ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি ভারতে পালিয়েছেন!
বার্তা ডেস্ক :: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক রয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ। অনেকের ধারণা, তিনি ইতোমধ্যে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। চুমকির কোনো হদিস না পেয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে গত সোমবার (৩১ আগস্ট) পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। মামলা দায়েরের পর প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাটে এক স্বজনের বাসায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর চুমকি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে সন্দেহ করছেন দুদকের একাধিক কর্মকর্তা।
সোমবার সন্ধ্যায় দুদকের পিপি মাহমুদুল হক বলেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের জেরে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক রয়েছেন। তিনি হয়তো অবৈধ পথে সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। দুদক পিপি মাহমুদুল হক জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেপ্তার দেখাতে সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেছে দুদক। একই মামলায় তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিদেশযাত্রা বন্ধেও ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৩ আগস্ট চুমকি কারণ ও তার স্বামী ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২)/২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা সহ দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। দুদক সুত্র জানায়, ওসি পদে থাকাকালীন ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জন করা অবৈধ অর্থ সরকারের চোখে বৈধ করার দায়িত্ব ছিল তার স্ত্রী চুমকি কারণের ওপর। জানা গেছে, এক বছর অনুসন্ধান করে প্রদীপ ও চুমকির তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক’র তদন্ত কমিটি।
২০১৮ সালে দুদকের তদন্ত কমিটি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত শুরু করে। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হলেও চুমকি তা জমা দেন ২০১৯ সালের ১২ মে। দুদক কর্তৃক দায়ের হওয়া মামলার বিবরণ অনুসারে, চুমকি তাদের সম্পদের বিবরণে দেখিয়েছেন যে তার বাবা তাকে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট নগরের পাথরঘাটা এলাকায় একটি ছয়তলা বাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে, চুমকির দুই ভাই থাকলেও তারা বাবার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি পাননি। এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ভবনটি তৈরি করেছেন। এবং তা গোপন করার জন্য তিনি এটি তার শ্বশুরের নামে করেছিলেন। তার শ্বশুর সেটি তার স্ত্রীর নামে লিখে দেন।
সূত্রটি জানায়, চুমকি কারণ একজন গৃহিণী। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিনি প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তখন থেকেই তিনি ব্যবসাকে তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার মাছের ব্যবসা ছিল। ২০১৩-২০১৪ এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে তিনি তার মূলধন দেখান, ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় দেখান তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা। চুমকির দাবিকৃত মাছের ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি দুদকের তদন্ত কমিটি। চুমকি তার ব্যবসার কোনো লাইসেন্স বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে পারেননি। ২০০২ সালে মাছ ব্যবসা শুরু করার জন্য বিনিয়োগের ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা কোথায় পেয়েছিলেন সে সম্পর্কে কোনো দলিলও দেখাতে পারেননি চুমকি। দুদক বলছে, প্রদীপের অবৈধ অর্থ গোপন করার জন্য চুমকি ভুয়া মাছের ব্যবসা দেখিয়েছিলেন। মাছের ব্যবসা থেকে তিনি দেড়কোটি টাকা আয় করেছেন। দুদক জানায়, চুমকির স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে চার কোটি ২২ লাখ টাকার এবং পারিবারিক ব্যয় হয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকার। সেখানে তার বৈধ আয় মাত্র ৪৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা। সে হিসাবে চুমকি জ্ঞাত বহির্ভূত আয় করেছেন তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
মামলার বাদি দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের মামলায় প্রদীপকে গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে সোমবার আবেদন করা হয়েছে। যার শুনাননি হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। ওইদিন প্রদীপকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। তিনি জানান, মামলা দায়েরের পর চুমকি কারণ প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাটে এক স্বজনের বাসায় কিছুদিন আত্নগোপনে ছিলেন। এরপর তার হদিস মিলছে না। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। দুদকের পিপি মাহমুদুল হকও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে বুধবার (২ সেপ্টেম্বরে) সকালে চুমকি কারণের হদিস না পাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা অজিত কুমার কারণ বলেন, মেয়ে কোথায় আছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে তিনি অন্য কোন কথা বলতেও নারাজ বলে সাফ জানিয়ে দেন। এমনকি চুমকি কারণের ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বার সম্পর্কেও তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
প্রসঙ্গত, সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পর ওসি প্রদীপকে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় গত ৫ আগস্ট। গত ৬ আগস্ট তিনি কক্সবাজার আদালতে আত্নসমর্পণ করেন। চারদফা রিমান্ড শেষে আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম