সিনিয়র সদস্যরা হঠাৎ চুপ মেরেছেন, কেন ?
কথা বলছেন একমাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিছু কথা বলছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। কিন্ত আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা হঠাৎ যেন চুপসে গেছেন। তাঁদের কথাবার্তা নেই একদম। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আমীর হোসেন আমু। রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে গত এক সপ্তাহে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই। আওয়ামী লীগের আরেক সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ কথা বলছেন কেবল তাঁর মন্ত্রণালয়ের বিষয় নিয়েই। বিএনপি কিংবা রাজনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে তাঁর চোখে পড়ার মতো বক্তব্য নেই। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য। প্রধান বিচারপতি ইস্যুতে তিনি পার্লামেন্টে জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখেছেন। কিন্ত রাজনীতির মাঠে আগামী নির্বাচন, বিএনপি, সংলাপ এসব নিয়ে নীরব। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন নিয়মিত কিন্ত জাতীয় ইস্যুতে তিনি বেশ অনিয়মিত। শুধু মতিয়া চৌধুরী নন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা হঠাৎ চুপ মেরেছেন, কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ আওয়ামী লীগে।
বেগম জিয়ার দেশে ফেরা, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিতর্কিত মন্তব্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একা ব্যাটিং করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। হঠাৎ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা কেন মৌনব্রত পালন করছেন। যারা এতদিন কথা বলে মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন এরকম মন্ত্রীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম অন্যতম। কিন্ত তিনি এখন খাদ্যে ডুবে আছেন। একই সময় বিএনপির সব সিনিয়র নেতারাই সরকারের সমালোচনায় মুখর। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন প্রতিদিনই রাজনৈতিক ইস্যুতে নানা কথা বলছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ কথার রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে। ওবায়দুল কাদেরের নাটকীয়তায় ভরা কথাবার্তা মানুষ খুব একটা পছন্দ করছেন না। আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের অতিকথন মানুষ পছন্দ করছে না।’ ওবায়দুল কাদেরের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি কথা কম বলতেন। কিন্ত যা বলতেন তা মানুষ গ্রহণ করতো, বিশ্বাস করতো। এখন তাঁর অভাব মানুষ অনুভব করছে। আওয়ামী লীগের শরিকদের মধ্যে কথা বলেন একমাত্র হাসানুল হক ইনু।কিন্ত সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড নিয়ে টানাপোড়েনে তিনি এখন কোনঠাসা। ইনু কথা বললেও একেবারেই নীরব পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা বলছেন না দীর্ঘদিন।
দেখা যায়, যখন কোনো সংকট শুরু হয়, তখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা গা বাঁচিয়ে চলেন। ২০০১ এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ছিলেন নীরব। ওয়ান-ইলেভেনেও তাঁরা নিরাপদ বক্তব্যই শুধু দিতেন। ২০১৩ সালে তো সিনিয়র নেতাদের নেতাদের মুখে কোনো রা ছিল না। এসব বোঝা যেত না, কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিই তখন সব সমালোচনার জবাব দিতেন, সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মসূচি করছেন না, অসুস্থতার কারণে। সিনিয়র নেতাদের নীরবতা কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। একজন কর্মী তো বলেই ফেললেন, ‘ওনারা সুসময়ের পাখি। সংকটে গা বাচিয়ে রাঁখাই ওনাদের ধর্ম।’