অনুপস্থিত থাকলেও বেতন নিচ্ছেন ভাটিপাড়া মাদ্রাসা সুপার ও তার স্ত্রী
দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া হায়দরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। মাদ্রাসা সুপার ও তার স্ত্রী সহকারি শিক্ষিকা রিপা আক্তার চৌধুরী মাদ্রাসায় উপস্থিত না থাকলেও অভিনব কায়দায় নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি থেকে মাদ্রাসায় আসতে বার বার তাগাদা দেয়া হলেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না এই দুই শিক্ষক। মাদ্রাসা প্রধান ও একমাত্র মহিলা শিক্ষিকার বেপরোয়া দায়িত্বহীনতা, দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের যথাযথ নজরদারি না থাকার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে চার মাস অফিসিয়াল কাজে প্রতিষ্ঠানের বাহিরে ছিলেন বলে দাবি করছেন সুপার মাওলানা কামরুল ইসলাম।
জানা যায়- মাদ্রাসার সুপার মাওলানা কামরুল ইসলাম বিগত ৪ মাস ও তার স্ত্রী সহকারি শিক্ষিকা রিপা আক্তার চৌধুরী ৭ মাস যাবত মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। ৬ মার্চ মাদ্রাসার নতুন পরিচালনা কমিটি গঠনকালে মাদ্রাসায় আসলেও এর পর তাকে মাদ্রাসায় আর আসতে দেখা যায়নি বলে জানান মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে- মাদ্রাসা সুপারের স্ত্রী রিপা আক্তার সুপারের গোপন কারসাজিতে অফিস সহকারি হিসেবে মাদ্রাসায় নিয়োগ পান। চাকরীর দুই বছর পার হলেও বিষটি গোপন থাকে এলাকাবাসীর কাছে। কোন দায়িত্ব পালন না করেই বেতন ভাতা উত্তোলন করতেন রিপা। অফিস সহকারি থাকাকালীন কোন দায়িত্ব পালন না করলেও সুপারের একক নৈপুণ্যে মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পান রিপা। নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোন তথ্য জানেন না এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পদোন্নতি হওয়ার পর মাদ্রাসায় মাঝে মধ্যে আসতেন রিপা।
জানা যায়, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাটিপাড়া হায়দরিয়া মাদ্রাসাটি। ১৯৯৫ সালে সুপার হিসেবে নিয়োগ পান মাওলানা কামরুল ইসলাম। নিয়োগের প্রথম কয়েক বছর দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলেও ধীরে ধীরে তার বেপরোয়া আচরণে মাদ্রাসাটির দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক ভিত ভেঙ্গে পরে। কমতে থাকে জেডেসি ও দাখিল পরীক্ষার পাশের হার। প্রতিষ্ঠানের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গত দাখিল পরীক্ষায় মাদ্রাসার পাশের হার ৫৪% এ নেমে আসে। যা জেলার মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে নিম্নতম অবস্থান। মাদ্রাসার এমন ফলাফলে সুপারের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
এদিকে মাদ্রাসার দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজে সুপারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলেছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকরা। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা গোলাম হায়দার কর্তৃক দেয়া প্রায় ৯ একর জমি থেকে প্রাপ্ত আয় ও মাদ্রাসা তহবিলের কোন হিসাব সুপার দেন না বলে জানান তারা। মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্র উপজেলা শহর দিরাইয়ে নিজ বাসায় রাখেন সুপার কামরুল ইসলাম। ৩৫০ শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন, ভর্তি, সেশন ফিসহ প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদার আয় ব্যয়ের হিসাব দেন না এই শিক্ষক। মাসের পর মাস প্রতিষ্ঠানে না আসলেও সহকারি শিক্ষকদের সাথে বেতন ভাতা ঠিকই তুলতে দেখা যায় এই শিক্ষককে। নবগঠিত পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিগত দুই মাসের বেতন উত্তোলনের ছাড়পত্রে স্বাক্ষর না দিলেও সাবেক সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরে অভিনব কায়দায় নিজের ও স্ত্রী রিপার বেতন ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন সুপার কামরুল। মাদ্রাসা সুপার কামরুল ইসলামের নেতৃতত্বে উপবৃত্তি দেয়ার কথা বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩শ টাকা করে হাতিয়ে নেন।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন তালুকদার বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সুপারের অনিয়ম দুর্নীতি দেখে আসছি। বিগত চার যাবৎ তিনি মাদ্রাসায় আসেন নি। শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর নেই। আমরা বার বার তাকে মাদ্রাসায় আসার জন্যে দিলেও তিনি না এসে বেতনের ছাড়পত্রে স্বাক্ষর নিতে আমার কাছে আসেন। আমি স্বাক্ষর দেইনি কিন্তু নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর নিয়ে ঠিকই টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। এদিকে, মাদ্রাসা সুপারকে মাদ্রাসার যাবতীয় পাওনা,রেকর্ডপত্র ও আয়ব্যায়ের হিসাব নিকাশ একমাসের মধ্যে পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে এবং সুপার মাওলানা কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রিপা আক্তার চৌধুরীর বেতন স্থগিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান নবগঠিত কমিটির সদস্যরা। দিরাই উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষা অফিসের নজরদারি থাকলেও মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসির, সুপারকে কারণ দর্শানোর পত্র জারি করার পরামর্শ দিয়েছি। পরে বিহিত ব্যবস্থা নেয়া হবে।