আজ জেসিসি বৈঠক, উঠবে তিস্তা-সীমান্ত হত্যা ইস্যু
মিজানুর রহমান–বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন জেসিসি বৈঠকের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। আজ বিকালে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফরমে ওই বৈঠক হবে। প্রায় দেড় বছর বিরতির পর বাৎসরিক ওই বৈঠক হচ্ছে। ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনার সর্বোচ্চ ফোরাম জেসিসি বৈঠকে সঙ্গত কারণেই সীমান্ত হত্যা চিরতরে বন্ধ এবং প্রায় এক দশক ধরে আলোচনার টেবিলে থাকা (ঝুলে আছে) বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনসহ দুই দেশের সম্পর্কের সব বার্নিং ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে চায় ঢাকা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন অবশ্য বলেছেন, সময় স্বল্প, মাত্র এক ঘণ্টার বৈঠক। ভার্চ্যুয়ালি হওয়ার কারণে কারিগরি কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। বাংলাদেশের ইস্যু অনেক, তবে কথা বলার সুযোগ সীমিত। উভয়পক্ষের জন্য ৩০ মিনিট করে বরাদ্দ।
সে হিসাবে বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ নেই। ফলে ওই বৈঠকের ফল নিয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশার পারদ যেনা বেশি উপরে না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটা নিশ্চিত করেছেন যে, তিস্তা ও সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ ঢাকা তুলবে। এ বৈঠকে কোনো চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুজিববর্ষের আয়োজনে অংশ নিতে পারেন। সম্ভাবনা আছে, তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভার্চ্যুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার আলোচনায় কিছু বিষয়ে চুক্তি হতে পারে এমন আভাস দিলেও সেই সব চুক্তির মধ্যে তিস্তা অন্তর্ভুক্ত কি-না? তা মন্ত্রী খোলাসা করেননি। ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের সুযোগ দেয়ার পরও তিস্তা চুক্তিকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঝুলিয়ে রাখা, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা এবং নোটিশ ছাড়া পিয়াজের মতো নিত্যপণ্য রপ্তানি (যুগ যুগ ধরে পিয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভরশীল, গত ১০ বছরে সেই নির্ভরশীলতা আরো বেড়েছে) যখন তখন বন্ধ করে দেয়ার মতো দিল্লির নানা ঘটনায় বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে- সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলোতে এমন খোলামেলা কথা উঠে এসেছে। ফলে যেকোনো মূল্যে সীমান্তে হত্যা বন্ধ এবং তিস্তায় চীনের বিনিয়োগ আসার আগেই ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ে এক ধরনের তাগিদ রয়েছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র মহাপরিচালক পর্যায়ে সম্প্রতি যে আলোচনা হয়েছে তাতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আজকের বৈঠকে সেই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন চাইবে ঢাকা। কাল গণমাধ্যমের সঙ্গে পৃথকভাবে আলাপকালে মন্ত্রী মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উভয়ে প্রায় অভিন্ন ভাষায় বলেন, ‘সীমান্তে আর একটি মৃত্যুও আমরা দেখতে চাই না।’ বিষয়টি জেসিসিতে উঠবে জানিয়ে ঢাকার প্রতিনিধিরা বলেন, আশা করি, ভারত তার অঙ্গীকার রাখবে। যৌথ পরামর্শক কমিশন বা জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন-এর বৈঠকের আলোচ্য বিষয় প্রসঙ্গে অন্য কর্মকর্তারা বলেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। দেশটির সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। সঙ্গত কারণেই ইস্যু অনেক। অমীমাংসিত অনেক বিষয় রয়েছে। তবে আমাদের পরস্পরের প্রতি আস্থা আছে। আমরা সেই সব বার্নিং ইস্যু নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করতে পারবো বলেই আজকের বৈঠক।