সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ের আশা করছেন সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচনের ফলাফল নিজ নিজ পক্ষে আনতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন হেভিওয়েট দুই প্রার্থী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুশলবিনিময়, পথসভা, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। দিচ্ছেন নানারকম প্রতিশ্রুতি। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজর, পাড়া-মহল্লা ও চায়ের দোকানে সাধারণ ভোটারদের মাঝে একটাই আলোচনা, কে হচ্ছেন সংসদ সদস্য। এ নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা।
এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হয়েছেন শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল আমিন চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন, কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব মিজানুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টি মনোনীত কবুতর প্রতীকের মিহির রঞ্জন দাস। এর মধ্যে জয়া সেনগুপ্তা হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এ আসনে গত দুইবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন জয়া সেনগুপ্তা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ফলে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আল আমিন চৌধুরীর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। আসনটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আল আমিন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তার মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশা করছেন তারা।
এ আসনে জয়া সেনগুপ্তার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে জানান তার সমর্থকরা। হেভিওয়েট দুই প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়সহ একাধিক নেতাকর্মী। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অধিকাংশ দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এতে জয়া সেনগুপ্তা রয়েছেন অনেকটা বেকায়দায়।
জানা যায়, রাজনৈতিক সচেতন এলাকা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ-২ দিরাই-শাল্লা আসনে স্বাধীনতা সংগ্রামের পর থেকেই প্রথমে ন্যাপ থেকে এবং পরে আওয়ামী লীগ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মৃত্যুবরণ করলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিরাই শাল্লা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ড. জয়া সেনগুপ্তা নির্বাচিত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, যে এলাকায় যাচ্ছি, নারী-পুরুষ সকলের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এ আসনের ভোটাররা এবার পরিবর্তন চায় বলে জানান তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তা বলেন, আমার স্বামী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এখানে জনপ্রতিনিধি ছিলেন। পরবর্তীতে আমাকে মনোনীত করা হয় এবং এলাকার জনগণ আমার প্রতি আস্থা রাখেন। এবার স্বতন্ত্র হলেও দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গেই আছেন। নির্বাচনে আমাদেরই জয় হবে। নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আল আমিন চৌধুরী বলেন, দিরাই শাল্লা আসনটি রাজনীতির উর্বর ভূমি। এখানে নৌকার ভোট ব্যাংক রয়েছে কিন্তু ব্যাক্তির কোনো ভোট ব্যাংক নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী আমার ভোটে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন না। দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমার বিরোধিতা করছেন, এটা ঠিক। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ আওয়ামী লীগের ভোট নষ্ট করতে পারবেন না । দুই তিনজন দায়িত্বশীল নেতাকর্মী ছাড়া দিরাই ও শাল্লা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। তিনি বলেন, দিরাই শাল্লা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আমার বিশ্বাস নৌকা প্রতীক বিপুল ভোটে জয় লাভ করবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৩৮ বার