন্য দৌড়াচ্ছে। বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে বারবার রোহিঙ্গাদের উপর হামলা, নির্যাতন ও নিপিড়নের ষ্টীম রোলার চালানো হচ্ছে। তাদেরকে ভিনদেশী হিসেবে আক্রমন করে বাড়ীঘর, ব্যাবসা-বাণিজ্য জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে দেওয়া হচ্ছে। নিম্নে তাদের একটি পরিসংখ্যান তুলে হলো- ১ম বার- ১৭৮৪ সালে রাজা বোদাওপায়া আরাকান দখল করে তাঁর রাজধানী গঠন করলে রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমন শুরু হয়। ২য় বার- জাপান বার্মা (মিয়ানমার) দখল করে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করলে প্রাণ বাঁচাতে ২২,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ প্রবেশ করে। ৩য় বার জেনারেল নে উইন ১৯৭৮ সালে অপারেশন ড্রাগন কিং-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব নথিবদ্ধ করার মাধ্যমে আদম শুমারি করার প্রক্কালে বিদেশিদের বাছাই করার নামে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে। এই সময় প্রায় দু’ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করে, পরে এড়ই ও টঘ-এর চাপে ফেরত নিতে বাধ্য হয়। সেবারও অনুপ্রবেশকারীরা তাদের হত্যা ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। ৪র্থ বার (সবচেয়ে বেশী) ১৯৯১-৯২ সালে ঞযব ঝঃধঃব খধি ধহফ ঙৎফবৎ জবংঃড়ৎধঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ (ঝখঙজঈ) উত্তর রাখাইন রাজ্যে মুসলিম দমনের জন্য সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে দেয়। এই সময় তারা বাংলাদেশ বর্ডারঅব্দি নানা সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করে। এই সময় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ্য, জমি দখল, স্থানান্তর, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ করে তাদেরকে নিজেদের ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়, ধর্মিয় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, মুসলিম নেতাদের লাঞ্ছিত করা হয়। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ অগাস্ট ২০১৭ ইং থেকে পুণরায় মিয়ানমারের বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের উপর হামলা শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে প্রবেশের চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) হিসাবে গত ১২ দিনে ১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।তিনি সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাই অবিলম্বে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মানবিক দিক বিবেচনা করে সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে মায়ানমারে গণহত্যা বন্ধে চাপ সৃষ্টির জন্য সরকারের সক্রিয় ভূমিকা পালন করার উদাত্ত্ব আহ্বান জানানঈমানী দায়িত্ব পালনে হিউমিনিটি ফর রোহিঙ্গা’র ব্যানারে আহুত রোডমার্চে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান। ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় সিলেটের হুমায়ূন রশীদ চত্বর থেকে রোডমার্চ কাফেলা রওয়ানা হয়ে পথিমধ্যে হবিগঞ্জ, বি-বাড়ীয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের একাধিক স্থানে পথসভা করে ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার টেকনাফে গিয়ে মহাসমাবেশে মিলিত হবে। রোডমার্চ সফলে সিলেট ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটিসহ জাতীয় কমিটির মাধ্যমে দু’সপ্তাহের ব্যাপক কর্মসূচী পালন করা হবে। মজলুম রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে সিলেটসহ দেশবাসীর সমর্থন, সহযোগিতা ও রোডমার্চে অংশীদার হওয়ার জন্য আহবান জানান। বিজ্ঞপ্তি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn