সুনামগঞ্জ আদালতে মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
রাজধানীর একটি গার্মেন্টসে কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ভারতের কাস্মীরে পাচার করার অভিযোগে সুনামগঞ্জে মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে একদল পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ইং সনের ৭/৮ ধারায় ৫/২০১৭ নং মানব পাচার মামলাটি দায়ের করেছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের কান্দি ছমেদনগর নিবাসী ছাফির উদ্দিনের পুত্র মোঃ ওমর ফারুক। মামলায় একই গ্রামের মৃত রুসমত আলীর ৪ পুত্র আব্দুল করিম,মুজিবুর,রহমান ও নাজিম উদ্দিন,মৃত হোসেন মিয়ার পুত্র ছত্তার মিয়া,আব্দুল ছোবহানের পুত্র আব্দুল আলী এবং আব্দুল করিমের পুত্র আলী আহমদ জুলহাসকে আসামী করা হয়। উক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে চুরি ডাকাতি জবরদখল ও মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
মামলার বিবরনে প্রকাশ,মানব পাচারকারী আব্দুল করিমের নির্দেশে তার পুত্র আলী আহমদ জুলহাস একমাস আগে ওমর ফারুকের ভাই মোঃ রুহুল আমিনসহ আরো কয়েক যুবককে ঢাকায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তার চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম এর সাথে বেনাপোল বোর্ডার দিয়া ভারতের কাশ্মীরে পাটায়। আলী আহমদ জুলহাসের নির্দেশে তার চাচাতো ভাই ছাত্তার বেনাপোল বোর্ডার পর্যন্ত তাদেরকে আগাইয়া দিয়া বাড়ীতে ফিরে আসে। ২ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর ভাই রুহুল আমিনের সন্ধান জানার লক্ষ্যে ওমর ফারুক আলী আহমদ জুলহাস ও তার পিতা আব্দুল করিমের কাছে জানতে চাইলে ঐ মানব পাচারকারীরা ভিকটিম রুহুল আমীনকে ঢাকায় গার্মেন্টেস এর কাজে নিয়োজিত করেছে মর্মে ওমর ফারুক ও তার পরিবারবর্গসহ এলাকাবাসীকে জানায়। পরিবারের লোকজন আব্দুল করিমগংদের কথায় সরল বিশ^াসে রুহুল আমিনের সন্ধান জানা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু গত ২০ আগস্ট রবিবার রাত অনুমাণ ৯ টার সময় প্রতারিত ভিকটিম রুহুল আমিন তার বড় ভাই মোঃ ওমর ফারুক এর মোবাইল ফোনে কল করে ভারতের কাশ্মীরে বিপদজনক অবস্থায় আছে এবং আলী আহমদ জুলহাস ও তার পিতা আব্দুল করিম,ছাত্তার এর মাধ্যমে বেনাপোল বোর্ডার দিয়া তাকে পাঁচার করে দিয়েছে মর্মে জানায় এবং সেখান থেকে তাকে উদ্ধারের জন্য আকুতি প্রকাশ করে। ভিকটিম রুহুল আমিন বাড়ীতে আসার জন্য অস্থির হয়ে পড়লে তার সাথে থাকা তাজুল ইসলাম ও তার নাম অজ্ঞাত সহযোগীরা ভিকটিম রুহুল আমিনকে মারপিট করিতে থাকে।
২৩ আগস্ট বুধবার দুপুর ১২ টায় ওমর ফারুক ও তার ভাই নুরুল আমিন ভিকটিম রুহুল আমিন কে উদ্ধার করে বাড়ীতে এনে দেওয়ার জন্য আব্দুল করিম ও তার পুত্র আলী আহমদ জুলহাসকে অনুরোধ করতে বনগাঁও বাজারস্থ রায়হান ট্রেডার্স নামক দোকানে গেলে ওমর ফারুকের কাছে ভাইয়ের মুক্তিপন বাবত ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে ঐ মানব পাচারকারীরা। চাহিতো বিপুল পরিমান মুক্তিপনের টাকা দেওয়ার কোন সামর্থ ওমর ফারুক বা তাদের আত্মীয় স্বজনদের নেই মর্মে জানালে আলী আহমদ জুলহাসগং টাকা ছাড়া কোনক্রমেই ভিকটিমকে ফেরত দেবেনা মর্মে অবগত করে। ভিকটিম ভাইকে উদ্ধারের জন্য নিরীহ ওমর ফারুক আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা বললে,কথা কাটাকাটির জের ধরে আব্দুল করিমগং ওমর ফারুক ও তাদের আত্মীয় মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলীর কন্যা হাসিনা বেগমকে বেদম কিলঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। পাচারকারীদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার লক্ষ্যে ওমর ফারুক ও হাসিনা বেগম দৌড়ে রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে আশ্রয় নিলে পাচারকারী সন্ত্রাসীরা পিছু ধাওয়া করে বনগাঁও বাজারস্থ রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স কার্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়েও তাদের উপর দ্বিতীয় দফায় হামলাসহ বেদম মারপিঠ করে। বর্তমানে চাহিতো মুক্তিপনের চাঁদার টাকা না দিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করায় পাচারকারী ঐ সন্ত্রাসীরা ভিকটিম ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে খুন করবে বলে ঘোষণা দিচ্ছে। ভিকটিমের পক্ষে আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেছেন সাংবাদিক এডভোকেট মহসিন রেজা মানিক। সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) মাসুক আলী বলেন,মামলার ব্যাপারে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।