একই পরিবারের পাঁচ অন্ধের করুণ কাহিনী
কুড়িগ্রাম শহরের পাশেই একই পরিবারের ৭ সদস্যের মধ্যে ৫ জনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ভূমিহীন পরিবারটির আয়ের পথ না থাকায় এক প্রকার না খেয়েই কাটছে তাদের দিন। পরিবার প্রধানের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। ফলে পেটে খাবার না জোটায় বিনা চিকিৎসায় সন্তানদেরকে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে। রোববার এই পরিবারটির কথা জানতে পেরে নিজেই দেখা করছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন। আশ্বাস দিয়েছেন চিকিৎসাসহ সহযোগিতার। সরজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলখানা ইউনিয়নের চর সুভারকুটি গ্রামে গিয়ে দেখা হয় পরিবার প্রধান শহিদার রহমান (৫৫) এর সাথে। তিনি জানালেন প্রতিবন্ধী ভাতা ৭শ’ টাকায় চলছে ৭ জনের টানাটানির সংসার। এরআগে প্রায় ২৩ বছর ধরে পার্শ্ববর্তী চর সুভারকুটি মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে মাসিক ২ হাজার টাকা করে পেলেও সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অন্ধ এই ব্যক্তি তার পরিবারের সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। বাড়িভিটাসহ ১০শতক জমিতে ঠাঁই হয়েছে এই পরিবারটির।
শহিদার রহমানের স্ত্রী আসমা বেগম (৪০) বর্তমানে এক চোখ দিয়ে অল্প কিছু দেখছেন। কয়েক বছর আগে টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করতে না পারায় তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বাকী চোখটাতেও ঝাপসা দেখছেন। তিনি জানালেন, এক ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে দুটি স্বাভাবিক চোখে দেখতে পেলেও বাকী সন্তানরা অন্ধ। বড় মেয়ে সাবেরা সিদ্দিকাকে (১৮) ৪০ হাজার টাকা যৌতুক ও একটি বাই সাইকেল দিয়ে গত বছর বিয়ে দিয়েছেন। তার ছোট মেয়ে ছাইয়েদা সিদ্দিকা (১৬) হলোখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাকীরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পেরুলেও আর এগুতে পারেনি। শহিদার রহমান আরও জানালেন, জন্ম থেকেই তিনি অন্ধ। স্ত্রীও এক চোখ দেখতে পান না; অপর চোখে ঝাপসা দেখেন। তিনিই কোনক্রমে সংসারটি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের জন্য তাদেরকে কোন রকম সহযোগিতা করতে চান না।
অভাবের সংসারে একমাত্র স্কুল পড়ুয়া সাইয়েদা সিদ্দিকার ভবিষ্যৎও অন্ধকারের দিকে। তার পড়াশুনাও প্রায় বন্ধ হবার জোগার। ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবে। অসচ্ছল পরিবার আর গরিব মানুষদের সেবা করবে। কিন্তু আজ এই স্বপ্ন নিভে যেতে বসেছে। প্রায় দিন তাকে স্কুল ছেড়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যেতে হয়। ফলে পড়াশুনা ঠিকমতো চালিয়ে যেতেও পারছে না। পরিবারটির এমন করুণ অবস্থার মধ্যে প্রতিবেশীরা সহযোগিতা না করলে তাদেরকে পথে বসতে হতো। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, জন্মগতভাবে একই পরিবারের ৫ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সম্ভবত এটি কনজানিটাল এ্যাব নরমাল থেকে হতে পারে। আক্রান্তদের কর্নিয়া সংযোজনের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। যা ব্যয়বহুল হলেও দেশেই করা সম্ভব।