লন্ডনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বৈঠক খবর কতটা সত্য? মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালের এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লেও কোনো গণমাধ্যমে তা আসেনি। এদিকে পূর্বপশ্চিমের কাছে গোপন বৈঠকের বিষয় বেশ কিছু তথ্য এসেছে। তথ্যের প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের অনুসন্ধান চালাতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আমাদের কাছে যেসব তথ্য এসেছে সেগুলোর মধ্যে চিকিৎসা ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়। সেখানে তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে গোপন বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে। খুব গোপনীয়ভাবে সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি হোটেলে তারা বসেছিলেন। গোপন ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তারেক রহমান, লন্ডনে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন আর এক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান এবং লন্ডনের জামায়াতের কয়েকজন নেতা ।

এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাবার পর থেকেই তার উপর কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। তাদের তথ্য অনু্যায়ী লন্ডনস্থ পাকিস্তান এম্বাসিতে কর্মরত জুনায়েদ নামের এক ব্যাক্তি যিনি সম্ভবত পাকিস্তান এর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই এর আন্ডার কাভার একজন অফিসার, তিনি খালেদা জিয়ার সাথে তার লন্ডন এ পৌঁছানোর পরই দেখা করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায় ছদ্মবেশী এই জুনায়েদ লন্ডনে থাকাকালীন খালেদা পুত্র এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তথা বাংলাদেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়ার সাথে খুবই নিবিড় ও গোপন সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। জানা যায়, জুনায়েদের সাক্ষাতের পর পাকিস্তান এর আই এস আই এর পূর্বাঞ্চল গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা রিয়াজ আশফাক লন্ডনে পাড়ি জমান এবং বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাত করেন। জুনায়েদ এবং রিয়াজ এর সাথে উভয় সাক্ষাতই ঘটে লন্ডনের সেইন্ট জেমস কোর্ট এরিয়াতে অবস্থিত তাজ হোটেলে ১৮ এবং ১৯ জুলাই , ২০১৭ সালে, গভীর রাতে।

উল্লেখ্য এই তাজ হোটেলেই তারেক রহমান বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনের এর পূর্বে ও পরে তার গোপন বৈঠকগুলো পরিচালনা করতেন। এমনকি এই তাজ হোটেলেই  ২০১৪ এর নির্বাচন প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে নিশা দিশাই বিলওয়ালের পূর্বে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন এসিটেন্ট সেক্রেটারি রবার্ট ব্লেকের সাথেও দুবার তারেক সাক্ষাত করেছিলেন ।

এই হোটেলটি আই এস আই এর আগেও বহুবার তাদের গোপন বৈঠকের জন্য ব্যবহার করেছে। ১৯৯৫-৯৬ সালে আই এস আই এই হোটেলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী আব্দুর রশীদ এর সাথে বাংলাদেশ এর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েও বৈঠক করেছিলো বলে জানা যায় । এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাটির রিপোর্টে জানা যায়, আই এস এর সদস্যরা নেদারল্যান্ডের রাজধানীর উপকূলের একটি শহর ব্রেডায় বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সাথে দেখা করে। এছাড়াও বাংলাদেশ বংশোদ্ভুত খালেদ মহিউদ্দিনের সাথেও তারা বৈঠক করে ।

এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ফারুক-রশিদদের সাথে বৈঠক করে শ্রীলংকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এল টি টি ই’ র সাথে যোগাযোগ এবং প্রক্রিয়া খোঁজার চেষ্টা করে যে যেভাবে শ্রীলংকান এল টি টি ই যেভাবে আত্মঘাতী বোমা হামলায় রাজীব গান্ধীকে হত্যা করে, তেমন কোন প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করা যায় কিনা। কিন্তু সেসময় ইজরায়েলি একটি সংস্থার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশীয় দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সে তথ্য পেয়ে যায় এবং এই হত্যা চক্রান্ত ভেস্তে যায়।

কিন্তু বর্তমানে এই খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে আই এস আই এর রিয়াজ এর সাথে বৈঠকের ব্যাপারটি থেকে এই উপমহাদেশের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে হয়তো খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া সহ আওয়ামী বিরোধী চক্র বাংলাদেশ এ নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় বা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে সফররত অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটানোর প্রচেষ্টা করতে পারে এবং এই আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে পাকিস্তানের আত্মঘাতী বোমা হামলায় পারদর্শী জিহাদি গোষ্ঠীর সদস্যদের এবং সেই সাথে বাংলাদেশ এ আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের দ্বারা গঠিত আত্মঘাতী শিশু এবং নারী বোমা হামলাকারীদের দ্বারা।  এছাড়া জানা যায় বাংলাদেশের কিছুটা অস্থির পার্বত্য অঞ্চলের সরকার বিরোধী গোষ্ঠীদেরও এই হামলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ।

উল্লেখ্য যে, দুজন আই এস আই অফিসার যাদের নাম জানা যায় যথাক্রমে কর্ণেল বশির এবং মেজর ইমতিয়াজ তারা বর্তমানে হংকং এ সক্রিয় রয়েছে চীন নির্মিত অবৈধ অস্ত্র কিভাবে মায়ানমার-চীন বর্ডার দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফা এবং বাংলাদেশের জন সংহতি সমিতিকে সরবরাহ করা যায় ।

উল্লেখ্য কর্ণেল বশির এবং মেজর ইমতিয়াজ মায়ানমারের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী UNITED WA STATE ARMY এর নিকট থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে বলে জানা যায় । উল্লেখ্য USWA বর্তমানে মায়ানমার এর অন্যতম বিদ্রোহী বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যাদের প্রায় ২৫০০০ সদস্য আছে বলে জানা যায় ।  এমনকি অনেক সূত্র থেকে গোপনে জানা যায়, সংগঠনটি চীনা ভারি অস্ত্র এবং অত্যাধুনিক অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলও নিজেদের করায়ত্ত করেছে । আর UWSA এর তরফ থেকে নেপালি বংশোদ্ভুত শিভ পাণ্ডে নামক একজন এই অস্ত্র কেনা-বেচার মধ্যস্থতা করছেন বলেও জানা যায় । তবে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠকের কথা দলটির পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। এমনকি লন্ডনে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী একজনকে ভাইভারে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn