হত্যার আগে-পরে নয়নের সঙ্গে মিন্নির কথা হয় ১৩বার
মিন্নির আইনজীবী এ সময় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে ভাইরাল হওয়া সিসি ফুটেজের ১১ খণ্ডের ডিস্ক আদালতে দাখিল করেন। তিনি আদালতকে বলেন, এসব সিসি ক্যামেরা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও ভিডিওগুলো কীভাবে বাইরে প্রকাশ হলো? এটাও কিন্তু একটা অপরাধ। পরে এ আইনজীবী ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজও আদালতে দাখিল করেন। মিন্নির আইনজীবী বলেন, মিন্নি বিধবা ও একজন ১৯ বছর বয়সী নারী। তাকে জামিন দিলে সে পালিয়ে যাবে না। তাই আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছি কিন্তু আমরা এখনও তা হাতে পাইনি। একপর্যায়ে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (ইন্সপেক্টর) হুমায়ন কবিরের কাছে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের প্রায় শেষপর্যায়ে আছে। আজ বিচারিক আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন নির্ধারণ ছিল। কিন্তু মহামান্য আদালতে (হাইকোর্ট) থাকতে হয়েছে বিধায় প্রতিবেদন দাখিল করতে পারিনি, এখানে (হাইকোর্টে) আছি। তখন হাইকোর্ট বলেন, সব মহামান্য আদালতেরই দোষ? এ মামলায় কি নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করেছিলেন?
জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আমি গত ৩০ মে বরগুনায় নিযুক্ত হই। এরপর অন্য মামলায় নয়ন বন্ডকে আসামি হিসেবে পাই। রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে নয়নকে গ্রেফতার করতে যাই। কিন্তু গ্রেফতার করতে পারিনি। পাল্টাপাল্টি বন্ধুকযুদ্ধে সে মারা যায়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, নয়নের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্ক ছিল, এটা সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছে। মামলাটি অনেক স্পর্শকাতর এবং জনমনে বেশ আগ্রহ কাজ করছে। মামলার প্রতিবেদন তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, কলেজের সামনে ওই ঘটনার পূর্বে নয়নকে মিন্নি আটবার ফোন করে কথা বলেছিল। ঘটনার পর পাঁচবার নয়নকে ফোন করে কথা বলে। মোবাইল অরিজিনেটেড কল এবং মোবাইল টার্মিনেটেড কল লিস্টে তা-ই উঠে এসেছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই রিফাত হাসপাতালে গেলেও মিন্নি সেখানে ছিল। এসব কি তাকে নিষ্পাপ প্রমাণে করে? আদালত বলেন, এখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত আছেন। তারা ফোনের কথোপকথন তুলে দেখতে পারেন, কী কী কথা হয়েছে? রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তখন বলেন, সে (মিন্নি) এ ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী। তার বয়স ১৯ এবং সে নারী, এসব বলে জামিনের কোনো সুযোগ নেই। তাকে জামিন না দিয়ে মামলার ন্যায়বিচারের স্বার্থে জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করা হোক।
মিন্নির আইনজীবী এ সময় বলেন, একটি মানুষের ফোনে প্রতিদিন অনেক কল আসতে পারে। এ সময় একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য তুলে ধরে বলেন, পত্রিকায় তথ্য আছে ওই ঘটনার আগে ৭৭বার পুলিশের সঙ্গে নয়নের কথা হয়েছে। বরগুনা থানার এসআই আসাদুজ্জামানের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আপনারা মিন্নিকে জামিন দিন, প্রয়োজনে আমি তার গ্যারান্টার থাকব। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, নয়ন তার একটি পরিত্যক্ত মোটরসাইকেল আটকের বিষয়ে ওই এসআই’র সঙ্গে যোগাযোগ করত। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের অপর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আদালতকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ মামলার তদন্ত প্রায় শেষপর্যায়ে। তার জামিনের পক্ষে এখানে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। তাই তাকে জামিন দিলে তদন্তে কোনো হস্তক্ষেপ হবে না। তার জামিনের সঙ্গে তদন্তের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই জামিন দেয়া আপনাদের বিবেচনাধীন বিষয়। আদালত মিন্নির জামিনের বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ২টায় আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।