সরকারি সহায়তা প্রদানের জন্য তৈরি করা হতদরিদ্রের তালিকায় ক্ষমতাসীন দলের কোটিপতি এক নেতার স্ত্রী, কন্যা, ভাই, বোন, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী, ভাইপো, বোনের দেবরসহ ১৩ স্বজনের নাম পাওয়া গেছে। করোনা ঠেকাতে গৃহীত পদক্ষেপে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্যে ওএমএসে চাল বরাদ্দে দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার উদ্যোগে দুঃস্থ, হতদরিদ্র ও অসহায়দের এই তালিকা তৈরি করা হয়। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইস্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মো. শাহ আলমকে ‘কারণ দর্শাতে নোটিশ’ পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসক। সরকারি চাল বিতরণের ওএমএস-এর ডিলার সরকারি দলের এই নেতা জেলা শহরের ‘হ্যালো সুইট মিট’ নামে অভিজাত মিষ্টির দোকানের মালিক। তিনি জেলা রেস্তোরাঁ সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন সরকারি দলের এ নেতা ‘রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এ জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুক ও ভবঘুরেসহ হতদরিদ্র এবং নিম্নআয়ের মানুষ, যারা কোনো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত নয়; তাদের জন্য বিশেষ ওএমএস সুবিধা চালু করা হয়েছে। এই সুবিধায় একজন ওএমএস কার্ডধারী প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল পাবেন। সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এলাকায় নয় হাজার ৬০০ জনকে দেয়া হচ্ছে ওএমএস কার্ড।

কার্ডের জন্য প্রথম দফায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এ তালিকা করা হয়েছে। প্রথম দফার তালিকা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল পেয়েছেন তারা। তবে তালিকা নিয়ে প্রথম থেকেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলমের পরিবার এবং স্বজনদের নাম উঠেছে ওএমএস কার্ডের তালিকায়। তালিকার ১২ নম্বরে মেয়ে আফরোজা এবং ১৬ নম্বরে রয়েছেন স্ত্রী মমতাজ আলমের নাম। এছাড়া শাহ আলমের তিন ভাই-বোন মো. সেলিম, মো. আলমগীর ও শামসুন্নাহারের নাম রয়েছে ৮, ৯ ও ২৭ নম্বর ক্রমিকে। নেতার শ্যালক মো. তাজুল ইসলামে ও তার স্ত্রী আসমা ইসলামের নাম আছে যথাক্রমে ৩ ও ৫ নম্বরে। আরেক শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলামের নাম ১০ নম্বরে। প্রবাসী শ্যালক শফিকুল ইসলামের নামও রয়েছে তালিকার ১৩ নম্বরে। ওই নেতার বোনের তিন দেবর মতিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান, লুৎফুর রহমানের নাম তালিকার ৭২, ৭৩ ও ৭৪ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমের এই স্বজনরা সবাই স্বচ্ছল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানিয়েছেন, গরিব মানুষের এ তালিকায় এ পর্যন্ত মো. শাহ আলমের পরিবারের ১৩টি নামসহ ৯১টি ‘বিতর্কিত নাম’ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, তালিকা যাচাই-বাছাই করে সামর্থ্যবান যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের বাদ দেয়ার জন্য আমরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। ইতোমধ্যে ওএমএস কমিটির সভায় ৯১ জন সামর্থ্যবানকে চিহ্নিত করে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ওএমএস তালিকায় তার পরিবার-পরিজনের নাম থাকার কারণে জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে মো. শাহ আলমকে শোকজ (দর্শানোর নেটিশ) করেছেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে তাকে উত্তর দিতে বলা হয়েছে। উত্তর সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মো. শাহ আলমের কাছে তালিকায় পরিবারের সদস্যদের নাম থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোনো কার্ড বণ্টন করিনি। আমি হলাম ডিলার। ডিলার কোনো কার্ড দিতে পারে না।এ বিষয়টা কাউন্সিলর বলতে পারবে। এই তালিকা পৌরসভা থেকে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পাঁচতলা বাড়ির মালিক শাহ আলম গরিবের ওএমএস কার্ডে স্ত্রী-সন্তান এবং সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। এ ঘটনায় সরকার যে সুবিধা দিচ্ছে; সেটি থেকে গরিব-অসহায়রা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। এবিষয়ে জানতে চাইল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতার পরিবার ও স্বজনদের নাম ওঠার বিষয়টি আমি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn