বার্তা ডেস্ক :: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েটের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাখাওয়াত ইকবাল অভি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।  সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে তিনি এ সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।
জবানবন্দিতে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাখাওয়াত ইকবাল অভি বলেন, ‘২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর হোসাইন মোহাম্মদ তোহা আমাকে ও সাইফুল ইসলামকে ২০১১ নং রুমে যেতে বলে। তখন আমি ভয় পেয়ে যাই। কারণ এই ঘটনার আনুমানিক ৭/৮ মাস আগে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ছাদে ১৬ তম ব্যাচের অমিত সাহা আমাকে সালাম না দেওয়ার অপরাধে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছিল। তারপর আমি ও সাইফুল ইসলাম ২০১১ নং রুমের দিকে যাই। সেখানে ১৬ ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার  তাবাককারুল ইসলাম তানভির , ইফতি মোশাররফ সকাল এবং মুজতবা রাফিদ ও ১৭ তম ব্যাচের এহতেশামুল হক তানিম , এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং হোসাইন মোহাম্মদ তোয়াকে খাটে বসে থাকতে দেখি। ওই সময় আবরারকে ২০১১ নং রুমের মাঝখানে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। তখন আমি ও সাইফুল ইসলাম খাটে বসি। এরপর মুনতাসির আল জেমি আবারের দুইটি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে ২০১১ নং রুমে প্রবেশ করে।  এরপর একটি মোবাইল ইফতি মোশাররফ সকাল ও অন্য মোবাইলটি মোস্তফা রাফিদ এবং ল্যাপটপটি মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভির চেক করতে থাকে।  এর মধ্যে ঐ রুমে ১৭ ব্যাচের মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, সামছুল আরেফিন এবং মাজেদুর রহমান মাজেদ ও ১৬ ব্যাচের মুজাহিদুর রহমান প্রবেশ করে। এরই মধ্যে মোস্তফা রাফিদ সাথে জেমি রুম থেকে চলে যায়। এরপর ইফতি মোশাররফ সকাল ওই রুমে থাকা আবরারকে জেরা করতে শুরু করে যে, তুই শিবির করিস কিনা? আবরার বলে, না আমি শিবির করি না এবং আমি কখনো এসবের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। এরপর রাত ৯ টার দিকে ১৫ ব্যাচের অনিক সরকার , মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন এবং মেহেদী হাসান রবিন ওই রুমে প্রবেশ করে।
জবানবন্দিতে অভি বলেন, ‘মেহেদী হাসান রবিন আবরারকে জেরা করে বলে যে, শিবির করে কিনা?  আবরার বলে, না, আমি শিবির করি না।  এরপর রাত পৌনে ১০ টার দিকে মেহেদী হাসান রবিন আবরারের মুখে চড় থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। এরপর মোতাহুল ইসলাম জিয়ন আবরারের মুখে চড় থাপ্পড় মারে। আরো পরে ইফতি মোশাররফ সকাল আবরারকে চড় থাপ্পড় মারে এবং জেরা করে যে, সে শিবির করে কিনা? তখন আবার বলে আমি শিবির করি না। ইফতি মোশাররফ সকাল ক্রিকেট স্ট্যাম্প আনতে বললে ১৭ ব্যাচের কোনো একজন একটি ক্রিকেট স্ট্যাম্প ২০১১ নং রুমে আনে। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে ইফতি মোশাররফ সকাল আবরারকে  মারতে শুরু করে। আসামী ইফততি মোশাররফ সকাল আবরার ফাহাদকে মারতে মারতে ক্রিকেট স্ট্যাম্পটি ভেঙে দুটুকরা হয়ে যায়। ক্রিকেট স্ট্যাম্পটি ভেঙে গেলে এহতেশামুল হক রাব্বি তানিম আরেকটি স্ট্যাম্প আনে। ওই ত্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে অনিক সরকার মারতে থাকে এবং আবরারকে বলে তুই স্বীকার কর যে, তুই শিবির করিস। এরপর আমি ভয় পেয়ে যাই। তখন আমি মনিরুজ্জামান মনিরকে বলি ভাই আমি ভাত খেতে যাব। তখন অনুমতি পেয়ে আমি আর সাইফুল ইসলাম ২০১১ নং রুম থেকে বের হয়ে যাই। এই ঘটনা কাউকে জানালে আমাকেও মারতে পারে এই জন্য আমি ঘটনা কাউকে বলি নাই।’
এদিকে কারাগারে আটক ২২ আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়। তারপর তাদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর সাক্ষী সাখাওয়াত ইকবাল অভির জবানবন্দি শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। এর আগে সাক্ষী মোহাম্মদ গালিবের অবশিষ্ট জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ সময় আদালত পরবর্তী জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।-কালের কন্ঠ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn