‘আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি’
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, কে কার কী সেটা তিনি দেখেন না। দেখবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন ধরি ভালো করেই ধরি। এটা তো ভালো করেই জানেন।’ ‘কে কী, কার ভাই, কার চাচা, কার কে, ওটা কিন্তু দেখি না। এটা মাথায় ধরে রাখেন।’ গত ২৫ ও ২৬ মে পশ্চিমবঙ্গ সফর নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী। একজন সাংবাদিক জানতে চান যাদের কারণে মাদকের বিস্তার ঘটল, সেই গডফাদার শ্রেণির বিরুদ্ধে কখন কঠোর হবে সরকার। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কাকে গডফাদার বলছেন, আমি সেটা জানি না। আমি এইটুকু বলতে পারি, কে গডফাদার কে ডন, এটা কিন্তু আমি বিচার করছি না।’ ‘যারাই এর সঙ্গে জড়িত যাদের বিরুদ্ধেই এতটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করেছে।’ ‘যেই গডফাদার থাকুক, সে যে বাহিনীতেই থাকুক, কাউকে কিন্তু ছাড়া হচ্ছে না, ছাড়া হবে না। এইটুকু বলতে পারি।’ এই অভিযানে সরকার হঠাৎ করে যায়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে, দেখা হয়েছে কারা আনে, কোন কোন স্পট থেকে ঢুকছে, কোথা থেকে তৈরি হচ্ছে, কী হচ্ছে। এগুলো খবর রেখেই কিন্তু…’ এই অভিযানে অস্ত্রের ব্যবহার বেশি হচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন রাখেন আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী।
পুলিশ বা র্যাবের অভিযানে অন্যায়ভাবে কেউ কিছু করলে তার বিচার হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ঘটনা ঘটেছে, আপনারা একটাও দেখান যে কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হছে। যদি কোনো নিরীহ ব্যক্তি শিকার হয়ে থাকে, নিশ্চয় আমরা তার ব্যবস্থা নেব।’ এই অভিযানে সারাদেশের মানুষ কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছে, এটা মানুষের দাবি-এমনটা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেয়ে বাবা মাকে হত্যা করছে. ছেলে মাকে হত্যা করছে, বাবাকে হত্যা করছে, ভাই ভাইকে হত্যা করছে এই মাদকের কারণে।…সমাজে একটা হাহাকার মাদক নিয়ে, তার বিরুদ্ধে কি অভিযান চালান যাবে না?’ ‘অভিযান চালাতে গেলে যদি কোন ঘটনা ঘটে, সেটাই যদি বড় করে দেখেন, তাহলে বলেন, সেটা বন্ধ করে দিই? ‘ভেজালবিরোধী, মাদকবিরোধী বন্ধ করে দিই? তাহলে কি সমাজ ভালো থাকবে?’-প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। অভিযানে ১০ হাজারের বেশি মাদকসেবী ও মাদকের কারবারি গ্রেফতার হলেও সেটি গণমাধ্যমে আসেনি বলেও অনুযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও এখনকার মতোই প্রশ্ন এসেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন সন্ত্রাস আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। পৃথিবীর অন্য সভ্য দেশেও তো এখনও নানা ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে তো আমরা অনেক ভালো রাখতে সক্ষম হয়েছি।’ এই সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গেও একান্তে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। মোদির সঙ্গে হওয়া বৈঠক নিয়ে পরদিন কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী ভারতকে অনেক কিছু দিয়েছেন জানিয়ে তার প্রতিদান চেয়েছেন।
শেখ হাসিনা কী প্রতিদান চেয়েছেন তা তার কাছেই জানতে চান একজন সাংবাদিক। এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই সাংবাদিকের কাছে জানতে চান কোন পত্রিকার শিরোনাম এটি। ‘আনন্দবাজার’- জানান ওই সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে? আর কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম। দেয়ার অভ্যাস বেশি।’ ‘আমরা ভারতকে যে দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে’- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ‘প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি, আমরা শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা কোনো প্রতিদান চাই না।’