অনলাইনে এখন আর কেবল আড্ডা হয়না, কাজে লাগে পড়াশোনাতেও। জ্ঞান আদান-প্রদানের পুরনো পথটা আর আগের মত নেই, এখন ক্লাসের নোট খাতা, বইপত্র নিয়ে ছুটতে হয়না বন্ধুর বাড়িতে। বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপে কিংবা চ্যাটেই চোখের পলকে হয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা আদানপ্রদান। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ শাহী আফিন্দী। তিনি অনলাইনে নোট আদানপ্রদান করতে অভ্যস্ত। শাহী বলেন, অনলাইন হতে পারে পড়াশোনার জন্য অসাধারণ জায়গা। ধরা যাক একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে আমাদের ডিপার্টমেন্টের। পুরো ডিপার্টমেন্টের সব পড়াশোনার আপডেট সেখানে। বন্ধুরা সবাই মিলে শেয়ার করছে। আবার কারো কোন প্রয়োজনে দরকার হলেও হাজির হচ্ছে সবাই মিলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজিয়া হক ফারিন বললেন, আমরা ফেসবুকে মেসেজে ক্লাসের সময়সূচী, এসাইনমেন্ট জমার তারিখ, রুটিনসহ সবরকমের তথ্য আদানপ্রদান করি।প্রায় একইরকম কথা বললেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী রুবেল। যেমন ধরা যাক, আগামী সপ্তাহে ক্লাসে তাদের গ্রুপ প্রেজেন্টেশন আছে। কয়েকজন বন্ধু মিলে একসঙ্গে কাজ। বাসায় বসেই ফেসবুকে গ্রুপ মেসেজের মাধ্যমে তারা আলাপ-আলোচনা করছেন। যার যার অংশ আলোচনা করে সেখানেই নির্ধারণ করা হয়ে যাচ্ছে। এতে বেঁচে যাচ্ছে সময়ও।এরকমভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইট ফেসবুককে হাজারো শিক্ষার্থী পড়াশোনা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করছে। অনলাইন জগত এখন আর নিছক খেয়ালি আড্ডায় সীমাবদ্ধ নেই। তাছাড়া, ক্লাসের সব বন্ধু-সহপাঠী সবসময় একসঙ্গে হওয়াও সম্ভব হয়না। অথচ গ্রুপ স্টাডি বা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করা দরকার। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। দেখা গেল যে, হঠাৎ পরীক্ষার আগের রাতে কারো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের নোটের প্রয়োজন হল। এখন উপায়? মুহূর্তের মাঝেই অন্য এক বন্ধু তা ছবি তুলে পাঠিয়ে দিল মেসেঞ্জারে। ব্যস, ঝামেলা শেষ, চিন্তা নেই।ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পুনম ঘোষ বললেন, সবসময় ক্লাসে মনোযোগী থাকেনা সবাই। পরে দেখা যায় যে, কী হোমওয়ার্ক দেয়া হল তাই মনে নেই। তখন ভরসা ফেসবুকে ক্লাসের গ্রুপ। সেখানে একটা মেসেজেই মিলে যাচ্ছে উত্তর।

তবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই যে সামাজিক যোগাযোগের সাইটকে পড়াশোনার কাজে লাগান, তা নয়। পিছিয়ে নেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। তাপসী দে প্রাপ্তি এবার হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এইসময়টায় নিয়মিত পড়াশোনার ফাঁকেফাঁকে ফেসবুকে ঢুঁ মেরে দেখে নিচ্ছেন, বন্ধুরা কে কখন কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছে। কখনো কোনো কঠিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেয়ে তা ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করলে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিচ্ছেন কেউ না কেউ।জুবায়ের আহম্মেদ সামনে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। ঢাকায় কোচিং করছেন। ফেসবুকে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজির প্রশ্ন আদানপ্রদান করেন, একে অন্যকে প্রশ্ন করেন।শুধু এমনটাই নয়, সামাজিক যোগাযোগের সাইটে আজকাল অনেকেই শিক্ষামূলক ভিডিও শেয়ার করেন। একজন গণিতের শিক্ষক শেয়ার করতে পারেন কোন একটা কঠিন চ্যাপ্টারের উপর তার নেয়া ক্লাস। একইকাজ করতে পারেন অন্যরাও। এভাবে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে। তাছাড়া পড়ালেখার কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করাটাও অনেকের কাছে আকর্ষণীয়।

এক গবেষণায় জানা গেছে, ফেসবুকে যুক্ত শিক্ষার্থীদের নব্বুইভাগই কোনো না কোনোভাবে তাদের অ্যাকাডেমিক কাজের সুবিধা নিচ্ছে ফেসবুক থেকে। যেকোন সময় গ্রুপ স্টাডির সুযোগ, ছবিসহ আলোচনা, আইডিয়া শেয়ারসহ নানা কাজে লাগছে। তবে নেতিবাচক দিক যে নেই, তা কিন্তু নয়। অনেকসময়ই অপ্রাসঙ্গিক আলোচনায় মনোযোগ নষ্ট হয়। অনলাইনের বিশাল জগতে অবাধে বিচরণ করার স্বাধীনতা কখনো কখনো অমনোযোগী করে তোলে, এতে বরং লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশি। তাই, নেতিবাচক দিকটা বাদ দিয়ে অনলাইনকে যদি ইতিবাচক কাজে লাগানো যায়, তবে এটা হবে পড়াশোনার কাজে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn