আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন বঙ্গবন্ধুকে নাকি বাংলাদেশকে?
মাহজাবিন আহমেদ মিমি-
আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন বঙ্গবন্ধুকে নাকি বাংলাদেশকে? তাজ উদ্দিন আহমেদকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে তাজ উদ্দিনকে গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসতে হয়নি।এই প্রশ্নের উত্তর তার বহু আগেই জানা। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্থানের কারাগার থেকে ফিরে আসছেন, বিমানের সিঁড়িতে তাজ উদ্দিন…… জড়িয়ে ধরলেন তাঁর মুজিব ভাইকে। পরস্পরের অশ্রু মিলেমিশে বইতে লাগল এক ধারায়। তাঁদের মাথার উপর বাংলার আকাশ, পায়ের নিচে জন্মভুমির পুন্য মাটি। কতদিন পর মুজিব ফিরে এসেছেন , তাঁর কাঙ্খিত মুক্তির ঠিকানায়, স্বাধীনতার আলোয় ঝলমল বাংলাদেশে! আলোচনা করে সাব্যস্ত করা হল, সংসদীয় গনতন্ত্রই হবে শাসনপদ্ধতি, আর বঙ্গবন্ধু হবেন প্রধানমন্ত্রী। ঐ দিনটা ছিল তাজ উদ্দিনের
জীবনের এক পরম সুখের দিন। কারন, নেতা সংসদীয় পদ্ধতির গণতন্ত্রে রাজি হয়েছেন । কিন্তু তাজউদ্দিন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধকালীন গণসংযোগ কর্মকর্তা আলি তারেকের মনে দ্বিধা, তার বোধ করি মনে হয়েছিল, যে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি আর তাজউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করলে তা সব দিক থেকেই সুন্দর। আলি তারেক ছুটে গেলেন তাজউদ্দিনের কাছে, বললেন, ‘ আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকুন, এখনই কিছু একটা করুন। বঙ্গবন্ধুকে বোঝান।’
তাজউদ্দিন বললেন, ‘ বঙ্গবন্ধু’ প্রধানমন্ত্রী হবেন, এটাইতো আমরা সবাই চাই।
”আর আপনি?’
‘আমি?
আমার আর কি চাওয়া?
আমার দুইটা চাওয়া ছিল।
এক.
বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
দুই.
আমাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়া।
আমার দুইটা চাওয়াই পূর্ণ হয়েছে। আমার তো আর কোন চাওয়া নেই।’ তরুন আলি তারেক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন এই সৌম্য দর্শন মানুষটার দিকে।
তারপর বললেন, ‘আপনি কাকে বেশি ভালবাসেন, বঙ্গবন্ধুকে,নাকি বাংলাদেশকে?
তাজউদ্দিন দ্বিধাহীন কন্ঠে জবাব দিলেন, ‘আলি তারেক, আমি বঙ্গবন্ধুকে বেশি ভালবাসি।’ তাজউদ্দিন জানতেন এবং গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, বাংলা, বাংলাদেশ আর বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভালবাসার কোন তল ছিল না। কোন খাদ ছিল না ।
মুজিব ভাই সারাটা জীবন একটা জিনিসই চেয়েছেন,তা হলো বাঙালির মুক্তি। কাজেই মুজিব ভাইকে ভালবাসার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশকে ভালবাসা যায়।
লেখক: মাহজাবিন আহমেদ মিমি , তাজউদদীন আহমেদ কন্যা