হুমকির মুখে শনি ও মাটিয়াইন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ
সাজ্জাদ হোসেন শাহ্-
টানা বর্ষণে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের তিনটি ও মাটিয়াইন হাওরের একটি ফসলরক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়াও বালিজুরী ইউনিয়নের আঙ্গারুলী হাওরের বাঁধও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এখানেও স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে বাঁধ মেরামতের কাজ। এ অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে ১৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসল। বাঁধগুলি হলো- তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সাহেবনগর, লালুর গোয়ালা, ৫নং উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের দরুন্দ ও পার্শ্ববর্তী জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের নান্টুখালী। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া ও সময়মতো বাঁধ নির্মাণ না-করায় বাঁধগুলি এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
শনিবার (০১ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সাহেবনগর বাঁধটিতে কোন কাজ না-করার কারণে নদীর পানি উপচে শুক্রবার (৩১ মার্চ) ভোর থেকে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এ বাঁধের ঠিকাদার সুনামগঞ্জের পার্থ রায় তিনি কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে কাজ করার দায়িত্ব দেন। ঐ ইউপি সদস্য কয়েকদিন কাজ করিয়ে পরে আর কোন কাজ করাননি। পরে ঠিকাদার পানি আসতে বিলম্ব হওয়ায় বাঁধে আর কোন মাটির কাজ করাননি।
শুক্রবার ভোরে হাওরে পানি প্রবেশ করলে স্থানীয় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি ভরাট করে কোন রকমে বাঁধটি রক্ষা করেন। অপরদিকে, নান্টুখালি বাঁধটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেই সাথে পেলাসাইটিংয়ের জন্য বস্তা সেটিং না-থাকায় বাঁধটি রয়েছে সম্পূর্ণ হুমকির মুখে। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে হাওরের ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন সুহেল বলেন- “হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম হওয়ায় আমাদের একমাত্র বোরো জমির ফসল এখন চোখের সামনেই তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুরহান উদ্দিন বলেন- “আমি সরেজমিনে গিয়ে বাঁধগুলি দেখেছি। বাঁধগুলিতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় বাঁধগুলি এখন রয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধগুলি মেরামত করা প্রয়োজন।”
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের ১, ২, ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা সেলিনা আবেদীন বলেন- আমি বাঁধ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম, বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন- “গতকাল (শুক্রবার) থেকে আজ শনিবার এখন পর্যন্ত বাঁধেই আছি স্থানীয় এলাকাবাসীকে নিয়ে কিছুটা মেরামত করতে পেরেছি। ঠিকাদারদের বলেছি দ্রুত বাঁধ মেরামত করার জন্য।”
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন- “তিনটি বাঁধেই স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত কাজ চলছে। তবে পুরোপুরি ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে হাওরের ফসল। এছাড়াও মাটিয়াইন হাওরের দরুন্দ বাঁধটি রয়েছে হুমকির মুখে। আজ শনিবার সকালে সেখানে প্রায় দুইশত লোক পাঠানো হয়েছে বাঁধ মেরামত করার জন্য।” তিনি আরো বলেন- “ঠিকাদাররা কেউ এখন সামনে আসছেন না। দূর থেকে সবাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে- বাঁধ মেরামতের জন্য কিছু অর্থ দিবে। আমরা উপজেলা প্রসাশনসহ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাঁধগুলি রক্ষার জন্য।”