সুরমার পানিতে ডুবছে সিলেট মহানগরী
মো. এনামুল কবীর, বিশেষ প্রতিনিধি: সামান্য বৃষ্টিতেই সিলেট মহানগরীর অবস্থা হয় ডুবু ডুবু। এনিয়ে সর্বস্থরের নাগরিকের কত হা-হুতাশ! বর্ষার মওসুমটা নিম্নাঞ্চলের নাগরিকদের দিনরাত আতংকেই কাটে। কখন যে সুরমার তীর ডুবিয়ে পানি উঠে যায় বসত ঘরে! সেই আতংকজনক পরিস্থিতিই এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সুরমা ফুলে ফেঁপে রীতিমতো টইটুম্বর। সিলেট নগরীর নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সেই সাথে ডুবতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল। কোন কোন এলাকায় রাস্তা ডুবিয়ে এখন বসত ঘরেও ঢুকেছে পানি। সিটি কর্পোরেশন থেকে এখনও সাহায্য-সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া না হলেও প্রস্তুতি আছে তাদের। আর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর কাউন্সিলাররা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতন নাগরিকদের নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। পানি আরও বাড়তে পারে। তখন স্কুলগুলোতেই ভূক্তভোগীদের আশ্রয় দিতে হবে।
ইতিমধ্যে সিলেট সিটিকর্পোরেশনের ১১, ১২, ২৩, ২৪ নং ওয়ার্ডের অনেক এলাকায় সুরমার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ২৪ নং ওয়ার্ডের কুশিঘাট, নয়াগাঁও, তেরোরতন, মিরাপাড়াসহ আরও কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়িতেও প্রবেশ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবাই। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্দিন চরমে। তারা ব্যবসা করতে পারছেননা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বসতঘরেও পানি। একই অবস্থা ২৩নং ওয়ার্ডের মাছিমপুর এবং দেওয়ানবাগ এলাকায়। ১২নং ওয়ার্ডের কুয়ারপার, আখড়া এলাকায়ও পানি। এছাড়া শেখঘাট, কলাপাড়া এলাকায়ও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উজানে প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত। আর তাই সুরমার পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে দু’য়েকদিনের মধ্যে আরও নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করবে। তখন পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অবশ্য প্রস্তুত সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মোশতাক আহমদ জানিয়েছেন, আজও (সোমবার) এ ব্যাপারে মেয়র সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। বৃষ্টি থামলে পানি কমতে পারে বলে আমরা আশাবাদী। তার ওয়ার্ডের যেসব এলাকায় পানি ঢুকেছে সেগুলোর নাম উলেখ করে তিনি বলেন, আমি দেখে এসেছি এবং সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি।
২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সোহেল আহমদ রিপন বলেছেন, অনেক নিচু এলাকার বাসা-বাড়ীতে পানি উঠলেও এখনও ঘর ছেড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। তবে অনেকেই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পানি আরও বাড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুলগুলোতে ভূক্তভোগীদের আশ্রয় দেওয়ার মানসীক প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ত্রাণ বরাদ্ধের ব্যাপারে এ কাউন্সিলার বলেন, এখনও তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে যতটুকু সম্ভব সাহায্য-সহায়তা করছি। এলাকার সচেতন মানুষদের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে উদ্বুদ্ধ করছি।
১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সিকন্দর আলী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। আমরা সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি। যদিও সিটি কর্পোরেশন থেকে এখনও কোন ত্রাণ বরাদ্দ হয়নি, তবে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুলগুলোকেই আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হবে।