আমাকেও দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল
বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মুসলিম বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিন্দু, এ নিয়ে গর্ব ছিল আমার। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর ভারতে একজন মুসলিম বা একজন দলিত যখন রাষ্ট্রপতি, একই রকম গর্ব হয় আমার। যে দেশই বা যে মানুষই জাত-ধর্ম তুচ্ছ করে মানুষের জ্ঞানকে মর্যাদা দেয়, তাদেরই আমি স্যালুট করি। বাংলাদেশের বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন। কিছুদিন যাবৎ শুনছি যে, তিনি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন, সেটি নাকি তিনি নেননি, তাকে বাধ্য করা হয়েছে ছুটি নিতে। এই যে তিনি মেয়ের কাছে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন বেড়াতে, এটি কি তিনি ইচ্ছে করেই যাচ্ছেন, নাকি তিনি বাধ্য হচ্ছেন যেতে? আমাকেও যেমন এককালে বাধ্য করা হয়েছিল দেশ ছাড়তে, আমাকে যেমন আর ফিরতে দেয়া হয় না দেশে? বিচারপতিকেও কি এ জীবনে আর ফিরতে দেয়া হবে না? জানি না কী দোষ করেছিলেন তিনি। আমি তো আমার দোষের কথা জানি। আমি মানুষকে ভালোমানুষ বানাতে চেয়েছিলাম, কোনো মারণাস্ত্র নিয়ে নামিনি, হাতে শুধু কলম আর কম্পিউটার ছিল। গর্বগুলো এক এক করে শুকনো ফুলের মতো ঝরে যায়। মুসলিম মৌলবাদীরা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসীদের, ইসলামের সমালোচকদের খুন করে, হিন্দুরা যতই কট্টর হোকÑ করে না, এরকম একটা বিশ্বাস ছিল। এই বিশ্বাসের গায়েও ফাটল ধরেছে। এক এক করে বেশ কয়েকজন হিন্দু মুক্তচিন্তক খুন হয়ে গেছেন। লোকে আশংকা করছে কট্টর হিন্দুরাই খুনগুলো করেছে। বৌদ্ধরা বেশ সহিষ্ণু, এও তো কত গর্ব করে কত কাল বলেছি। বার্মায় এই বৌদ্ধদের দেখেছি জেনোসাইড ঘটাতে, নির্বিচারে মানুষ খুন করতে, মানুষের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিতে। কত স্বপ্ন ধসে যাচ্ছে, তারপরও হাতে আমার কলম আর কম্পিউটার। চোখে এখনো স্বপ্ন।