সুনামগঞ্জের পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে সম্পত্তি গ্রাসের অভিযোগ
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখতের বিরুদ্ধে ‘উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সম্পত্তি গ্রাস এবং সম্পদের ক্ষতি সাধনের’ অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী মো. ফজলুল করিম। তিনি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন হোটেল রেজিয়ার সত্ত্বাধিকারী ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বেআইনি ও উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আমার সম্পত্তি গ্রাস করতে এবং সম্পদের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত রয়েছেন সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত। পর্যাপ্ত অব্যবহৃত খালি জায়গা থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করে আমাদের মালিকানা ভূমিতে পৌরসভা কর্তৃক ড্রেন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি না নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের উদ্দেশ্য মূলক প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন আরপিন নগরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমিতে সুনামগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত প্রায় তিন ফুট চওড়া একটি ড্রেন বিদ্যমান রয়েছে। ড্রেনের পাশেই আমাদের আবাসিক ও বাণিজ্যিক হোটেল ভবনের মধ্যবর্তী জমিতে পৌরসভার অনুমতিক্রমে অনুমোদিত নকশানুসারে নির্মাণ কাজ চলমান ছিল। কিন্তু মেয়র হোটেল ভবনের দেয়ালের ভিত্তি ঘেঁষে একটি অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় ড্রেন নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন। ড্রেন নির্মাণের ফলে আমার ভবনটি হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং ভিত্তিটিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় ভূমি ধ্বসে ভবনে থাকা নারী ও শিশুর প্রাণ হানীসহ মারাত্মক ক্ষতি সাধন ঘটতে পারে। এটি মূলত আমাকে ভূমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র। যে জায়গায় ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে তা নিয়ে তাদের ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের মধ্যে একটি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান মো. ফজলুল করিম বলেন, স্বত্ব মামলা থাকাবস্থায় আইনগতভাবে মেয়র কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই এখানে ড্রেন নির্মাণ কাজ করতে পারে না। মামলার বিষয় অবগত করার পর বাসা-বাড়ী ও হোটেল রেজিয়া আবাসিক সংলগ্ন মালিকানার জায়গা থেকে ড্রেনটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেও পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেন নির্মাণকাজ থেকে সরেনি।
মো. ফজলুল করিম বলেন, নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে গেলে তিনি তাৎক্ষনিক সরজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি ) কে নির্দেশ দেন। সহকারী কমিশনার গত ১৪ অক্টোবর তার প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন ১৪৪ নং জে এলস্থিত তেঘরিয়া মৌজার ১৩৬২ নং নামজারী খতিয়ানে ২০৫ নং দাগে ০.৪৪ একর বাড়ী রকম ভূমি রেজিয়া খাতুনের নামে রেকর্ডভুক্ত আছে। অপরদিকে ৯ নং খতিয়ানে ১৪৮৪ নং দাগে ১৬ আনা হিস্যায় ৮.৪০ একর সড়ক রকম ভূমি কমিউনিকেশন এন্ড ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট সুনামগঞ্জ এর নামে রেকর্ডভুক্ত আছে। তবে মালিকানাধীন ভূমি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমির মধ্যে কোনো খাস সরকারী খতিয়ানের ভূমি নেই।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দেওয়া তথ্য মতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবীকৃত ভূমিতে সুনামগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক ড্রেন নির্মাণের কোনো অনুমতি তারা প্রদান করেননি। একই সাথে মালিকানা ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে মামলা চলমান রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রয়োজনে সড়ক সংলগ্ন মূল ড্রেনের গভীরতা ও প্রশস্ত করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ভূমি ছাড় দিতে রাজি আছি। কিন্তু মেয়র নাদের বখত মহোদয় মূলত আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি সাধন করতে এবং রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এ ধরনের অবিবেচনাসূলভ কাজ করেছেন। এছাড়াও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।