কী ঘটেছিল ধানমন্ডিতে?
সরেজমিন দেখা গেছে, এসময় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়কের মাথায় নিয়ে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢিল ছুঁড়ে, কার্যালয় ভবনের কাচও ভাঙ্গে। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদারসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ। সঙ্গে রাখা হয় একটি জলকামানও। ঘটনাস্থলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের ইট-পাটকেল মেরেছে। তবু আমরা ধৈর্য ধরে ছিলাম। আমরা কোনও অ্যাকশনে যাইনি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নেবো। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে পিছু হটে আসা ছাত্র-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সবার হাতে হাতে বাঁশ ও কাঠের লাঠি। খবর পেয়ে আসা পুলিশের সঙ্গে জিগাতলা মোড়ের উত্তর দিকে অবস্থান নেয় তারা। আর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে জিগাতলা মোড়ের দক্ষিণ দিকে বিজিবির গেটের সামনে। মাঝে মধ্যেই দু পক্ষের মধ্যে চলতে থাকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে পিছু হটে ছাত্র-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। একটু পর লাঠি নিয়ে ধাওয়া দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
শিবির-ছাত্র সন্দেহে মারধর
ধাওয়ার মুখে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হওয়ার পর জিগাতলা মোড়ে শিবিরকর্মী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হিসেবে বেশ কয়েকজনকে মারধর করেছে ছাত্র-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। মারধরের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও। দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকসহ ডেইলি মেইল টুয়েন্টিফোরের ফটোগ্রাফার তানভীর আহমেদকেও বেধড়ক মারধর করে ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তানভীরকে বর্তমানে ধানমন্ডি থানায় আটকে রাখা হয়েছে। এছাড়া একাধিক টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানকে মারধর ও ক্যামেরাও ভাঙচুর করার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেলে অন্তত ৮-১০ জন সন্দেহভাজনকে বেধরক মারধর করা হয়। কাউকে কাউকে মারধরের পর ছেড়ে দেয়া হলেও বেশ কয়েকজনকে আটকে রাখা হয় থানায়। তবে ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে তা জানানো হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।
সন্ধ্যায় যেভাবে স্তিমিত হয়ে আসে উত্তপ্ত অবস্থা
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সন্ধ্যায় তা স্তিমিত হয়ে আসে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী হঠাৎ করেই কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রতিনিধি হিসেবে ধানমন্ডি কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে তাদের কার্যালয়ের ভেতর ঘুরিয়ে দেখানো হয়, তারা দেখতে পান কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে আটকে রাখা হয়নি। পরে ৫-৬ জনের সেই প্রতিনিধি দলের হয়ে হাসিবুর রহমান তূর্য নামে আইডিয়াল স্কুলের এক ছাত্র ও রোহান নামে নিউ পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেক শিক্ষার্থী বাইরে এসে ব্রিফিং করে। রোহান ও তূর্য বলে, ‘আমরা গুজব শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। দুই জন শিক্ষার্থী এসে আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়া ও ধর্ষিত হওয়ার কথা বলে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ি। আমরা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে দেখেছি, আমাদের কেউ সেখানে আটকা নেই। এটা একটা মিথ্যা গুজব। সবার উদ্দেশে বলতে চাই গুজব শুনে কেউ উত্তেজিত হয়ে উঠবেন না।’ তূর্য ও রোহান বলেন, ‘সরকার আমাদের দাবি পূরণ করছে। আমরা তিন দিন সময় নিয়ে দেখতে চাই। এই তিন দিন আর কোনও আন্দোলন করবো না।’ এদিকে তূর্য ও রোহানের আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণার সময় অনেকেই তা মানি না বলে চিৎকার করতে থাকে। পরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানি বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বার্থন্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়েছে। আসলে কোনও শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলা ও বা কাউকে ধর্ষণ করার ঘটনা ঘটেনি। ‘গুজব’ ছড়িয়ে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে তা ক্লিয়ার করেছি।