সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজঃফেসবুকে নানা মত
বিন্দু তালুকদার
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মদনপুরে মেডিকেল কলেজ স্থাপন হচ্ছে। এই সংবাদে উদ্বেলিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির স্থান নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্যও করছেন তারা। জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র সুনামগঞ্জ এর আহবায়ক অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু মদনপুরে ৫০০ শয্যার হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রসঙ্গে নিজের ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন,‘একটা বিষয় নিয়া আমাদের বন্ধুরা ফেইস বুকে ঝড় তুলেছেন। সেটা হচ্ছে মদনপুরে মেডিকেল কলেজের জায়গা নির্ধারণ প্রশ্নে। সবারই মতামত দেওয়ার অধিকার আছে এটা সত্যি। কারো মতামত পছন্দ নাও হতে পারে। তবে তার মতামত দেওয়া বা কথা বলার অধিকারকে খর্ব করার অধিকার কারো নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে মদনপুরে যে জায়গাতে মেডিকেল কলেজ হবে সেটা একটা চমৎকার জায়গা। আমাদের চিন্তা করতে হবে পুরো জেলাবাসীকে নিয়ে। এই জায়গাটিতে কলেজ হলে আমাদের উপজেলাগুলোর মধ্যে দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ এর যোগাযোগ খুবই ভালো। এজন্য এই উপজেলাগুলোর মানুষ মেডিকেল কলেজের সেবা পাবেন। আমাদের ছাতক, জগন্নাথপুর এবং দোয়ারাবাজারের একাংশ সিলেটে চলে যেতে পারেন। আর শহরের ভেতরে হলে পুরো জেলার মানুষ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আরেকটা জিনিস খেয়াল করা দরকার মদনপুরে মেডিকেল কলেজ হলে শহরে আলাদাভাবে আমাদের ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকছে। তার মানে আমরা দুটো হাসপাতাল পাচ্ছি। এ মন্তব্যটি আমার ব্যাক্তিগত। কারো পছন্দ না হলে এটাকে সমর্থন করবেন না।’
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা স্থান নির্বাচন কমিটির সভার রেজুলেশন মোতাবেক সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ মেডিকলে কলেজ স্থাপনের জন্য দিরাই রাস্তার মোড়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১৫৬ নম্বর জেএল-এর কাঠইর মৌজায় মোট ৮৪টি দাগে ২৯.২৪ একর জমি স্থায়ীভাবে অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরীর খসরুর ফেইসবুক পোস্টে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ইশতিয়াক রুপু আহমদ লিখেছেন,‘ খসরু ভাই শহরটি ইতিমধ্যেই হকার্স মার্কেট হয়ে গেছে। প্রতিটি বাসার সামনে মার্কেট (আমিও আছি)। এখন পাড়া না বলে চুড়ি পট্টি, ফুল পট্টি, পার্লার পট্টি ডাকা উচিত। এতটুকুন শ্বাস নেবার জায়গা নেই। এর উপর মেডিকেল কলেজ? চিন্তার অনুশীলন প্রয়োজন।’
বজলুল মজিদ চৌধুরীর মন্ত্যবের সমর্থনে আমেরিকা প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ বখত লিখেছেন,‘হ্যাঁ আমি তোমার সাথে একমত, একশ শতাংশ।’ বিশিষ্ট আইনজীবী স্বপন কুমার দাস রায় লিখেছেন,‘আমি আপনার সঙ্গে একমত।’ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেফু লিখেছেন,‘একশভাগ একমত পোষণ করছি।’ কবি কুমার সৌরভ মন্তব্য কলামে লিখেছেন,‘একমত।’
‘সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের দুরাবস্তার জন্য আমরা কেউ-ই খুব বেশি কথা বলি না। বরঞ্চ দুই বছর আগে হাসপাতাল সংস্কারের নামে সাড়ে ৬ কোটি টাকা লুটপাটের খবর দেখেছি পত্র-পত্রিকায়। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর বদান্যতায় সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জেলার মধ্যবর্তী স্থানে মেডিকেল কলেজের স্থানও নির্ধারন হয়েছে। কেউ কেউ এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। এটি ভাল কাজের বিরোধীতা মনে করি আমি। একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অস্বাভাবিক কিছু নয়। এভাবে দেশের অনেক স্থানেই হয়েছে।’ নিজের ফেইস বুকে এভাবেই লিখেছেন সুনামগঞ্জের সরকারি কৌসুলি (পিপি) ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দা হাসনাত হোসেন ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন,‘সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মদনপুরে মেডিকেল কলেজের জায়গা নির্ধারনের প্রস্তাব নিয়ে কিছু সংখ্যক লোক প্রশ্ন তুলেছেন, এমনকি আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু সেটা হবে পুরো জেলাবাসীর বিরুদ্ধে আন্দোলন। আপরদিকে সচেতন মানুষজন মদনপুরে মিেডকেল কলেজ স্থাপনের নির্ধারিত স্থানকে উপযুক্ত মনে করছেন। আমরা সবাই জানি জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। তারই ভিশন বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জননেতা এম.এ.মান্নান কাজ করে যাচ্ছেন। এর ফলশ্রুতিতেই আমরা মেডিকেল কলেজ পেয়েছি। আমাদের চিন্তা করতে হবে পুরো জেলাবাসিকে নিয়ে। এই জায়গাটিতে মেডিকেল কলেজ হলে আমাদের উপজেলাগুলোর মধ্যে দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ এর জনগণের আরেকটু কাছে আমরা যেতে পারবো। তাই এই উপজেলাগুলো তথা পুরো জেলার সাধারণ মানুষজন মেডিকেল কলেজের সেবা সহজে পাবেন। ছাতক, জগন্নাথপুর এবং দোয়ারাবাজারের একাংশ সিলেটে চলে যেতে পারেন। শহরের ভেতরে হলে সেটা হবে পুরো জেলার উত্তর প্রান্তে। সাধারণ মানুষজনকে এই সুযোগ থেকে দুরে ঠেলে দেয়া হয়। তাছাড়া মদনপুর মানেই তো শহরের কাছাকাছি সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। আরেকটা বিষয় খেয়াল করা দরকার মদনপুরে মেডিকেল কলেজ হলেও শহরে আলাদাভাবে আমাদের ২৫০ শয্যার হাসপাতাল তো থাকছেই। তার মানে আমরা দুটো হাসপাতাল পাচ্ছি। সুতরাং জেলা প্রশাসনের এ প্রস্তাব মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জন্য নয়, পুরো জেলাবাসীরই পক্ষে।’
বিএমএ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাশ নিজের ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন,‘ প্রসঙ্গঃ মেডিকেল কলেজ কি সুনামগঞ্জ শহরের ভেতরে হবে, না মদনপুরে হবে? একটা প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়ন হয়, তার খেয়াল কি কেউ রাখে? আমি মনে করি সুনামগঞ্জ এ মেডিকেল কলেজ করার সিদ্ধান্ত আসলে ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত’ (দেশের অনেক জেলায়ই প্রস্তুত মেডিকেল কলেজ নেয়ার জন্য কিন্তু তারা পাচ্ছে না) এই বৃষ্টিতে না ভিজে যদি আমরা সবাই ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি তাহলে এই বৃষ্টি সুনামগঞ্জ এ আসবে না।’
দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও একাত্তর টিভির সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি কবি শামস শামীম নিজের ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন,‘আমার কতিপয় অতিজান্তা স্বজন নানা ফোরামে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেন, জনগণের সেবার দোহাই দিয়ে। কিন্তু মাঝেÑমধ্যে তারা নিজেদের হিস্যা বুঝে নিতে প্রান্তজনের উপর একহাত নেন। যদিও অল্পেতুষ্ট প্রান্তজন এসবে বরাবরই চুপ থাকেন। প্রকৃত বাস্তবতা হলো শহুরেজন তাদের আধিপত্যের বাইরে প্রান্তজনের আরেকটি বাজার হোক, কর্মসংস্থান হোক, আর্ত-সাংস্কৃতিক মুক্তি পাক এটা চান না। তাদের কণ্ঠে আমি আধিপত্যবাদী পূজিবাদেরই প্রতিধ্বনি শোনতে পাই। সম্প্রতি শহরতলির মদনপুরে (শহর থেকে যেতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে) বহুল আকাঙ্খা ও গণদাবির প্রেক্ষিত আওয়ামী লীগ সরকার ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জেলা শহর থেকে অল্পই দূরে। স্থানটি সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাড়ক লাগোয়া পড়ায় বরাবরই ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় থাকবে। অন্তত স্থান নির্বাচন কমিটিকে এ কারণে অভিনন্দনই দেব আমি। সদর উপজেলার মদনপুরে মেডিকেল কলেজ হলে শহর সম্প্রসারণ হবে, যা বিকেন্দ্রীকরণেরই শামিল। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই সরকার অন্যান্য স্থাপনা গড়ায়ও জোর দিবে। শহরের বাইরে আরেকটি বাজারও তৈরি হবে। যাতে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকা প্রান্তবাসী জনতা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেরাও সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লার পুরো অংশ, সদরের বৃহত্তম অংশ, ছাতক ও জগন্নাথপুরের বৃহত্তম অংশ, জামালগঞ্জ উপজেলার বৃহত্তম অংশ এমনকি বিশ্বম্ভরপুরবাসীও এখানে মেডিকেল হলে উপকৃতই হবে। অন্যান্যরা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেবা নিতে পারবে অনায়াসেই। মদনপুরেই সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ নির্মাণ হোক। প্রান্তজন মুক্তি পাক আধিপত্যবাদীদের কবল থেকে। ’
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কু ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন,‘ মেডিকেল কলেজ প্রাপ্তি সাত রাজার ধন, এটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। সিলেটে যখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছিল তখনও তারা মনে করেছিল কতদূর, এক সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কেও অনেক দূর মনে হত, আর চট্টগামের কথা না হয় বাদই দিলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে অনেক দূরে। আগামীতে সড়ক প্রশস্ত হবে ভাল ভাল যানবাহন চলবে, শহরের পরিধি ও ব্যাপ্তি বেড়ে যাবে সর্বোপরী সদরেই তো থাকছে। কলেজকে কেন্দ্র করে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সর্বোপরী যারা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন তারা সূদুরপ্রসারী চিন্তা করে মতামত দিবেন। একটু যদি সাড়া জেলার কথা ভাবি-তবে দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগন্জ্ঞ, জগন্নাথপুর, ছাতক ও সদর, সাথে বিশ্বম্ভরপুরকে রাখা যায় শুধু দোয়ারাবাজার ও তাহিরপুর একটু দূরে আর ধর্মপাশা বরাবর ময়মনসিংহের সাথে সম্পৃক্ত। কোন অবস্থায় যেন তৃতীয় পক্ষ কেড়ে নিতে না পাওে, সেদিকে সকলের নজর রাখা প্রয়োজন।’
রেজাউল আলম নিক্কুর পোস্টে আবু সায়েম নামের একজন কমেন্ট করে লিখেছেন,‘ গুগল সার্চ করে ম্যাপ দেখলেই বুঝা যায় এই স্থান নির্ধারণ কতটা বাস্তবসম্মত। এটা সারা জেলার সুফল ভোগীদের জন্য, কোন বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য নয়। সারা জেলা-উপজেলার হাসপাতাল হতে এখানে রোগী রেফার করা হবে। এখানে না হলে ওসমানী কিংবা প্রস্তাবিত সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই মানুষে কথা, রোগীর কথা চিন্তা না করে যারা কায়েমি স্বার্থের কথা চিন্তা করেন তারাই পশ্চাৎপদ, স্বার্থান্নেসী, সুযোগ সন্ধানী।’
এনটিভির জেলা প্রতিনিধি দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী লিখেছেন,‘ প্রসঙ্গঃ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল: কথা হলো সুনামগঞ্জ সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার নাই। মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। কই, কাউকে তো দেখলাম না সেবার মান নিয়ে কথা বলতে। ডাক্তারের দাবীতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে। কিছু দিন আগে রাত ৪টার দিকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাই কিন্তু হাসপাতালের জরুরী বিভাগ কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারও সেদিন দায়িত্বে ছিল না! এনিয়ে আমরা লেখালেখিও করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। যেখানে আমাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে এতো সমস্যা, সেখানে কেউ যদি নিজ এলাকার পাশে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল করতে চান. তাতে ক্ষতি কি? হয় তো হাসপাতালে যেতে ১৫ মিনিট সময় বেশী লাগবে, তার পরও তো সিলেটে যাওয়া লাগবে না। আমাদের বিপদের সময় চিকিৎসা তো পাব। আমার কথা হলো আমাদের জন্য না আবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বরাদ্দ অন্য জায়গায়, অন্য জেলায় না চলে যায় ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি মাসুম হেলাল তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,‘সুনামগঞ্জ জেলা শহর বাদ দিয়ে প্রস্তাবিত মেডিকেল কলেজের জন্য ১২ কিলোমিটার দূরের মদনপুর পয়েন্টে স্থান নির্ধারণের সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু কোন যুক্তিতে? জেলা শহরের আশপাশে কি মেডিকেল কলেজ করার মত জায়গা নেই। নাকি ওই জায়গাটা প্রভাবশালীদের নির্বাচনী এলাকার কাছে বলে? এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে জেলার ১১ টি উপজেলার মধ্যে ৪ টি সুবিধা পাবে এবং জেলা সদরে অবস্থানরতসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকার মানুষকে অধিক দুরত্ব অতিক্রম করে মেডিকেল কলেজ থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে।’
মাছরাঙা ও জনকন্ঠ প্রতিনিধি এমরানুল হক চৌধুরী তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেন,‘সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ যাচ্ছে কোথায়? ভাবছেন কি শহরবাসী? কার স্বার্থ সাধন করতে এই আয়োজন।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) সংসদ সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান গত বছরের ৪ অক্টোবর রাজধানীতে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে একটি আধুনিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনের সভায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতমন্ত্রী এম এ মান্নানকে বলেছিলেন, ‘সুনামগঞ্জে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হবে, আপনারা পরবর্তী কাজ শুরু করুন।’
এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারের এনইসি-একনেক ও সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ দ্রুত কাজ শুরু করে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত বছরের ২২ নভেম্বর সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জনকে চিঠি দেয়া হয়। একইসাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৩০ একর ভূমি খোঁজার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়।
গত ৪ অক্টোবর একনেকের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালককে সুনামগঞ্জে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ের প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা পরিচালক ডা. রাশিদুন নেছা গত ২২ নভেম্বর সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দ্রুত এই বিষয়ে একটি মতামত প্রদানের জন্য সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জনকে একটি চিঠি লিখেন। তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম সুনামগঞ্জে নতুন করে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাব্যতা উল্লেখ করে গত ৪ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা পরিচালককে অনুরোধ করেন।