সুনামগঞ্জ প্:: সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য  ও বিরোধীদলের হুইপ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেছেন, হাওর অধ্যুষিত প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী মেডিকেল কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উপহার দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে সবগুলো প্রতিষ্ঠানই দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা সদরকে বঞ্চিত করে দুই কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে এতগুলো প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ রহস্যজনক। সদরে বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে সুনামগঞ্জের সব মতপথের মানুষ আজ এক মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আমাদের আস্থার জায়গা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি জানাতে এই ট্রাফিক পয়েন্টে আজ সমবেত হয়েছি। হাওরের সমস্ত মানুষের সুবিধার জন্য প্রস্তাবিত বিশ^বিদ্যালয়টি যেন সুনামগঞ্জ সদের স্থাপিত হয়।  মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শন্তিগঞ্জের পরিবর্তে  জেলা সদরে স্থাপনের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলে। রবিবার দুপুরে শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে ‘সুনামগঞ্জবাসীর’ উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।  দাবির সাথে একাত্মতা জানাতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার  হাজারো মানুষ খ- খ- মিছিল নিয়ে যোগ দেন। এক পর্যায়ে মানবন্ধন জনসমাবেশে রূপ নেয়। প্রতিবাদী মানুষের পদভারে ভরে উঠে গোটা ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকা।

পীর মিসবাহ আরো বলেন, সুনামগঞ্জের অধিকার বঞ্চিত মানুষেরা আজ বিক্ষুব্ধ, ব্যতীত। তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমি অতীতে কথা দিয়েছিলাম মানুষের অধিকারে ব্যাপারে জাতীয় সংসদে ও রাজপথে আমি কখনো বোবা হয়ে থাকব না। এই তাগিদ থেকে আমি জেলারবাসীর পক্ষে আজ রাজপথে দাঁড়িয়েছি। আমরা জানি শান্তিগঞ্জের দুই কিলোমিটারের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত মেগা প্রকল্প যদি নিয়ে যাওয়া হয় তবে  শতবর্ষী এই সুনামগঞ্জ শহর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।  তিনি বলেন, মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী আপনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। আপনি শুধু শান্তিগঞ্জের মন্ত্রী নন। আপনি এই সুনামগঞ্জ তথা বাংলাদেশের মন্ত্রী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে সম্মান দিয়েছেন, আমরাও আপনাকে সম্মান করি। প্রধানমন্ত্রী হাওরের মানুষকে ভালবেসে এই সুনামগঞ্জের উন্নয়নে প্রকল্প দেন, যা কোন মন্ত্রী-এমপির দান-অনুদান নয়, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। আপনি আমাদের প্রতি সুবিচার করুন, আমরা আপনাকে সম্মান করবো, স্মরণ রাখব।
পীর মিসবাহ বলেন, যেহেতু হবিগঞ্জ, চাঁদপুরের বিশ^বিদ্যালয় সংশোধন করে সদরে স্থাপন করা হচ্ছে, তাই আমি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম আমাদের বিশ^বিদ্যায়টিও যোগাযোগ সুবিধা দিক থেকে এগিয়ে তাকা সদরে স্থাপিত হয়।  কিন্তু ব্যথিত হৃদয় নিয়ে সংসদ থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন, পরিকল্পনামন্ত্রী বিশ^বিদ্যালয়টি দক্ষিণ সুনামগঞ্জে স্থাপনের জন্য আমাদেরকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছেন। সেইসাথে তিনি শান্তিগঞ্জের কোন মৌজায় সেটি হবে তাও উল্লেখ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য শিক্ষামন্ত্রী আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। 
তিনি বলেন, মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী আপনি একজন সৎ ও সজ্জন মানুষ। এই যে সরকারে এতগুলো প্রতিষ্ঠান শান্তিগঞ্জের দুই কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাকে যারা মৌজা উল্লেখ করে দেয়, কোন মৌজায় কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হবে- সেইসব মৌজায় নতুন করে ক্রয়সূত্রে কারা ভূমির মালিক হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখলে অনেককিছুই আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। পীর মিসবাহ বলেন, টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, বিআরটিএ অফিস কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যুব মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দুটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র মুজিব কেল্লা- সবগুলো প্রতিষ্ঠানই জেলা সদরকে বঞ্চিত করে হয় শান্তিগঞ্জ, না হয় শান্তিগঞ্জে পাশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেকারণে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ আমাদেরক বেছে নিতে হয়েছে- যা কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর পক্ষে-বিপক্ষে নয়, জেলাবাসীর অধিকার আদায়ের পক্ষে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অধিকারের পক্ষে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাব। মানববন্ধনে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, হাওর আন্দোলন নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান সুফিয়ান, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি সাইফুল ইসলাম সমছু, সাবেক প্যানেল ময়ের মনির উদ্দিন মনির, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ জুবের আহমদ অপু, জাপা নেতা আব্দুর রশিদ, মানবাধীকার আন্দোলন  নেতা ফজলুল হক প্রমুখ। -শহীদনূর

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn