আ’লীগের জেলা কমিটি ঘোষিত হলে দল মজবুদ হবে না বিভেদ বাড়বে !
বার্তা ডেক্সঃ সহসাই ঘোষণা করা হতে পারে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দলের নেতৃস্থানীয় সূত্রে এ আভাস পাওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিটি হলে কি হবে দলের অবস্থান? বিভেদ বাড়বে না মজবুদ হবে সাংগঠনিক অবস্থান? এ নিয়ে কথা বলেছেন কেউকেউ। বেশ কয়েকবার দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনার সম্ভাবনা দেখা দিলেও নানা জটিলতায় এতোদিন তা আর হয়ে ঊঠেনি। কমিটি না হওয়ায় দলের মধ্যে চলছে ‘হযবরল’ অবস্থা। দিনদিন নির্জিব হতে থাকে দলের নেতা কর্মীরা। নেতারা যেমন খুশী খেলতে থাকেন তৃণমূলের কর্মী নিয়ে। এই সব কর্মীরা এক সময় পরিনত হন ফুটবলে। জাতীয় নির্বাচন সামনে এই মূহুর্তে আবার সামনে চলে এসেছে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন পক্রিয়া।
২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের জেলা সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষনার পর থেকেই শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দ্বন্ধ শুরু হয়। বিগত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে সাবেক ও বর্তমান সাধারন সম্পাদক চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে এই দ্বন্ধ ব্যাপাক আকার ধারন করে। নির্বাচনে সভাপতি সাবেক সম্পাদকের পক্ষ নিলে বিরোধ আরো বাড়ে। এক সময় এই কারনে সভাপতি ও সম্পাদকের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এ ভাবেই বিগত প্রায় ২ বছর খুঁড়িখুঁড়িয়ে চলে দুই জনের জেলা কমিটি। একে অপরের বিরোধিতার কারনে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন ও পদ পদবি ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কিছুতেই তারা একমত হতে পারছিলেন না। দু’জন দু’পথে হাটছিলেন। দলের মধ্যে দু’বলয় সৃষ্টি হয়। বেড়াজালে আটকে যায় জেলা কমিটি।
গত ২৫ নবেম্ভর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় সরকারিভাবে যে অনুষ্টান করা হয় সেখানে আনুষ্টানিক ভাবে জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার এম এনামুল কবীর এক মঞ্চ থেকে ঐক্যের ডাক দেন। দু’জনের ঐক্যবদ্ধ সহ অবস্থানকে অনেকে দলের নয়া মেরুকরন বলে আখ্যায়িত করেন। দীর্ঘদিন ধরে ভেতর ভেতর দু’জনের মধ্যে যে ঠান্ডা লড়াই চলে আসছিলি নতুন মেরুকরণের মাধ্যমে তা কিছুটা যেন প্রসমিত হয়। সভাপতি ও সম্পাদক নীতিগতভাবে একে অপরের কাছাকাছি আসায় ও ঐক্যের আহ্বানে নেতা কর্মীরা উজ্জিবিত হন। সেই সাথে উভয়ের মতামতের ভিত্তিতে দলের জেলা কমিটি গঠনের পথ কিছুটা প্রশস্ত হয়। দু’জনের মাঝেকার দুরত্ব কমার পর থেক বিগত ২ মাস ধরে সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমন সকলের গ্রহন যোগ্য একটি জেলা কমিটি ঘোষনা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তারা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদে হোসেন (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) এর সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমন ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সদস্য পদে কয়েকজনের নাম নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে এই পদগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেবার বিষয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই একমত হয়েছেন। এই দুই দিনের মধ্যে কোনও পদের বিষয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঐক্যমতে না পৌঁছালেও দুই জনের অর্থাৎ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রস্তাবিত দুই নাম দিয়েই সভানেত্রীর হাতে কমিটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
পত্রিকা সূত্রে জানাযায় জেলা সভাপতি মতিউর রহমান জেলা কমিটির বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ। তিনি সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। কমিটির ব্যাপারে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন,‘১৮-১৯ বছর পর সম্মেলন হয়েছে, জেলা কমিটিতে রাখার মতো কয়েকশ’ নেতা রয়েছেন। এরমধ্যে ৭৫ জন বের করা অনেক কঠিন কাজ। তবুও আমরা দু’জন মিলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি কমিটি তৈরি করেছি, আগামী ২ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনের মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দেওয়া হবে কমিটি।
জাতীয় নির্বাচনে পূর্ব মূহুর্তে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলে দলের ঐক্য মজবুদ হবে না বিভেদ আরো বাড়বে এ নিয়ে তৃণমূল নেতা কর্মীদের মাঝে শংকা কাজ করছে। কেউকেউ বলছেন, জেলা কমিটি ঘোষনার পর যদি দলের প্রত্যেক ইউনিট কমিটিকে ঢেলে সাজানো যায় তা হলে হয়তো দলের মাঝে গতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা এতে উজ্জিবিত হবে। নতুন নেতৃত্ব পেলে নেতা কর্মীরা উৎসাহিত হবে। অনেকে বলছেন, নির্বাচনের আগে ইউনিট কমিটিতে হাত দিলে আত্মঘাতি স্বীদ্ধান্ত নেয়া হবে। দলের বিরুধ আরো চাঙ্গা হবে । পদ বঞ্চিত ও পদ প্রাপ্তদের মধ্যে নতুন করে গ্রুপ উপগ্রুপ সৃষ্টি হবে।
জেলা কমিটিতে স্থান পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে কেউকেউ মুখ খুলছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাশালী এক নেতা করুনা সিন্দু বাবুলের সাথে আলাপে বুঝা যায়, জেলা কমিটি ঘোষণা হলে আগামী নির্বাচনে তার ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, এর নীতিবাচক ও ইতিবাচক দু’ধরনের প্রভাবই আছে। সব কিছু নির্ভর করছে দলের শীর্ষ নেতাদের যোগ্য নেতৃত্বের উপর। তিনি বলেন, অনেকে অনেক কিছু পেতে চান। তাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির সমন্ময় না হলে দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। তিনি বলেন, সব কিছু নির্ভর করছে শীর্ষ নেতারা কিভাবে উদ্বোদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন তার উপর। তিনি তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেন, ৭৫ পরবর্তীতে আমারা যারা সার্বক্ষনিক দলের জন্য নিবেদিত তাদেরকে যদি কমিটিতে মূল্যায়ন না করা হয় তাহলে দলে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে দলে নিস্কৃয় হবার সম্ভাবনা আছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরতো আরেক আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক সুরমা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা বলেন, আমি এক সময় থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলাম। জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলাম। দলের জন্য সব সময় নিবেদিত প্রাণ। দলের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত্য বাজি ধরেছি। আমি যদি আমার প্রাপ্য অধিকার না পাই তা হলে দল করে আমার লাভ কি? তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাকে দল থেকে ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ৭৫ পর্বরতীতে যখন দলের নাম নেয়া নিষিদ্ধ ছিল তখন আমরা কয়জন শহরে বঙ্গবন্ধুর নামকে মাথায় ধরে রেখেছি। এখনো জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু আদর্শে অবিচল। তিনি বলেন, আমার নাম কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রেখে পরবর্তীতে কেটে দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। যদি এই হয় কমিটির অবস্থা তা হলে সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসন কেন ১টি আসনও নেত্রীকে উপহার দেয়া যাবেনা। তিনি বলেন, নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে কমিটি ঘোষনা দেওয়া আর না দেবার মঝ্যে অনেক পার্থক্য। আশা করি নেতৃবৃন্দের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারা যাই করেন না কেন বুঝে শুনে যেন তা করেন।
’প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ প্রায় ২০ বছর কেটেছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সম্পাদক দিয়ে। এই দীর্ঘ সময়ে জেলার বেশিরভাগ উপজেলায়-ই সংগঠন ছিল দ্বিধাবিভক্ত। ২০ বছর পর ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘটা করে সম্মেলন করে সভাপতি ও সম্পাদকের দুই পদ ঘোষণা হয়। সম্মেলনের প্রায় ১০ মাস পরই সভাপতি ও সম্পাদক দুজনেই উল্টোপথে হেঁটেছেন। দুজনের দুরত্ব ছিল অনেক বেশি। সম্প্রতি. তাঁদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটলেও যার যার ঘনিষ্টদের দায়িত্বশীল পদে রাখতে চাইছেন দুজনেই।