ঈদের পূর্বে সুনামগঞ্জে তিন হত্যা
বার্তা ডেক্সঃঃ ঈদুল ফিতর উদযাপনের আগেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় পৃথক তিন ঘটনায় তিন ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন তাহিরপুর উপজেলার রসুলপুর টুকেরগাঁও গ্রামের সাজিদ মিয়ার ছেলে তাদির মিয়া (২০), জামালগঞ্জ উপজেলার পুর্ব লম্বাবাক গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২৫) ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের সড়কপাড়ার মৃত দিদার মিয়ার ছেলে শুক্কুর আলী (৫৫)। বৃহস্পতিবার জেলার তিন থানার ওসি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর নিশ্চিত করেন।
তাহিরপুর: সুদের দেয়া লাভের টাকা না পেয়ে জেলার তাহিরপুরে তাদির মিয়াকে (২০)পিটিয়ে হত্যা করেছে দাদন ব্যবসায়ী ও তার লোকজন। বৃহস্পতিবার নিহতের বড় চাচা ও ঋণগ্রহীতা শাহজাহান মিয়া জানান, উপজেলার বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়নের একাধিক দাদন ব্যবসায়ীর (সুদ) গ্রাম খ্যাত রসুলপুর টুকেরগাঁও গ্রামের বজলুল হকের ছেলে হাদিস মিয়াকে ৪০ হাজার আসল টাকা ছয় মাস আগে পরিশোধের পর লাভের ৩০ হাজার টাকা দাবি করায় মঙ্গলবার দুপুরে আমার ভাতিজার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সন্ধ্যায় হাদিস তার স্ত্রী ছেলে-মেয়ে ও ভাতিজাসহ ৬-৭ জন সংঘবদ্ধ হয়ে আমার বাড়িতে এসে কাঠের বর্গা দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে তাদির মিয়াকে আহত করে ফেলে রেখে যায়। ঈদের দিন বুধবার ভোরবেলা চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদির মিয়া মারা যান। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত ছায়েদ মিয়ার ছেলে সোনা মিয়া, তার ছেলে আরিফ মিয়া ও সোনা মিয়ার ভাই খুর্শিদ মিয়া ও মৃত মতি মিয়ার ছেলে রফিক মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জামালগঞ্জ: ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মায়ের নিকট নতুন জামা কাপড় কেনা ও হাত খরচের টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে জেলার জামালগঞ্জে ছোট ভাইয়ের হাতে মঙ্গলবার বিকালে নিহত হলেন সুমন মিয়া (২৫)। তিনি উপজেলার পূর্ব লম্বাবাক গ্রামের ইউসুফ আলীর ছোট ছেলে। নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানান, মামুন মিয়া মঙ্গলবার বিকালে নিজ বাড়িতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন জামা কাপড় কেনা ও হাত খরচের টাকা চান। এ নিয়ে বড় ভাই সুমনের মাথায় আঘাত করেন মামুন। গুরুতর আহত অবস্থায় সুমনকে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেন, নিহতের মা বাদী হয়ে ঘাতক ছোট ছেলে মামুনের বিরুদ্ধে বুধবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামি পলাতক রয়েছে বলেও জানান ওসি।
বিশ্বম্ভরপুর: ছাগল আটকে রাখার জের ধরে জেলার বিশ্বম্ভরপুরে ভাতিজার বল্লমের আঘাতে শুক্কুর আলী (৫৫) নামের একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ উপজেলার পলাশগাঁও সড়ক পাড়ার আবদুল আজিজের ছেলে চাচার ঘাতক সালা উদ্দিনকে (২১) গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার পলাশগাঁও সড়ক পাড়ায় মঙ্গলবার বিকালে মৃত দিদার মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ ও তার ছোট ভাই শুক্কুর আলীর পরিবারের শিশুদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আজিজের ছেলের মাথা ফাটিয়ে দেয় শুক্কুর আলীর ছেলে। ছেলের মাথা ফাটানোর শোধ নিতে আবদুল আজিজের পরিবারের লোকজন শুক্কুর আলীর একটি ছাগল বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। শুক্কুর আলীর পরিবারের লোকজন ছাগল ছাড়িয়ে আনতে গেলে আজিজের বড় ছেলে পান দোকানদার সালাউদ্দিন লাঠি দিয়ে তাদের পেটাতে গেলে লাঠির আঘাতে তার নিজের মায়ের মাথা ফেটে যায়। এদিকে শুক্কুর আলী পলাশ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির পাশে সড়কের ওপর সালাউদ্দিন ফের ধারালো বল্লম দিয়ে চাচার তলপেটে আঘাত করে ফেলে রাখে। আশংকাজনক অবস্থায় রাতে সুনামগঞ্জ সদর মডেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাতেই সালাউদ্দিনকে আটক করে। বৃহস্পতিবার বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় ঘটনার রাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।