ওয়েছ খছরু: সিলেটে রাজপথ দখলে নিয়ে শোডাউনের রাজনীতি চলছে। যেকোনো কর্মসূচিতে লোকসমাগম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। বলা হচ্ছে, চূড়ান্ত লড়াইয়ের রিহার্সেল। তবে ক্রমেই রাজপথে তেজি হয়ে উঠছে দু’দল। কেউ কাউকে ছাড় দেবে না- এমন মনোভাব দু’দলের শীর্ষ নেতাদের। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দলের নেতারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করছে। তবে তাদের এই শোডাউন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সিলেটে। সরকারি দলে থাকা আওয়ামী লীগের এখন কর্মসূচি পালনে নেতাকর্মীর অভাব নেই। ডাক দিলেই হাজার হাজার নেতাকর্মী মাঠে ছুটে আসেন। মূল দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনে আছে নেতাকর্মীদের ভিড়। এ কারণে কর্মসূচি পালনে নেতা কিংবা কর্মীর অভাব হয় না। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, গণমানুষের দল হিসেবে সিলেট আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীর সংখ্যা বেশি। গত সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগে নতুন করে ঐক্য ফিরে এসেছে।
বিশেষ করে সিলেটের সিনিয়র নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছেন। এর দেখাদেখি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আর এতে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচনের পর থেকে তিনি সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। সিলেটে ৯ই জুলাই যুবলীগের বিভাগীয় শান্তি সমাবেশ সফলে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনে আছে তার আধিপত্য। নির্বাচনের পর থেকে শান্তি সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালনে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকছেন। তার উপর আস্থা বাড়ছে আওয়ামী লীগের বিভক্ত থাকা নেতাদেরও।
সিলেটের রাজনীতিতে সমঝোতা কিংবা সম্প্রীতির পথে নেই মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। বরং দলীয় প্রধান এবং দলের প্রয়োজনে তিনি সবই করতে রাজি। এজন্য নতুন ফর্মুলা নিয়ে মাঠে নেমেছে আনোয়ার। গত বৃহস্পতিবার তিনি সিলেট আওয়ামী লীগের ১৬৮ জন নেতাকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া গেছেন। নেতাদের মধ্যে ঐক্য ফেরাতে তার উদ্যোগ দলের ভেতরে প্রশংসিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সফরে থাকা একাধিক নেতা। তবে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি সিটি নির্বাচনের পরপরই দলের সবাইকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার মনস্থির করেছিলেন। এজন্য এবার সময় নিয়ে সবাইকে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধি জিয়ারত করেছেন।
সিলেট আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ বলে জানান তিনি। এদিকে, সিলেটে শক্তি সঞ্চয় করে রাজপথে দাপট দেখাচ্ছে বিএনপি। সিলেটে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ এবং পরবর্তীতে তারণ্যের সমাবেশ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে মনোবল ফিরে এসেছে। এখন সিলেটে ডাক দিলেই রাজপথে ছুটে আসেন নেতাকর্মীরা। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশি বাধার আশঙ্কা থাকলেও নেতাকর্মী কমেনি। বরং দীর্ঘদিন থেকে ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীরা এবার রাজপথে সক্রিয় হয়েছেন।
এ কারণে গত তিন মাস ধরে সিলেটের রাজপথে বিএনপি’র কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি বেড়েছে। এমনকি ঢাকার কর্মসূচিতেও সিলেটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হচ্ছেন। সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, এখন আর পিছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হঠাতে রাজপথের আন্দোলনে নেমেছেন তারা। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ঢাকা থেকে ছুটে এসে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনও। নেতাদের অনুসারীরাও রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়া সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হওয়া সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের সম্পর্ক রয়েছে। এতে করে এখন আর আগের মতো আস্থার সংকটে ভুগছেন না তৃণমূলের নেতারা।
নেতারা জানিয়েছেন, প্রতি সপ্তাহে কর্মসূচি রয়েছে। কখনো কখনো সপ্তাহে ৩-৪ দিন কর্মসূচি থাকে। আর এসব কর্মসূচিতে বিএনপি ছাড়াও সাধারণ মানুষেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে আগের চেয়ে দ্বিগুণ গতি নিয়ে কর্মীরা জেল-জুলুমের তোয়াক্কা না করে মাঠে উপস্থিত হচ্ছেন। অনেকেই মামলার আসামি। জেলে যাচ্ছেন আবার জামিন নিয়ে এসে আন্দোলনে সক্রিয় হচ্ছেন।
সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমাদের তো আর পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরাও ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আন্দোলন কর্মসূচিতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সামনে যতই কঠিন সময় আসুক সিলেটের রাজপথ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ছাড়বে না। এখন পরিস্থিতি এমন নেতারা না থাকলে কর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’ তিনি বলেন, ‘সিলেট বিএনপি আগের চেয়ে অনেক শক্ত অবস্থানে। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। নানা কারণে যারা সক্রিয় ছিলেন না, তারাও এসে রাজপথের আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। এমনকি সামনের সারিতে থেকে কর্মসূচি সফল করছেন।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৩৭ বার