আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ :সুনামগঞ্জের পাহাড়ী জমিতে জামান পরিবারের স্বপ্নের আনারস বাগান এখন সারা দেশের সুস্বাদু আনারসের চাহিদা পূরন করছে। “দেশের মায়া” মিশ্র ফল বাগান” নামের এই বাগানটির স্বত্তাধিকারী হচ্ছেন বর্তমানে নিউইয়র্ক প্রবাসী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী ও তার সহধর্মীনি মনোয়ারা জামান চৌধূরী। স্বাধীনতাত্তোর সুনামগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের ২ বারের নির্বাচিত সভাপতি ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বালাট সাবসেক্টরের অন্যতম ছাত্র সংগঠক নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী দীর্ঘ প্রবাসে থাকার এক পর্যায়ে ৯০ দশকে তিনি মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের বালাট থানার পূন্যনগর গ্রামের দক্ষিণপূর্ব পাশে এবং সুনামগঞ্জ সদর থানার রঙ্গারচর ইউনিয়নের হাসাউড়া গ্রামের উত্তর পশ্চিম পার্শ্বে হাসাউড়া মৌজায় প্রায় ১৪ একর টিলারকম জায়গা ক্রয় করেন। এর আগে ক্রয়কৃত জায়গাটুকু নিছক পাহাড়ী টিলারকম পরিত্যক্ত ভূমি হিসেবে পতিত থাকলেও জামান পরিবারের হাত ধরে এটি একটি আনারস বাগানে উন্নীত হয়। তিনি দেশে না থাকলেও এই বাগানটির পরিচর্যার দায়িত্বে থাকেন তার বড় ভাই এডভোকেট সামসুজ্জামান চৌধুরী সুফি,কামরুজ্জামান চৌধুরী শাফি ও শ্যালক মনিরুজ্জামান মনির। এর মধ্যে বড় দুই ভাই মৃত্যূবরন করায় ও শ্যালক মনির প্রবাসে চলে যাওয়ার পর থেকে বর্তমানে দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের উর্দ্ধনপুর নিবাসী মাওলানা মহিবুর রহমান চৌধুরী এবং সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের হাসাউড়া গ্রাম নিবাসী বিজয় কুমার দাস ও নিতাই চাদ দাস ভ্রাতাদ্বয় বাগানটি দেখভাল করার দায়িত্বে রয়েছেন।
পাহাড়ি উঁচু-নিচু স্থানে তাদের লাগানো সারি সারি আনারসের মুকুলে চেয়ে গেছে পুরো বাগান। গত বছর বাগানে উৎপাদিত হয় ৪০ হাজার আনারস। গড়ে প্রতিটি আনারস ৩২ টাকা দরে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন তারা। বাগানটি দেখে স্থানীয় বেকার অনেকে আকৃষ্ট হয়ে আনারস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পাহাড়ের এ সফল কৃষি উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী আনারস চাষ করে সফল হওয়ার বিষয়ে বলেন,আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ বিপ্লবের অংশীদার হতে দেশের মা মাটি ও মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধের কারণে ক্রয়কৃত ১৪ একর জমির বেশীরভাগ অংশজুড়েই গড়ে তুলেছি আনারসের বাগান।
বর্তমানে তাদের বাগানে প্রায় ১০-১২জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছে। এবার আনারস বিক্রি করে তারা ৫০ লক্ষ টাকা আয় করবেন বলে আশাবাদী। আনারস ছাড়াও তাদের পুরো জমিতেই ২০ রকমের ফলের চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে ৪ প্রজাতির আম যেমন আমরুপালী, কাটিমুন, বাড়ীফৌর, হারিভাঙ্গা, দেশী কাঁঠাল, লটকন, লিচু, আমলকী, মাল্টা, লেবু, নারিকেল, ভূট্টা, সুপারি, রাম্বুটান, তেজপাতা, কমলালেবু, স্বরুফা, আতাফল ও ছফেদাসহ অন্যান্য বারোমাসি ফল রয়েছে। সরকারী স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তাদের বাগানটিতে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চাষ করা সম্ভব বলে জানান শাহী চৌধুরী। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী ও মনোয়ারা জামান চৌধুরী এখন পাহাড়ের এক মডেলের নাম। বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ পাহাড়ের সফল এ কৃষি উদ্যোক্তাদের নামে ইতিপূর্বে প্রস্তাবনা প্রেরণ করেন।
আনারস বাগানের শ্রমিক জমির আলী ও কবির মিয়া বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে শাহী চৌধুরীর বাগানে কাজ করছি। এ বাগানে কাজ করে আমরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক চাহিদা পূরণ করছি। শুধু আমরা দুজন নই এ বাগানে আরো ১০/১২জন স্থানীয় বেকার মজুর কাজ করে তাদের বেকারত্ব দূর করেন বলে জানান জমির আলী ও কবির মিয়া।
নিউইয়র্ক প্রবাসী মো.জাহিদ হোসেন বলেন,আমি দীর্ঘ ১৫ বছর পরে আমার ভগ্নিপতির বাগানটি দেখতে এসেছি। ১৫ বছরের ব্যবধানে এই বাগানটি এবং আশপাশ এলাকা আজ অনেক উন্নত হয়েছে। দৈনিক যুগান্তর ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি পীর মাহবুবুর রহমান ও মাছুম হেলাল বলেন,এই এলাকায় ছোটবড় প্রায় ৫০টি আনারসের বাগান রয়েছে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় এবং জামান পরিবারকে মডেল ধরে এখন অনেকেই আনারস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী আহমদুজ্জামান চৌধুরী হাসান বলেন,আমার বড় ভাই শখের বসে এই আনারস বাগানটি ক্রয় করেছিলেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরের ব্যবধানে এই বাগানটি এখন লাভজনক ব্যবসায় উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে সুমিষ্ট আনারসের চাহিদা পূরন করে যাচ্ছে এই বাগান। বাগান সংলগ্ন মাজারের খাদেম ফয়জুর রহমান বলেন,বাগানে আসতে হাসাউড়া বাজারের পাকা সড়ক থেকে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প হয়ে মাত্র এক কিলোমিটার কাচা রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তাটিকে একটি পাকা রাস্তায় উন্নীত করলে পুরো আনারস বাগান এলাকা একটি অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকায় উন্নীত হবে। সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাদের জেলায় এটি সবচেয়ে বড় আনারস বাগান। বিশেষ করে বাগানটি একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হওয়ায় আমরা বারবারই বাগানে আসি এবং বাগান মালিক ও চাষীদেরকে সবধরনের সহায়তা প্রদান করে থাকি। ৮ মার্চ্ বুধবার দুপুরে সরজমিনে বাগান দেখতে এসে রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস বলেন,উত্তরে ভারতের বিএসএফ ক্যাম্প ও দক্ষিণে বাংলাদেশের হাসাউড়া বিজিবি ক্যাম্পের মধ্যখানে অবস্থিত এই আনারস বাগানটি প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপরুপ সৃষ্টি। আগামী জৈষ্ট মাসে আনারস যখন গাছে পাকা এবং খাওয়ার উপযুক্ত হবে তখন আনারসের মিষ্টি গন্ধে চারিদিক মাতোয়ারা হয়ে উঠবে। তারা বলেন,একবার গাছ লাগালে ১০ বছর লাগাতার আনারস ধরে বাগানে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, প্রবাসী নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী ও তার সহধর্মীনি মনোয়ারা জামান চৌধুরী উভয়েই সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তাদের বাগানের আনারস বর্তমান বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশে সুস্বাদু আনারসের যোগান দিচ্ছে এই বাগান। সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন,শাহী ভাইর আনারস বাগানের পার্শ্ববর্তী কাচা রাস্তাটিকে পাকা রাস্তায় উন্নীত করার জন্য আমি জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিত নির্দেশ দিয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত এই বৃহৎ আনারস বাগানটিকে অপার সম্ভাবনাময় একটি আনারস বাগান ও পর্যটন এলাকায় উন্নীত করতে আমার সবরকম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৮৪ বার