ষোড়শ সংশোধনী রায়ে যেসব কারণে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ
ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে সরকার এবং দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, ওই রায়ে আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে বিরোধীপক্ষের হাতে ইস্যু তুলে দেয়া হয়েছে। বিএনপি এতদিন সরকারের বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা বলে আসছিল সেগুলোই রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে। এমনকি রায়ে বিগত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রায়ে জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন কমিশনকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে আনা হয়েছে। এমনকি প্রশ্ন তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব নিয়ে। তাই তারা বিষয়টিকে আইনিভাবে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা এতদিন অকার্যকর সংসদ ও নির্বাচন কমিশন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের নির্লজ্জ দলীয়করণ, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লংঘনের বিষয় নিয়ে যা যা বলে আসছিলেন ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর্যবেক্ষণে সেগুলোই উঠে এসেছে।
এজন্য আওয়ামী লীগ রায় নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, এ রায়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মনে করছে বিচার বিভাগ তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। তাই তারা বিচার বিভাগকে চাপে রাখতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে তাদের জনস্বার্থে আইনগতভাবে সুযোগ নেয়ার অনেক কিছু আছে। প্রয়োজনে তারা সেদিকে যাবেন। যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাসহ বর্তমান সরকারের অনেক বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করে রিট করতে পারেন। এমনকি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কেন অবৈধ হবে না সে বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে যে কোনো নাগরিক বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে পারেন। তবে তারা হুট করে কিছু করবে না। সময় নিতে চান।
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। নয়জন আইনজীবীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে সংবিধানের ওই সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দেন। ৩ জুলাই আপিল বিভাগও ওই রায় বহাল রাখেন। যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পায় ১ আগস্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে এক স্থানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মানবাধিকার ঝুঁকিতে, দুর্নীতি অনিয়ন্ত্রিত, সংসদ অকার্যকর, কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।’ ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায়ে সরকার, সংসদ, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, সামরিক শাসন এবং রাষ্ট্র ও সমাজের বিষয়ে এমন অনেক পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।
রায় প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন। দেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি এ বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’র উদ্যোগ নেয়া হবে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে রায় পর্যালোচনা করছে সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়নি, তাই রায় নিয়ে এর বেশি এখন আর কিছু বলতে চাই না।’ তবে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা রায়ে তাদের ক্ষতি ও ক্ষোভের দিকটা তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এ রায়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অনেক কারণ আছে। এতে বলা হয়েছে, গত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে বলা হয়েছে, কারও একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি। রায়ে বলেছেন, সবাই মিলেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমি মনে করি, এর মধ্যে একটা কথা বলা উচিত ছিল। সেটা হল, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। সেটা না বলা হলে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বর্তমানে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যেসব কথা বলছে, সেটাকে উৎসাহিত করা হয়। এভাবেই আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে সংসদে যারা আছেন তাদের ‘অপরিপক্ব’ বলেছেন। এজন্যই আমরা বলছি, রায়ে অপ্রাসঙ্গিক যেসব কথাবার্তা এসেছে সেগুলো উনি (প্রধান বিচারপতি) এক্সপাঞ্জ করে নিন। একটা দেশের মধ্যে ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং তাদের প্রতিনিধি সংসদ সদস্যরা। এখন বিচার বিভাগকে যদি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মনে করি, তাহলে তো বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের মুখোমুখি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রায়ের ফলে দল কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা উল্লেখ করে আবদুল বাসেত মজুমদার আরও বলেন, সরকারের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন রায়ে ঘটেনি। একাত্তরের পরাজিত শক্তি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে, জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে- এ প্রেক্ষপটে সরকার ষোড়শ সংশোধনী করেছিল; কিন্তু সেটা বাতিল করে দিয়ে যে রায় হল, তাতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বা সরকারের যে ইচ্ছা তার প্রতিফলন ঘটেনি। এছাড়া সামনে নির্বাচন আসছে। রায়ে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে বিরূপ মনোভাব পোষণ করা হয়েছে।
এ কারণেই আমরা সংক্ষুব্ধ। আমি মনে করি, রায়ে রাজনৈতিক যে দিক এসেছে, তাতে বিরোধীপক্ষ সুবিধা নেয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তাই এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পরেই করা উচিত। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু যুগান্তরকে বলেন, রায়ে এমন কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে, যাতে আমাদের জাতীয় নেতাদের, সংসদ এবং নির্বাচন কমিশনকে কটাক্ষ করা হয়েছে। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ কারণেই আমরা আহত এবং ক্ষুব্ধ। আমরা বলতে চাই, এগুলো বিচার্য বিষয় ছিল না। বিচার্য বিষয় ছিল ‘প্রমাণিত অসধাচরণ বা অসামর্থ্যতার জন্য বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদের হাতে থাকা। সুপ্রিমকোর্ট সেটা বাতিল করে দিয়েছেন। আর এ রায় দিতে গিয়ে তিনি (প্রধান বিচারপতি) অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে এসেছেন পর্যবেক্ষণে। বলেছেন, কোনো একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি। এরকম কিছু বিষয়ে আমাদের চরম আপত্তি রয়েছে। জাতীয় নেতৃত্বকে বলেছেন ‘আমিত্ব’। কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। এগুলো আমাদের ক্ষতির কারণ।
আবদুল মতিন খসরু আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে এরকম একতরফা মন্তব্য আশা করিনি। কারণ সংসদ ও নির্বাচন কমিশন মামলার পক্ষ ছিল না। আর পক্ষ না হলে কারও বিরুদ্ধে একতরফা মন্তব্য করা যায় না। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অপরিপক্ব বলায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। দলের নমিনেশনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পর্যবেক্ষণে মনোনয়ন সম্পর্কেও বলেছেন। আমরা এখন আইনানুগভাবে এগুলো মোকাবেলা করব। এর একমাত্র উপায় হল রিভিউ করা। এ নিয়ে দলে আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আইনানুগভাবে এগোব। তিনিও পর্যালোচনা করছেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, রায়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মূল্যায়নটি সঠিক হয়নি বলে সরকার মনে করছে। ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বিষয়টি বিচার্য ছিল না। বিচার্য বিষয় ছাড়া যেগুলো রায়ে নিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো নিয়ে আপত্তি উঠছে। বিচার্য বিষয় হল, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ। সংসদে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা নিয়ে। তাও তো তদন্ত করার জন্য একটা আইন করতে হবে। সে আইনটি হয়নি। তার আগেই এটা চ্যালেঞ্জ হয়ে বাদ হয়ে গেছে। এখন আপত্তি উঠছে সংসদের পরিপক্বতা নিয়ে কথা বলায়। সরকার ভালোভাবে চলছে না, দুর্নীতি হচ্ছে- এসব বলায় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এককথায় অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যে উনাদের (সরকার) আহত করেছে। এ রায়ের ফলে সরকার আগামী নির্বাচনে ক্ষতির মুখে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু বলব না। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায় আমাদের মানতে হবে।’
রায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন যুগান্তরকে বলেন, এ রায়ে আমাদের উদ্বেগের অনেকগুলো কারণ সৃষ্টি হয়েছে। এ রায়ের পর্যবেক্ষণে জাতীয় সংসদ, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব এবং ১১৬ অনুচ্ছেদ- এগুলো মিলে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইস্যু হিসেবে নিয়েছে। হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু রায়কে রাজনীতিকরণ করা ঠিক হয়নি। সে জন্যই আমাদের আক্ষেপ। তিনি বলেন, “রায়টি আইনগতভাবে দেখা হবে। তবে এ যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হল তাতে আমি মনে করি, এগুলো ‘সুয়োমুটো’ প্রত্যাহার করা উচিত।”
বিরোধী পক্ষ কিভাবে রায়কে ব্যবহার করছে তার একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আজকে যেমন মেজর হাফিজ বলেছেন, আরেকটি রায় দেয়া হোক- যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত তাদের বিষয়ে। রায়ে সংসদ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে। এটা সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে আসা দরকার ছিল না। আমরা আইনজীবী সমাজ দাবি করেছি, পর্যবেক্ষণগুলো যেন প্রত্যাহার করা হয়। সুয়োমুটো এক্সপাঞ্জ করা হোক।
রাজনীতির পাশাপাশি আইনি সুবিধাও চায় বিএনপি : এদিকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং পরবর্তী পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। রায় ও পর্যবেক্ষণের ফলে সরকারের মধ্যে সৃষ্ট অস্থিরতাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চায় দলটি। রাজনীতির পাশাপাশি আইনগত সুবিধা নেয়া যায় কিনা সে লক্ষ্যে রায় ও পর্যবেক্ষণের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দলের সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবী এ নিয়ে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তারা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। শুধু ষোড়শ সংশোধনী নয় এসব আলোচনায় বাতিল হওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের বিষয়টিও আসছে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা যাবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা করেছেন তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা যারা বিরোধী দলে আছি গত ৯ বছরে আদালতে কোনো সুবিচার পাইনি। কিন্তু তারপরও বলব, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা উঁচুমানের। এতে দেশের সত্যিকার সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। যা আমরা ৯ বছর ধরে বলে আসছি। আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে সোচ্চার ছিলাম তা আদালতের পর্যবেক্ষণে আজ প্রমাণিত। তাই বর্তমান সংকট তৈরির জন্য সরকারি দলই দায়ী।’ উচ্চ আদালতে জনমনের মতামতই প্রতিফলিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মওদুদ আহমদ আরও বলেন, রায়ে অপ্রাসঙ্গিক কোনো পর্যালোচনা নেই। যেসব মন্তব্য রয়েছে তার সবই সঙ্গতিপূর্ণ। এ রায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে একটি অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, সরকার আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকারি দলের রাজনৈতিক অবস্থান বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর একটি চরম আঘাত। রায়টা না পড়ে শুধু সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর পড়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ এ বিষয়টাকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেছে। তবে এতদিন পর তারা সোজা পথে এসেছে। এখন তারা রিভিউ পিটিশন দাখিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে এতদিন যে আন্দোলন এবং প্রধান বিচারপতির ওপর বিভিন্ন অশ্লীল বক্তব্য দিয়ে বিচার বিভাগের যে ক্ষতি করা হল তার পরিণতির দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। আমরা এখন রায়ের পর্যবেক্ষণগুলো দলীয় ফোরামে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছি। এখান থেকে আইনগত কোনো সুবিধা নেয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকছে বিষয়টি আজ স্পষ্ট হয়েছে। তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে তারা (বিএনপি) অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। আওয়ামী লীগ এ রায় নিয়ে যত উদ্বেগ প্রকাশ করবে জনগণের কাছে ততই সরকারের দুর্বলতার দিক স্পষ্ট হবে। এ নেতার কাছে প্রশ্ন ছিল, রায়ের পর্যবেক্ষণ বিষয়ে আইনগতভাবে বিএনপির লাভবান হওয়ার কী সুযোগ আছে- উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আছে’। যারা বোঝার তারা এতদিনে বুঝে গেছেন। বিশেষ করে সরকার তো বুঝেছে। তাই তাদের এত মর্মজ্বালা। তিনি জানান, রায়ের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেই আদালতে যাওয়া যায়। যেমন, যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সংসদে আছেন তাদের বিষয়ে। এছাড়া অকার্যকর সংসদ কিভাবে চলতে পারে- এমন প্রসঙ্গ সামনে এনে প্রতিকার চাওয়া যাবে।
বিএনপির এ সিনিয়র নেতা যুগান্তরকে আরও বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তার পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে। শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তার সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছে করলে তা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, সংসদ এটা করেনি। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণের বিরাট গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। তিনি তা উল্লেখ করেন।’
এখন প্রশ্ন হল, সাবেক এ প্রধান বিচারপতি এখনও বলছেন, তার দেয়া ওই পর্যবেক্ষণের বিরাট গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। তাহলে কেন তা কার্যকর হবে না। তাই এ রায় নিয়েও রিভিউর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা নিয়েও দেশের যে কোনো সংক্ষুব্ধ নাগরিক আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, তবে আজ হোক কাল হোক আমরা (বিএনপি) আদালতে যাব। তবে কবে যাব সেটি সময়ই বলে দেবে। এদিকে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির এসব চিন্তা-ভাবনার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। সবই তাদের দিবাস্বপ্নে পরিণত হবে। কারণ জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। নির্বাচনে হেরে যাবে বলে তারা এখন পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়।