বিশেষ প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বিগত সম্মেলন নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিলো। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ ২৩ মে জল গড়িয়েছে অনেক। ফেব্রুয়ারীর জেলা সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা দেন। তিন মাসের ভেতর কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে বলেন। বেধে দেয়া সময়ের আগেই জেলা সভাপতি ও সম্পাদকের পছন্দের লোক নিয়ে কেন্দ্রে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি জমা দেয়া হয়। যে কমিটিতে সভাপতি, সম্পাদক ছাড়াও মেয়র ও সাবেক মেয়রের বলয়ের নেতাকর্মির স্থান হলেও পূর্বের কমিটির নেতৃস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার স্থান হয়নি। বর্তমানে এসব সাবেক নেতাকর্মীকে দলীয় কোন কর্মকান্ডে ডাকা হচ্ছেনা। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে তাদেরকে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
সভাপতি ও সম্পাদকের পছন্দের প্রস্তাবিত কমিটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। কেন্দ্রের নির্দেশে তা স্থগিত করে রাখা হয়েছে। কমিটি স্থগিতের অন্যতম কারন হচ্ছে পূর্বের কমিটির সক্রিয় নেতা কর্মিদেরকে বাদ দেয়া ও বির্তকিতদের স্থান দেয়া। পরবর্তিতে কাটছাঁট ও সমন্নয় করে আরেকটি কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। সে কমিটিতে কারাকারা আছেন এখনো প্রকাশ হয়নি। বঞ্চিত নেতা কর্মিদের কাছে নতুন কমিটি কতো টুকু গ্রহনযোগ্য হবে এখনো বুঝা যাচ্ছে না।
তবে জেলা কমিটির সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া কিছু নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে। সচ্ছতা ও দলের মঙ্গলের জন্য শুধু কমিটি নয় নেতৃত্বের ও পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমান বিতর্কিত নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলে অনেকে জেলা রাজনীতি থেকে নিজেদেরে গুটিয়ে নেবার কথা বলছেন। দলের এ নেতা বলেন, দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কখনো জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বিতর্কিত ও দলের সাথে বারবার বিরোধিতা করা ব্যক্তিকে জেলা কমিটির সর্বোচ্চ আসনে দায়িত্ব দিতে পারেন না। জেলা কমিটিতে পদ বঞ্চিত সাবেক হয়ে যাওয়া আরেক নেতা বলেন, “যদিও প্রচার করা হয় নেত্রীর নির্দেশে জেলা কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়েছে কিন্তু আমি কিছুতে তা বিশ্বাস করিনা।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “নেত্রী এতো অবিবেচক না যাদের উপর অভিযোগ আছে ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট মিষ্টি বিতরণের তাদের পরিবারের কাউকে যেনে শুনে দলের নেতা বানাতে পারেন।”
তিনি বলেন ১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ততকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ” জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীরের নাম যখন ঘোষনা করেন তখন তিনি বলেন,”নেত্রী আমাকে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি নাম ঘোষানার দায়িত্ব দিয়েছেন। নেত্রী নির্দেশে আমি সভাপতি ও সম্পাদক হিসাবে ২ জনের নাম ঘোষনা করলাম। ” এই নেতা আরো বলেন, এবারের সম্মেলনে কি দেখলাম? প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের কাছে নাম চাইলেন। আহমদ হোসেন পকেট থেকে নাম লিখা কাগজ বের করে দেবার সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমিতো কিছু না আপনিতো সব। আমারতো শুধু নাম পাঠ করার দায়িত্ব।” কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের এ কথায় এটাই ঈঙ্গিত দেয়। জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক নির্ধারণের দায়িত্ব যাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো তারা কোন এক অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হয়েছেন। তা না হলে ৭১ ও ৭৫ সালে যাদের পরিবারের ভুমিকা বিতর্কিত ছিলো তাদেরকে কি ভাবে নেতৃত্বে নিয়ে আসতে পারেন?
এই কমিটির নেতৃত্বের উপর যাদের অনাস্থা সেই সব তৃনমুল নেতাকর্মিদের যুক্তি হচ্ছে, বারবার বিদ্রোহী হয়ে যিনি দলের বিরোধিতা করেছেন। হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করেছেন। নেত্রীর মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন। তিনি কিভাবে পুরুস্কৃত হন? কিভাবে তাকে দলের জেলা নের্তৃত্বের সর্বোচ্চ আসন দেয়া হয়? তার সাথে মিলে এক সময় যারা দলের বিরোধিতা করেছিলেন তারা কি ভাবে? কার আশির্বাদে? জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নেন?
জেলা কমিটির সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম,এনামুল কবিরের সাথে জেলা কমিটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে এই প্রতিবেদকের ফোনে আলাপ হলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদেরকে তৃনমুল নেতাকর্মীদের ক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি ঘোষনা করা হবে। একক কোন পক্ষের কমিটিকে অনুমোদন দেয়া হবে না। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে সামনে নির্বাচন হয়তো এর পূর্বে কমিটির অনুমোদন নাও হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে কমিটির ভবিষত অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২,০৪৯ বার