সিলেটে কর আদায়: ৪৭ কোটি থেকে বেড়ে ৬২৯ কোটি টাকা
রফিকুল ইসলাম কামাল :: ৪৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা দিয়ে শুরু। ১৮ বছরের ব্যবধানে এই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬২৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়। প্রতি অর্থবছরেই সিলেট অঞ্চলে আয়কর আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে। তবে সিলেট কর কমিশন প্রতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে, তা নিয়মিত আদায় হচ্ছে না। কর কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১ নভেম্বর সিলেট কর অঞ্চল সৃষ্টি করা হয়। এরপর থেকে প্রতি অর্থবছরে এ অঞ্চলে কর আদায়ের পরিমাণ লিপিবদ্ধ করে আসছে সিলেট কর অঞ্চলের কর কমিশনারের কার্যালয়। ২০০১-০২ অর্থবছরে সিলেট কর অঞ্চলে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে আদায় হয় ৪৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সর্বশেস ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আদায়ের পরিমাণ ছিল ৬২৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ হিসেবে শুরুর সময় থেকে ১৮ বছরের ব্যবধানে কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫৮২ কোটি টাকা। সিলেটের কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, সিলেট কর অঞ্চলে ২০০২-০৩ অর্থবছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ কোটি টাকা; আদায় হয় ৫১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৬৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ৬১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আদায় হয়। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৭০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আদায় হয় ৭০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৯০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল; আদায় হয় ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
সিলেট কর অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০০৬-০৭ অর্থবছরে। সে সময় ১০১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আদায় করা হয়। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫০ কোটি টাকা। ওই সময় আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৫৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৭৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরে ১১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা আদায় করা হয়। ১৮৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০০৯-১০ অর্থবছরে। তবে আদায় হয় ১৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরেও (২০১০-১১) একই পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় আদায়ের পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি (১৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) ছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে সিলেট কর অঞ্চলে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আড়াইশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। লক্ষ্যমাত্রা ২৮১ কোটি টাকা নির্ধারণ করে আদায় হয় ২৮৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এদিকে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫৫ কোটি টাকা। আদায় হয় ৩৭১ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৩৯২ কোটি ৪০ লাখ টাকা আদায় হয়। ২০১৪ সাল থেকে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতময় ছিল। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতির ওপরও। ফলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সিলেট অঞ্চলে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমে দাঁড়ায় ৩৩২ কোটি টাকায়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আদায় হয় ৩৫৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরে ৩৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকা আদায় করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছায়। আদায় হয় ৫১৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা ২২৫ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৫ কোটি টাকায়। তবে আদায়ের পরিমাণ ছিল বেশ কম, ৫৩৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
সিলেট কর কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, সিলেট কর অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১৮টি অর্থবছরে কর আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ বারই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়নি কর আদায়ের পরিমাণ। সিলেট কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার (সদর দপ্তর-প্রশাসন) কাজল সিংহ জানান, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিলেট অঞ্চলে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা চলছে। সিলেট কর অঞ্চলের কর কমিশনার রনজীত কুমার সাহা জানান, এ অঞ্চলে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে, কর দাতাদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন শ্রেণিতে করদাতাদের সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। এ বছরও সিলেট কর অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত বিভাগের ৪টি জেলা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকার দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী ১০ জনকে, সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ১৫ জন পুরুষকে, সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ৫ জন মহিলাকে এবং সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী (৪০ বছরের নিচে) ৫ তরুণসহ মোট ৩৫ জনকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা ও সনদ প্রদান করা হয়েছে।