আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। টানা প্রায় ৯ বছরের শাসনামল তিনি অতিক্রম করছেন। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে নিয়ে যাওয়া, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ কঠোর হস্তে দমন, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, রাজপথ থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলন হটানোসহ অনেক সাফল্য হাতের মুঠোয় পুরলেও সরকার বিরোধী একটি অসন্তোষ সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে।

সরকার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয়তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও ৯ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার নানামূখী সমালোচনার ঝড় বইতে বইতে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ ছিল বিগত দিনের রাজনীতিতে সরকারি বিরোধী আলোচনার কেন্দ্রে। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগে উঠেছে বারবার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চাপ ঘুরেফিরে এসেছে বারবার।

এমনি পরিস্থিতিতে সামগ্রিক রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও জেল ও মামলার জালে আটকে পরা বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও আগামী জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করা শেখ হাসিনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দাবি শেখ হাসিনার অধীনে নয়; নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার অন্তর্বতী সরকারে রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রে সকল দলকে আস্থায় এনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের সামনে এনে একটি প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে শেখ হাসিনা বা তার দলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে প্রধান বিরোধী দল দুর্বল হয়ে পরায় দেশজুড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও দলের মধ্যে মনোনয়ন থেকে নেতৃত্বের বিরোধ মাঠ পর্যায়ে তীব্র। শেখ হাসিনাসহ দলের নেতারাও এটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন। করছেন বলেই, সর্বশেষ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও দলের কোন্দল নিরসন এবং জরিপে এগিয়ে থাকা গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দানের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

এক্ষেত্রে, একদিকে যোগ্য প্রার্থী বাছাই অন্যদিকে দলীয় কোন্দল নিরসন শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সামনে দ্বিতীয় বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ। ভোটযুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যদি হয় প্রতিদ্বন্ধী এক্ষেত্রে মহাজোটগতভাবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে নাকি এককভাবে চ্যালেঞ্জ নিবে, সেই রণকৌশল নির্ধারণ হচ্ছে তৃতীয় প্রধান চ্যালেঞ্জ। একদিকে, সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ, অন্যদিকে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচারসহ নানামূখী সমালোচনার মুখে পতিত আওয়ামী লীগকে এর জবাবে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের দুয়ারে নিয়ে আস্থা অর্জন চতুর্থ চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন জনমতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ইমেজ যতটা এগিয়ে রয়েছে, তারচেয়ে সরকার বা সরকারি দলের ইমেজ অনেকটা পিছনে আছে। এই সমস্যার সমাধান করার চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি রায়কে ঘিরে সরকারের যে টানাপোঁড়েন না দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে, সেটি নিরসন নানামূখী চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এই চ্যালেঞ্জ নির্বাচনের অনেক আগেই সমাধানের দাবি জানাচ্ছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যদি আন্দোলনের সূচনা ঘটাতে চায়, সেটি মোকাবিলাও আরেক চ্যালেঞ্জ। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নানা চাপ নিয়েও সুবিধাজনক অবস্থানে শেখ হাসিনা বা তার সরকার থাকলেও একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাই আগামী দিনের রাজনীতি। এই রাজনীতির চ্যালেঞ্জ কিভাবে গ্রহণ করেন এবং তার সমাধান দেন সেটিই গীভর আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা দেখছেন।

আওয়ামী লীগ নামক দলটিতে সুবিধাবাদী, সুযোগ সন্ধানী হাইব্রিড ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের অনেকেরই অনুপ্রবেশ ঘটেছে দলের মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। এর সুরাহা করা আরেক চ্যালেঞ্জ। নতুন প্রজন্মের ভোটাররা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে একটি বড় ফ্যাক্টর। বলা হয়ে থাকে এরাই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেন। এই তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে নির্বাচনী অঙ্গীকার কি নিয়ে আসেন শেখ হাসিনা বা তার দল সেটিও দেখার বিষয়।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার মানবিক বিবেচনায় সাড়া দিলেও রোহিঙ্গা শরনার্থীর সংখ্য এখন প্রায় ৭ লাখ। এদের স্বদেশে ফিরিয়ে দেয়ার কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সাফল্য-ব্যর্থতাও আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এক্ষেত্রৈ নানমূখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn