মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হারিয়ে ফেলছে স্বজন। বার্ধক্য ও অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে কেউ কেউ। ত্রাণের অভাবে চলছে হাহাকার। বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও চিকিৎসা সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টির হানা। প্রবল বর্ষণ, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় রাতের অন্ধকারে উড়ে যাচ্ছে পলিথিনের ছাউনি। অসহায়ের মতো ভিজতে হচ্ছে বৃষ্টিতে। কারও মাথার ওপর ছাউনি থাকলেও পাহাড়ি ঢলে তাঁবুর নিচে জমছে হাঁটুপানি। পানিতে দাঁড়িয়েই রাত পার করতে হচ্ছে। পানি জমে থাকায় চুলা জ্বলছে না। ফলে খেয়ে-না খেয়ে, একজনের খাবার তিনজনে ভাগ করে খেয়ে দিন পার করছে। এ অবস্থায় গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও শিশুসহ শরাণার্থীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে।

এছাড়া নতুন-পুরনো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণের সময় পুরনোরা হানা দিয়ে নতুনদের কাছ থেকে খাদ্যসামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পুরনোদের রাস্তাঘাট চেনা হওয়ায় তারা আগে থেকেই পথের দু’পাশে আশ্রয় নিয়ে অপেক্ষায় থাকছে ত্রাণের জন্য। গাড়ি দেখলেই হামলে পড়ছে। নতুনরা তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। ফলে তারা ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উখিয়া-টেকনাফের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় সরেজমিন দেখা গেছে, সেখানে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তারা রাখাইনে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বাঁচলেও এখানে পদে পদে দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে পড়ছে। ক্যাম্পগুলোয় খাদ্য-পানি, বস্ত্র, চিকিৎসা, আবাসন, পয়োনিষ্কাশনসহ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর অভাব রয়েছে। গর্ভবতী ও প্রসূতিরা পাচ্ছেন না ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা। ক্যাম্পের পলিথিনঘেরা ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরগুলোয় দুইজনের জায়গায় থাকছে দশজন। দুইজনের খাবার ভাগ করে খাচ্ছে দশজন। আবার একবেলা খেলে আরেক বেলা খেতে পাচ্ছে না। অনেকে ত্রাণের চাল পেলেও নেই তাদের রান্নার উপকরণ। আবার অনেকে চাল-ডাল কিছুই পাচ্ছেন না, পাচ্ছে শুধু শুকনো খাবার। এমন পরিবারও রয়েছে যারা পালিয়ে আসার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দুই বেলা খাবার জুটেনি।
পাহাড়ের পাদদেশে ও খোলা মাঠে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। রাতভর বৃষ্টিতে ভিজছে তারা। কোথায় গিয়ে বৃষ্টি থেকে নিজের বা শিশুর মাথা বাঁচানোর উপায় নেই। ফলে অনেক শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সারা রাত এভাবে কাটার পর সকালের আলো ফোটার পর থেকেই এদের অনেকেই রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ত্রাণের আশায় ছুটেছে নানা স্থানে। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোয় যেমন তারা ভিড় করছে, তেমনি  বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের ত্রাণবাহী গাড়ি দেখলেই হামলে পড়ছে। কারও ভাগ্যে জুটছে, কারও জুটছে না। এভাবেই চলছে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জীবন-সংগ্রাম। প্রতিদিনই তাদের পড়তে হচ্ছে নতুন নতুন সংকটের মুখে। অনেক রোহিঙ্গা জানায়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসার কয়েক সপ্তাহ পরও গোসল করতে পারেনি অনেকে।  আশ্রয়শিবিরগুলোয় বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান টিউবওয়েল স্থাপন করলেও তা অপ্রতুল।
থ্যাংখালীর শফিউল্লাহ মুড়া এলাকার অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সন্তান ও স্বামী নিয়ে বসবাসরত রমিদা জানান, রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছেন দশদিন আগে। গোসলখানা না থাকায় একবারও গোসল করতে পারেননি। রয়েছে ল্যাট্রিন সমস্যা। এছাড়া সরকারি কোনো সাহায্য তারা পায়নি বলেও জানায়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেয়া ত্রাণসামগ্রী যা পাচ্ছে, তা দিয়েই চলছে কোনোভাবে। রাখাইনের সাওপ্রাং থেকে পালিয়ে এসেছে তাদের পরিবার।
রাখাইনের বুচিডংয়ের আইনচং এলাকার কালাচান বিবি জানায়, এখানে রোদ হলেও সমস্যা আবার বৃষ্টি হলেও সমস্যা। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঝুপড়িগুলোর ছাউনি দেয়া ত্রিপল উড়ে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন। আবার একটু রোদ হলে গরমে ছোট ছোট বাচ্চাদের ত্রাহি অবস্থা।বুচিডং মরিচ্যাবিল এলাকার ফাতেমা বেগম জানান, কিছু চাল ও আলু পেয়েছেন ত্রাণ হিসেবে। আলু রান্না করেই ভাত খাচ্ছেন কয়েক দিন ধরে।উখিয়ার পালংখালী পাহাড়ের পাদদেশে কথা হয় রহমত মিয়ার নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, খোলা মাঠে তারা কয়েকশ’ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু রোদ বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে এখানে বাস করা দায় হয়ে পড়েছে। ঝড়ে ওপরের পলিথিন উড়ে যায়। তখন বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। আবার রোদ উঠলে এর তাপে থাকা দায়। অছিরন নামের এক নারী বলেন, প্রায় প্রতি রাতেই বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। এ সময় একদিকে ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় পলিথিনের চালা। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি নামে। রাতভর তারা এক কোমর পানি এবং বৃষ্টিতে ভিজে কাটাচ্ছেন। সব পরিবারেই রয়েছে এক বা একাধিক শিশু। ঠাণ্ডা লেগে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রান্না না হওয়ায় রাতভর তারা কিছু খেতে পারেনি। দিনভর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে যেসব ত্রাণ সংগ্রহ করেছিলেন সেসব পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাতের বৃষ্টির পানিতে আশ্রয় শিবিরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। পালংখালী খাল ডুবে গেছে। রহিমা নামে এক নারী বলেন, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে একটি ত্রাণের প্যাকেট পেয়েছিলেন। সেই প্যাকেটে চাল ও গুড় ছিল। বৃষ্টির পানিতে সেই ত্রাণ নষ্ট হয়ে গেছে।
এখনও জ্বলছে রাখাইন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কমেছে : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনও নতুন করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাখাইনের গ্রামগুলোতে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। টেকনাফ সীমান্ত থেকেই ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। পালিয়ে আসা মাঙ্গালা এলাকার রোহিঙ্গা ছুরত আলী জানান, মিয়ানমারের সেনারা প্রতি দিনই মুসলমানদের বসতিতে আগুন  দিচ্ছে। নতুন করে বৃহস্পতিবার সকালে মাঙ্গালা, নাইনসং ও রইঙ্গাদং গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। বাড়িঘরে আগুন দেয়ার আগে সেনা সদস্যরা  হ্যান্ড মাইক দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সরে যেতে বলে। এ সময় মানুষ দিগি¦দিক  ছুটতে থাকে। কিছু পরপর সেনাদের হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কমেছে : টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আগের মতো রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে না। এদের ঢল কিছুটা কমেছে। তবে মিয়ানমারের সেনাদের জ্বালিয়ে দেয়া গ্রামের কয়েকটি পরিবার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে। সরেজমিন কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় ২০-২৫টি পরিবারের মতো রোহিঙ্গা এপারে ঢুকেছে। এছাড়া লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কান্জর পাড়া ও উলুবনিয়া সীমান্ত পয়েন্টেরও একই অবস্থা। এদিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। যারা বিক্ষিপ্তভাবে সড়কের পাশে বসে রয়েছে এবং বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান করছে তাদের উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংসহ নির্ধারিত ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন।
গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীদের দুর্ভোগ : পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে গর্ভবতী নারীদের কষ্টের সীমা নেই। এদের মধ্যে অনেকে শত কষ্টের মাঝে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে এসেও প্রসব বেদনা শুরুর পর চিকিৎসা সেবা  পাচ্ছেন না। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মা-সন্তান উভয়ের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার রাখাইনের মংডু কাইয়ংখালী থেকে প্রসব বেদনা নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসেন তৈয়বা বেগম (৪০)। তাকে বৃহস্পতিবার বিকালে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেও চিকিৎসাবিহীন দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকে সে। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক ও সেবিকার দেখা মেলেনি। এভাবে গত কয়েক সপ্তাহে অনেক রোহিঙ্গা নারীকে প্রসব বেদনায় কাতরাতে দেখা গেছে তাদের অস্থায়ী তাঁবুগুলোতে।
টেকনাফে ত্রাণের লোভে পুরাতন রোহিঙ্গাদের ভিড়, নতুনরা বিপাকে : টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে নতুন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ত্রাণ হাতিয়ে নিচ্ছে পুরাতন রোহিঙ্গারা। টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের নাইট্যংপাড়া, কেরুনতলী, বরইতলী, দমদমিয়া, জাদীমুরা, মোছনী, নয়াপাড়া, লেদা, রঙ্গিখালী, হোয়াইক্যং ও টেকনাফ বাস স্টেশন, শাহপরীর দ্বীপ ভাঙ্গা এলাকায় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আগে থেকে টেকনাফে থাকা পুরাতন রোহিঙ্গারা মিশে গিয়ে ত্রাণ হাতিয়ে নিচ্ছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা ব্যক্তিরা নতুন-পুরাতন রোহিঙ্গা পরখ করতে না পারায় পুরাতনরাই ধাক্কাধাক্কি করে ত্রাণ সামগ্রী হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে ত্রাণ বঞ্চিত হচ্ছে নতুন আসা রোহিঙ্গারা। তাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে সংবাদকর্মীদের দেখলে জানাচ্ছেন পুরাতন লোকরা সব নিয়ে নিচ্ছে তারা কিছু পাচ্ছেন না। ফলে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর দিন যাপন করছে।
এছাড়া অবিরাম বৃষ্টির ফলে নতুন করে বিপাকে পড়েছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। যারা ইতিমধ্যে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে তাদের অনেকের তা পানিতে তলিয়ে গেছে। টেকনাফ উখিয়া সড়কজুড়েই রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কের পাশে অবস্থান করছে নারী-শিশু ও পুরুষ রোহিঙ্গা। এদের অনেকে নতুন ও বেশিরভাগ বহু বছর ধরে এদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা। ফলে অসহায় দিন যাপন করছে নতুন রোহিঙ্গারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টেকনাফ-উখিয়ার প্রধান সড়কজুড়ে সারি সারি রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের অবস্থান। এদের অনেকে পুরাতন রোহিঙ্গা। সবার চোখ থাকে ত্রাণবাহী গাড়ি কিংবা মাইক্রো-নোয়াহ গাড়ির দিকে।  গাড়ি দাঁড়ালেই দল বেঁধে নারী-শিশুদের সরিয়ে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে পুরনোরা। এ সময় ত্রাণদাতাদের ইজ্জত বাঁচানো দায় হয়ে পড়ে। আবার অনেকে নগদ টাকা বিতরণ করতেও দেখা গেছে। অনেক সময় ওদের অবস্থা আরও কাহিল হয়ে ওঠে। ওদের টানাটানিতে অনেকের শার্ট-প্যান্ট ছিঁড়ে যাচ্ছে। পুরাতন রোহিঙ্গারা হানা দিয়ে এসব অবস্থা সৃষ্টি করছে। এদের সামনে নতুন রোহিঙ্গা পরগাছার মতো।
এদিকে সড়কজুড়েই রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কের পাশে অবস্থান করছে নারী-শিশু ও পুরুষ রোহিঙ্গা। তবে পুরুষের সংখ্যা অনেক কম। এরা প্রতিদিন স্থান বদলে ছদ্মবেশী নতুন রোহিঙ্গারূপে সড়কের পাশে অবস্থান নেয়। অনেককে ত্রাণ নিয়ে ঝগড়া করতে দেখা গেছে। এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।মংডুর মেরুল্লা এলাকার হাসিনা বেগম জানান, প্রাণ বাঁচাতে এদেশে আশ্রয় নিয়েছি। চার পাশের কিছুই চিনি না। ৩ সন্তানকে নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছি। অনেকের ভিড়ে ও ঠেলাঠেলি করে ত্রাণদাতাদের ধারে-কাছেও যেতে পারি না। পৌঁছার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। খুবই কষ্টে আছি।মোচনী নয়াপাড়া ক্যাম্পের হামিদা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা পুরাতন রোহিঙ্গা হলেও দু’বেলা খেতে কষ্ট হচ্ছে। নতুনদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কিছু পাওয়ার আশায় সড়কে অবস্থান নিয়েছি।
অপরদিকে ত্রাণ বিতরণের জন্য সেল ঘোষণা করা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সেখানে ত্রাণ জমা না দিয়ে নিজ উদ্যোগে বিতরণ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়কের পাশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের কাছে ত্রাণ বিতরণ করায় চরম হ-য-ব-র-ল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয়সহ পথচারী ও যানবাহনের। প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে ত্রাণ বিতরণ করায় দীর্ঘ যানজটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে রোহিঙ্গাদের বিক্ষিপ্ত চলাচল, হ-য-ব-র-ল ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনাসহ নিত্য ঝগড়া লেগেই থাকে।
বিশেষ করে রোহিঙ্গারা ত্রাণের গাড়ি আসতে দেখলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে অনেকেই গাড়ির নিচে, মানুষের পায়ের নিচে পড়ে যায়। যারা রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে আসে তারা কোনো নিয়মনীতি না মেনে ত্রাণ দেয়া শুরু করে। ত্রাণবাহী গাড়ির কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির যানজট লেগেই থাকে।এর ফলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। পাশাপাশি দুর্ভোগে, অর্ধাহারে ও অনাহারে নতুন রোহিঙ্গারা দিনাতিপাত করছে। পুরাতন রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ এবং সড়কের পাশে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের উঠিয়ে দেয়া না হলে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার জম্ম দিতে পারে। তাই প্রশাসনকে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn