আতিক রহমান পূর্ণিয়া, হাওর অঞ্চল থেকে

হাতের মুঠোতে কিছু ধান নিয়ে রাস্তায় বসে আছেন রাজিয়া খাতুন। আর তার সামনে রাস্তায় শুকাতে দেওয়া আছে স্তূপ করে রাখা ধান। যে ধানের প্রায় সবটাই নষ্ট। তারপরও কেন এই ধান নিয়ে বসে আছেন জানতে চাইলে রাজিয়া বলেন, এই ধান আমি মহব্বতের জন্য আনছি। এই ধানের সাথে আমার জানের মহব্বত। এই ধানের জন্য গত কয়টা মাস অপেক্ষা অপেক্ষা করছি। এই ধান দিয়ে আমার বছরটা চলার কথা ছিলো।

এই দৃশ্য সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানা সদর থেকে জেলা সদরে যাওয়ার মূল রাস্তার। তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে বের হলেই সমস্ত রাস্তা জুড়ে ধান শুকচ্ছেন অনেকে। যাদের বেশিরভাগ নারী। দূর থেকে দেখে মনে হবে শতশত মানুষ এই বৈশাখে ফসল নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু কাছে গেলে, মানুষজনের সাথে কথা বললে বোঝা যাবে যে আসলে এই ফসল সেই ফসল নয়। এই ধানের প্রায় সবটা পঁচা বা অর্ধেক নষ্ট।

রাজিয়া বলেন, ছয় হাজার টাকা খরচ করে অর্ধেক পঁচা আর কাঁচা ধান কাটাইয়া আনছি। এই ধান রোদে দিয়া দেখি ধান থাইকা দুধের মতো বাহির হয়। ধান পোক্ত হয় নাই। সামনে যে ধান আছে তার থাইকা কিছুই পাওয়া যাইবো না। এই ধান শুকাইলেও মেশিনে দিলে পাউডারের মতো হইয়া যাইবো। তারপরেও এই ধান নিয়া নাড়াচাড়া কইরা দেখি, যদি শেষ পর্যন্ত কিছু বাহির হয়।

তাহিরপুর থেকে আনোয়ারপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তায় পচা বা আধা কাঁচা ধান শুকচ্ছেন মানুষ। প্রত্যেকেরই একই অবস্থা। সবাই এই পচা ধানের মধ্যে সামনের দিনগুলো চলার স্বপ্ন দেখছেন। তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কে আরও কথা হয় স্বপ্না, মনোয়ারা, সফেন বানু, দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তারা বলেন, ধানের চারভাগের এক ভাগও টিকবে না। চাল হবে না, তারপরও আশা, যদি কিছু হয়। কোনও কাজ কর্ম নাই। পেটের চিন্তায় হাওরেই দিন রাত নৌকা করে এই পচা ধান এনে সময় কাটে। এই ধান অন্য সময় হাঁসের খাবার হতো। এখন তা নিজেদের খাবারের জন্য তৈরি করার চেষ্টা চলছে। খড়গুলা পচে গেছে। গরুরও খাবারের যোগ্য না। দেলোয়ার বলেন, এমনও সামনের দিন আছে, গরুও যে খাবার খাইবো না তা হয়তো নিজের খাইতে হইব।

গত এক সপ্তাহে তাহিরপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় দুই হাওর শনির হাওর এবং মাইট্যাইন হাওর ডুবে কয়েক হাজার মেট্রিক টন ধান অকাল বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাহেরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, এই পচা ধানে মানুষের দিন যাবে না তা প্রশাসন অবগত। তাই এখন আরও বাড়তি বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn