অভিযোগ দায়েরের এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও সুনামগঞ্জের আমপাড়া বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। জানা যায়,সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের আমপাড়া বাজারে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গা অবৈধ দখল করে জোরপূর্বক দোকানঘর নির্মাণের দায়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় স্থানীয় ভূমিখেকো আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে। আবুল কাশেম সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের উমেদ আলী মোল্লার পুত্র। অভিযোগে প্রকাশ,আমপাড়া বাজারটির মেয়াদোত্তীর্ণ ১১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক আমপাড়া গ্রামের আলী মিয়ার পুত্র ও মীরেরচর ইয়াকুবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রহিম ও তার সহযোগীরা  তাদের ব্যাক্তিগত সিদ্বান্ত মতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গার উপর  স্থাপিত আমপাড়া খোলা বাজার (তোহা বাজার) এর জায়গায় ১টি পাকা দোকানভিটা তৈরীর জন্য বেআইনীভাবে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গা বিক্রয় করেছেন। বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহিম এই জালিয়াতি প্রতারনার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন বাজার কমিটির অপরাপর ৭ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। বাজার কমিটির ক্যাশিয়ার রমজান আলী ও সদস্য ডাঃ আবুল খায়ের এর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন,বাজারের কোন জায়গা বা ভিট বিক্রয় বা দখল সমজিয়ে দেয়ার মর্মে বাজার কমিটির কোন সদস্যরা আদৌ অবহিত নন। কমিটির সভায় এ ধরনের কোন সিদ্বান্ত হয়েছে বলেও আমাদের জানা নেই। আমপাড়া বাজার গত ৪০ বছরের প্রতিষ্ঠিত একটা খোলা বাজার। এই বাজারের কোন জায়গা বিক্রয় বা দখল পজেশন হস্তান্তরের এখতিয়ার কোন বাজার কমিটি বা ইউনিয়ন পরিষদের নেই। লোভের বশবর্তী বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ যদি সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গা বিশেষ মহলের কাছে হস্তান্তর করেন তাহলে এর জন্য সরকারের কাছে তারাই জবাবদিহী করবেন। আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। জানা যায়,গত বছরের মার্চ মাসে এই বাজারটি অবৈধ দখলমুক্ত রাখার জন্য জেলা প্রশাসক,সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ব্যাবসায়ী কফিল উদ্দিন,মোঃ আবুল হোসেন,মোঃ মহিনুল ইসলাম,ফজলুল হক,মাসুক মিয়া,আব্দুল হেকিম,আফাজ উল্লাহ,আফাজ উল্লা,আব্দুল মোতালিব ও জিতু মিয়াসহ বাজারের আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়,সদর উপজেলার ফেটারগাও মৌজার ৪৫ নং জেএলস্থিত ১ নং খতিয়ানের ১৫৫৪ নং দাগের প্রায় ২১ শতক জায়গার মধ্যে অবস্থিত আমপাড়া বাজার পেরিফেরি আওতাধীন তোহা বাজার অংশে এলাকার কতিপয় ব্যাক্তিরা সরকারের ভূমিতে দখল পজিশন বিক্রি ও হস্তান্তরের মাধ্যমে স্থায়ী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মান করিতেছে। এতে করে সরকারের ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে এবং ক্ষুদ্র ও স্থায়ী ব্যাবসায়ীসহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাজারটি। আরো জানা যায়,গত ১৩/১০/২০১৪ ইং তারিখে ২২৬৩ (৮) নং স্মারকের আদেশ মোতাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নির্দেশে ৯/১১/২০১৪ ইং তারিখে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ মনির হোসেন সরজমিন তদন্তক্রমে আমপাড়া বাজারের জায়গা বাংলাদেশ সরকারের নামে রেকর্ডভূক্ত বলে বর্ণিত বাজারটি পেরিফেরী (খোলাবাজার) অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর থেকেই ভূমিদস্যুরা বাজারের জায়গা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবরে অভিযোগ দায়েরের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় জনমনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় রাজানগর গ্রামের মানবাধিকার কর্মী  মোঃ আবুল হোসেন বলেন,আমি গত ৮/৩/২০১৬ইং তারিখে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ দাখিল করি। আমার অভিযোগের তদন্ত হলেও আজোবদি তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোকশেদ আলী বলেন, আমি জানি আব্দুর রহিমগং বিদ্যালয়ের জায়গা জোরপূর্বক দখল করেছে। তারা যে বাজারের ভিটেরও অবৈধ দখলদার বা আমি নিজে যে পদাধিকার বলে বাজার কমিটির সভাপতি সে ব্যাপারে আমার কিছু জানা ছিলনা। আমি খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবো। অবিলম্বে ভূমিখেকো আব্দুর রহিম ও আবুল কাশেম গংদের কবল থেকে বাজারটি রক্ষা ও তাদের স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার দাবী স্থানীয় জনসাধারনের প্রানের দাবীতে পরিণত হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn