আনিকা কবির শখ ও সারিকা সাবরীন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে মিডিয়ায় আগমন তাদের। প্রথমে মডেলিং, তারপর অভিনয়। শখের পথচলা সিনেমা পর্যন্ত গড়ালেও সারিকা ছোট পর্দাতেই থিতু হয়েছিলেন। ‘হয়েছিলেন’ এজন্যই বলা, তারা এখন অনেকটাই অতীত। নেই টিভি পর্দায়, নেই কোনো খবরে। মডেল কিংবা অভিনয়শিল্পী হিসেবে শখ ও সারিকা দু’জনের বেশ সুনাম রয়েছে। একটা সময় টেলিভিশন পর্দায় তাদের নিয়মিত দেখাও মিলেছে। কিন্তু এখন কেমন যেন আলোচনায় নেই, পর্দায় নেই তাদের তেমন কোনো কাজও। মাঝেমধ্যে দেখা মিলে, তবে সেই দেখা আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই তৈরি করে বেশি। এমনিতে মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের দেখা মেলে। মনে হয়, এই বুঝি তারা ফিরবেন! তবে ফেরা হয় না পুরোদমে। আবার অভিনয়কে তারা বিদায়ও জানাননি।
শখের প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় ২০০২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে স্বাক্ষর নামের একটি নাটকে। এরপর ধারাবাহিক ‘অদ্ভুতুড়ে’ নাটকের মাধ্যমে বড়দের চরিত্রে অভিনয় শুরু তার। এফএনএফ, ফিফটি ফিফটি, দিবা রাত্রি খোলা থাকে, রঙ শিরোনামের কয়েকটি নাটক দিয়ে বেশ পরিচিতিও লাভ করেন। তবে শখের মূল পরিচিতিটা আসে বিজ্ঞাপন দিয়ে। প্রায় ডজনখানেক বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করেছেন। ছোটপর্দার গণ্ডি পেরিয়ে বড় পর্দায়ও ছিল তার পদচারণা। ‘বলনা তুমি আমার’, ও ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ শিরোনামে দুটি ছবিতেও অভিনয় করেন। ক্যারিয়ারের বিজ্ঞাপন নির্মাতা আদনান আল রাজীবের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন ছিল। কিন্তু সেটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরবর্তী সময়ে অভিনেতা নিলয় আলমগীরের সঙ্গে প্রেম হয় তার। বিয়েও করেন তারা।

কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায় ডিভোর্স হয় নিলয়ের সঙ্গে। ডিভোর্সের পরে অনেকটা আড়ালে চলে যান শখ। সবার সঙ্গে মেশাও নাকি বন্ধ করে দেন। অসৎসঙ্গ কিংবা মাদকদ্রব্য গ্রহণের অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। তবে সেসবের অকাট্য প্রমাণ কেউ সামনে হাজির করেননি। মাঝে মধ্যে খোলস ছেড়ে বের হয়েও আসেন এ মডেল-অভিনেত্রী। তবে সেটা নেহাতই নিজের প্রয়োজনে। পরিচিত কিছু পরিচালকের নাটকে অভিনয় করে আবারও ডুব দেন। তাই মিডিয়ায় তার প্রতি অবিশ্বাসের একটা স্তম্ভ তৈরি হয়ে গেছে নির্মাতাদের মধ্যে। আড়ালে থাকা শখ যদি আবারও ফিরে আসেন তাহলে সেই অবিশ্বাসের দেয়াল ভাঙা তার পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে সারিকাও অনেকটা শখের মতো। সিডিউল ফাঁসানোতে যার বিকল্প এখনও তৈরি হয়নি একজনও- তার সম্পর্কে এমনটাই চাউর আছে নাট্য জগতে। সারিকা একটা সময় টেলিভিশন মিডিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করে ছিল। আশুতোষ সুজন পরিচালিত নাটক ‘ক্যামেলিয়া’ দিয়ে নাটকপাড়ায় শুরু হয় জীবন। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির বিজ্ঞাপনে মডেলিং করে নিজের পরিচিতির পাল্লা আরও ভারী করেন। রাতারাতি ব্যস্ত তারকায় পরিণত হন। শুরুতে মডেল-অভিনেতা নিরবের সঙ্গে প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু সেটা স্থায়ী হয়নি। এরপর আরও অনেকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান সারিকা।

কিন্তু বিয়ে করেন মিডিয়ার বাইরে একজন ব্যবসায়ীকে। কিন্তু টেকেনি সেই বিয়েও। বিয়ের দু’বছরের মধ্যে কন্যাসন্তানের জননী হওয়ার পর ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর আড়ালে চলে যান তিনিও। বছর দুয়েক পর আড়াল ভেঙে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করেন অভিনয়ে। কিন্তু সিডিউল ফাঁসানোসহ বেশকিছু অভিযোগের দায়ে মিডিয়ায় কয়েকটি সংগঠন কর্তৃক নিষিদ্ধ হন ছয় মাসের জন্য। হতাশা থেকে নেশা করেন- এমনটা শোনা গিয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু শখের মতো এসবের প্রমাণ নিয়ে কেউ সামনে আসেনি। নিষিদ্ধতা কাটিয়ে আবারও ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততদিনে তাকে নিয়ে নির্মাতাদের মধ্যে আস্থার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। ফেরা হয় না আর সারিকার। গত কয়েক মাস ধরে কোনো খবরই নেই সারিকার। ফের কখনও তাকে দেখা যাবে কিনা পর্দায় সেটাও কেউ বলতে পারছেন না। তবে বিজ্ঞদের মন্তব্য, শখ কিংবা সারিকা- যে-ই ফিরে আসুক কিংবা কাজ শুরু করুক, আগের অবস্থান কখনোই তারা ফিরে পাবেন না। কারণ তাদের নিয়ে যারা কাজ করবেন, সেসব নির্মাতাদের আস্থা তারা অনেক আগেই নষ্ট করে ফেলেছেন। তাছাড়া সামাজিকভাবেও তারা নিজেদের সহজলভ্য করে ফেলেছেন। স্বভাবতই মিডিয়ার যে আকর্ষণ, সেটা তাদের মধ্যে আর নেই।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn