সমালোচনা গ্রহণে সহিষ্ণুতা চাই
টি এম আহমেদ কায়সার(ফেসবুক থেকে)-
একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারপতিদের নিয়ে কথা বলা যাবে না –এমন স্বারোপিত ইনডেমনিটি থেকে বেরিয়ে আসাই উচিত কিন্ত সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির রায়কে ঘিরে আওয়ামীলীগ নেতা–নেত্রীরা যে সাম্প্রদায়িক বিষোদগার আর প্রত্যক্ষ আশ্লীল নোংরা বক্তব্য আর হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন, তা রীতিমত নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতির দুর্ভাগ্য যে তার পেছনে কোনো দল নেই; বিএনপি হয়তো একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্যে বিচারপতিকে সমর্থনের একটা ভান বা অভিনয় করে যেতে পারে কিন্ত আদতে তারা তো জানেই যে এই বিচারপতি তাদের নীতি বা আদর্শের মানুষ নন, তা আওয়ামীলীগ যতই তাকে রাজাকার আর বিএনপি মনস্ক বলে প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাক না কেন। বশংবদ চাটুকার বেষ্টিত থাকতে থাকতে এদের এমন এক অবস্থা হয়েছে যে নিজেদের বন্ধু বা বন্ধুপ্রতিমদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণেও অসহিষ্ণু হয়ে যাকে তাকে রাজাকার, আলবদর ইত্যাদি বিচিত্র অভিধায় অভিহিত করে যাচ্ছে।
যেসব নেতা–নেত্রীরা এখন একেবারে মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধু বললেই কান্নায় চোখ ফাটিয়ে ফেলছেন, পঁচাত্তর পরবর্তি তাদের তৎপরতা বা মইন–ফখরুদ্দিনের সময় তাদের ভুমিকা তো আমরা অল্প–বিস্তর জানিই। আর তো চারদিকে গিজগিজ করছে হাজারে হাজার দলদাস চাটুকারের দল! আমাদের মত একাত্তর পরবর্তী তরুণদের কাছে একটা স্বাধীন ভুখন্ড এনে দেবার জন্যে বঙ্গবন্ধু যেমন নেতা হিসাবে কিংবদন্তী এবং বরেণ্য; মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী শাসনকাল নিয়ে যা জেনেছি বা পড়েছি, সেজন্যে তিনি আমার মত অনেকের কাছেই একজন ব্যর্থ রাষ্ট্রনায়কও। এতে তাঁর একাত্তর পূর্ব অবিসংবাদিত ভুমিকা কিছু খাটো হয়ে যায় না বা কিছুতেই এটা বুঝায় না যে আমি বা আপনি জিয়াউর রাহমানের মত সামরিকজান্তাকে সমর্থন করছি বা তার তৈরি মুক্তিযুদ্ধের দর্শণ ও চেতনা বিরোধী দল বি এন পি‘র প্রতি ঝুঁকে পড়েছি; অবশ্য বুদ্ধি–প্রতিবন্ধী কেউ যদি স্বতোপ্রনোদিত হয়ে নিজেদের খেয়াল–খুশি মত অর্থ বা লেবেল তৈরি করেন সেটা ভিন্ন কথা; ভিন্ন বিবেচনা।
এখন যারা এই সমালোচনা গ্রহণ করতে পারেন না, কানে তুলো দিয়ে থাকুন। যুগ যুগ ধরে বহমান ধর্ম নিয়ে যারা কথা বলতে দ্বিধা করে না, তারা এই সব দলদাস মূর্খাতি মূর্খরা কী বল্লেন বা কী ভাবলেন তাতে তাদের কাচকলা কিছু আসে যায় না! আপনাদের মত বসন্তের কোকিল এরা নয় যে সুসময়ে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক বলে চিৎকার করে দুর্দিনে লেজ গুটিয়ে পালাবে। দেশের দুর্ভাগ্য যে, যে দল মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, অসাম্প্রদায়িকতাকে আমাদের সংবিধানের মূল ভিত্তি হিসাবে একটা প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি দিয়েছে, এই দলের নেতা–নেত্রীরা এমন সাম্প্রদায়িক বিষোদগার ছড়িয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের সমালোচনা গ্রহণে এতটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন যে নিজেদের স্বার্থ–বিরোধী কিছু বললেই কথায় কথায় যাকে তাকে রাজাকার আর বি এন পি‘র চর লেবেল দিয়ে প্রকান্তরে নিজেরাই নিঃসঙ্গ হয়ে উঠছেন।