কানাডায় নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে সেই সৌদি তরুণী রাহাফ
কানাডায় আশ্রয় পাওয়ার পর নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে সৌদি তরুণী রাহাফ। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে তার। কানাডার অভিবাসন পুনর্বাসন সংস্থার (কস্টি) নির্বাহী পরিচালক মারিও কাল্লা বলেন, ‘রাহাফ এখানে খুশি ও আনন্দিত। তবে একই সঙ্গে এত অপরিচিতদের মাঝে কিছুটা শঙ্কিতও।
পরিবারের সঙ্গে কুয়েতে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে পালিয়েছিলেন রাহাফ। থাইল্যান্ড হয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যাংককের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় প্রার্থী রাহাফকে আটক করে হোটেলের একটি রুমে বন্দি রাখা হয়। জোর করে তাকে কুয়েতগামী বিমানে তুলে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু তিনি নিজেকে হোটেল রুম থেকে বের করে নিতে দেননি। পরিবারের কাছে ফেরত যেতে চাননি। তাকে সৌদি আরব নিতে থাইল্যান্ড পৌঁছানো বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। থাই সরকার বাধ্য হয় তার সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের সুযোগ দিতে। নানা নাটকীয়তার একপর্যায়ে তাকে নিজ দেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় বাস করা মানবাধিকারকর্মী ইয়াসমিন মোহাম্মদ বলেন, ‘রাহাফ আসলে অসংখ্য হুমকিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাহাফ অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা ঘোরের মধ্যে আছে।’ কস্টির তত্ত্বাবধানে অস্থায়ী আবাসনে রয়েছেন রাহাফ। সংস্থাটি টরন্টোতে তার থাকার ব্যবস্থা করেছে। কাল্লা বলেন, ‘বাড়ির বাইরে গেলে তাকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ রাহাফও খুব দ্রুতই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ইংরেজি ক্লাসে ভর্তি হয়েছেন, আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করছেন। তবে আর্থিকভাবে কীভাবে সক্ষম হবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। রাহাফ কুনুনের জন্য তাই ‘গোফান্ডমি’ নামের একটি অভিযান শুরু করেছেন ইয়াসমিন মোহাম্মদসহ আরও দুই মানবাধিকার কর্মী। তাদের এই উদ্যোগে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যই ১১ হাজার ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে। ইয়াসমিন বলেন, ‘রাহাফের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। পরিবারের কাছ থেকে সে আলাদা। যখন চারপাশের সমস্যা কমতে শুরু করবে তখন কিছুটা হালকা অনুভব করবেন তিনি।’
টরন্টোতে পৌঁছেও টুইট বার্তায় নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন রাহাফ। বলেন, ‘আমি সত্যি কখনও ভাবতে পারিনি যে সবাই আমাকে এতটা ভালোবাসবে, এত সমর্থন দিবে। আপনারাই আমাকে ভালো মানুষ হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন।’ বিমানবন্দরে কুনুনকে স্বাগত জানানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়া ফ্রিল্যান্ড সাংবাদিকদের বলেন, “কুনুন ‘একজন খুবই সাহসী নতুন কানাডিয়ান’। ফ্রিল্যান্ড আরও বলেন, রাহাফ নতুন বাড়িতে পৌঁছে কানাডিয়ানদের দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর ভ্রমণ করতে হয়েছে। ফলে আজ তাকে কোনও প্রশ্ন না করাই শ্রেয়। সে এখন তার নতুন বাড়ি যাচ্ছে।” কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, মানবাধিকার ও নারী অধিকার সমুন্নত রাখতেই রাহাফকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত সাবেক কানাডীয় রাষ্ট্রদূত ডেনিস হোরাক বলেন, রাহাফ আল কুনুনের আবেদন গ্রহণ সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘এটা হয়তো সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কঠিন করে তুলবে। তারপরও এটা সমাধানযোগ্য বলেই আমি মনে করি।’ এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের পক্ষ থেকে রাহাফের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এ ঘটনায় সৌদি আরবের কঠোর সামাজিক বিধিনিষেধের ব্যাপার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। দেশটিতে ভ্রমণের জন্য নারীদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়। বরাবরই এর সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।