সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে জামাত নেতার হোটেল উদ্বোধনের পর এবার নতুন করে অভিযোগ উঠেছে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীর সাথে এক মঞ্চে অবস্থানের। থানা পুলিশ ও এক উপমন্ত্রির উপস্থিতিতে থানা চত্বরে ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে মঞ্চে নিয়ে এমপি রতন সমাবেশ করেছেন। একজন আইন প্রণেতা হয়ে পলাতক আসামীকে নিয়ে তিনি কি ভাবে সমাবেশ করেন তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার জামায়াত নেতার মালিকানাধীন বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল উদ্বোধন করে দলীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি সমালোচিত হন। বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়ে হোটেল উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে তিনি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমানের আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারীদের সঙ্গে অনেকটা তামাশাই করছেন। ফের নতুন করে বিতর্ক জন্ম দিয়ে তিনি সমালোচিত হলেন। ধর্মপাশার মধ্যনগর থানা ভবন চত্বরে শনিবার বিকেলে থানা আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখেন আদালত কর্তৃত চেক ডিজওনার মামলার ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী এক সময়ে মধ্যনগর থানা বিএনপির কৃষক দলের সভাপতি বর্তমানে এমপি রতনের ঘনিষ্ট বন্ধু ও আ’লীগ সদস্য অমরেশ চৌধুরী। তিনি মধ্যনগর থানা সদরের প্রয়াত অনন্ত চৌধুরীর ছেলে।’
মামলার বাদী ও মামলার পরিচালনাকারী আইনজীবীর সুত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মুক্তারপাড়ার মৃত বাহা উদ্দিনের ছেলে ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিনের নিকট থেকে ২০১৬ সালে কয়লা-ধানের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কথা বলে একই জেলার মধ্যনগরের প্রয়াত অনন্ত চৌধুরীর ছেলে অমরেশ চৌধুরী ১৩ লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে অমরেশ চৌধুরী সুনামগঞ্জ প্রাইম ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবের অনুকুলে ৭ এপ্রিল ২০১৬ সালে ১৩ লাখ টাকার চেক প্রদান করলে ওই টাকা ব্যাংকে নগদায়ন না হওয়ায় তিনি সুনামগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করেন। যা দায়রা মামলা নং ১৯১/২০১৭ ইং। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর প্রতারণার দায়ে অমরেশ চৌধুরীকে সুনামগঞ্জ জেলা যুগ্ন জজ (প্রথম) আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ ও ৬ মাসের করাদন্ড’র রায় প্রদান করেন। এরপর আদালত থেকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় হয়ে সংশ্লিস্ট থানায় অমরেশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রেরণ করা হয়।
মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন শনিবার রাতে বললেন, অমরেশের বিরুদ্বে জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়েরের পরই সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় ও সাজাপ্রদানের পর যুগ্ন জেলা জজ (প্রথম আদালত) থেকে পুন:রায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় ও মধ্যনগর থানাতেও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পর তিনি থানা পুলিশের নিকট ফেরার হলেও সুনামগঞ্জ -১ আসনের শাসক দল আওয়ামীলীগের দলীয় সাংসদ এমপি রতনের ঘনিষ্ট জন ও বন্ধু হওয়ায়র সুবাধে নির্বাচনী এলাকাতে প্রায়ই থানা পুলিশ ও এমপির উপস্থিতিতে তিনি সরব পদচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাকে পুলিশ গ্রেফতার করছেন না। ’
এদিকে পুলিশের চোখে ফেরার হলেও শনিবার বিকেল চারটার দিকে মধ্যনগর থানা আ’লীগের উদ্যোগে খোদ থানা চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসবাবে বক্তব্যও রাখেন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী অমরেশ চৌধুরী। ওই সমাবেশে গিয়াস উদ্দিন নুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি সহ দলীয় নেতাকর্মীগণ।’
এদিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামী শুধু বক্তব্য দিয়েই ক্ষ্যান্ত থাকেননি সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্য করতে ও থানা পুলিশকে বিতর্কিত করতে সমাবেশের পুর্বে থানা ভবনের ভেতরে বসে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সেলফি তুললে সেই সেলফি দলীয় নেতাকর্মীরাই বিকেলে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অমরেশ চৌধুরীর সাথে শনিবার সন্ধায় যোগাযোগ করা হলে তিনি সাজাপ্রাপ্ত ও অর্থদন্ডের বিষয়টি স্বীকার করে বললেন, আমি আপিল করেছি। কোথায় কোন আদালতে কবে আপিল করেছেন জানতে চাইলে তিনি কোন রকম সদুক্তর না দিয়ে এ প্রতিবেদকের নিকট নিজেকে এমপি রতনের ঘনিষ্টজন ও বন্ধু পরিচয় দিয়ে আরো বললেন ‘ভাই আপাতত এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করবেন না।’
মধ্যনগর থানা আওয়ামলীগের তুণমুলের সদস্য ও প্রবীণ আ’লীগ নেতা বাবু নিক্সন রায় ও নরেদ্র পাল শনিবার রাতে বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী থানা পুলিশের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে আইনের প্রতি আদালতের প্রতিবৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে নিজের ক্ষমতার জানান দিয়েছেন। পাশাপাশি থানা পুলিশেকে যেমন জনগণের নিকট বিতর্কে ফেলৈছেন তেমনি একজন আইন প্রণেতা হিসাবে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতর এমপিরও ভাবমুর্তি ক্ষুণ্য করেছেন অমরেশ চৌধুরী। মধ্যনগর থানার ওসি সেলিম নেওয়াজ শনিবার রাতে বলেন, থানা চত্বরেই সমাবেশ হয়েছে , সমাবেশে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকার ও ধর্মপাশা সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের সহ আমি নিজেও ছিলাম। কিন্তু অবরেশ চৌধুরীর নামে থানায় কোন গ্রেফতারী পরোয়ানা নেই কিংবা উনার সাজাপ্রাপ্ত অর্থদন্ড হওয়ার বিষয়টিও আমার জানা নেই।’
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল্লাহ বললেন, অমরেশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে কীনা তা এই মুহুর্তে খোঁজ না নিয়ে বলা সম্ভব হচ্ছেনা। পরে খোঁজ নিয়ে জানাব। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতের সাবেক এপিপি অ্যাডভোকেট আবদুল আজাদ রুমান শনিবার রাতে বললেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করা, সভা সমাবেশে থানা পুলিশের সামনেই উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করাটা আইন পরিপন্থি কাজ, এটিও আরেক ধরণের অপরাধ, এর দায় পুলিশ প্রশাসনও এড়াতে পারেন না।’ সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্যযে, বৃহস্পতিবার জামায়াত নেতার মালিকানাধীন বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল উদ্বোধন করে দলীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সাংসদ রতন সমালোচিত হন। নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধার এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি তার কয়েকজন অনুসারী ও দলের সুবিধাভোগীদের নিয়ে এক সময়ের সিলেট জেলা জামায়াতের সহকারী রোকন ও বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সক্রিয় জামায়াত নেতা মাওলানা শামছুজ্জামানের মালিকানাধীন তাহিরপুর উপজেলা সদরে পাঁচতলা বিশষ্টি শাহজালাল টাওয়ারে হোটেল টাঙ্গুয়া ইন উদ্বোধন করেন। জামায়াত নেতা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও তার ভাই সিলেট জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ও সুনামগঞ্জ -১ আসনে জামায়াত-বিএনপির সমর্থন নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান হোটেল উদ্বোধনের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য রতন এমপির পাশেই ছিলেন।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য রতন এমপি অনেকটা ‘তামাশা’ করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে আমার ও দলীয় নেতাকর্মী অনেকেরই আমন্ত্রন ছিল। আমরা তা বর্জন করেছি। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাছুর রহমান ও সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সুষেণ বর্মন ও সাধারন সম্পাদক ইমরান হোসেন বিপক এর তীব্র নিন্দা জানান। জামায়াত নেতা মাও.শামছুজ্জামানের সহোদর অ্যাডভোকেট নুরম্নজ্জামানের বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে কয়েকদফা মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি তা রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া যায়নি। সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ বৃহস্পতিবার রাতে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে গিয়ে বললেন, আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি। তাহিরপুর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁন বললেন, যুবলীগ নেতা আবুল খয়ের হোটেলে আমারদেরকে আপ্যায়নের জন্য নিয়ে গেছেন। উদ্ভোধনের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তাছাড়া আমি অনুষ্ঠানে কাউকে নিয়ে যাইনি।সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জোম হোসেন রতন এমপির বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার রাত ৮.২০ মিনিটে তিনি বলেন, এটি যে জামায়াত নেতার মালিকানাধীন হোটেল বিষয়টি আমার জানা ছিল না। টাঙ্গুয়া ইন’র প্রোপাইটার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল খয়েরের বলেই জানি। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সহ দলীয় নেতাকর্মীরাই ওই উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে নিয়ে গেছেন। সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, আমার মামা মাওলানা শামুছজ্জামান আদৌ কোনওদিন জামায়াতের রাজণীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি এলাকায় দানবীর হিসাবে পরিচিত। এলাকায় উনার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা ও মাদ্রাসা রয়েছে। মামা লন্ডন প্রবাসী হওয়ায় হোটেলটি আমার
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১,৯৪৯ বার