কেমন ছাত্র রাজনীতি চাই?
আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আজকের কোনো অভিভাবক চান না তার ছেলেমেয়ে রাজনীতির নামে এসব করুক। কেননা ছাত্র রাজনীতি বাংলাদেশে এখন ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। অথচ এদেশেই রয়েছে ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় অতীত। আমরা পেছনে তাকালে দেখি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণআন্দোলন, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে ছাত্রসমাজ গৌরবময় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই। স্বাধীন দেশে তারা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। এখন ছাত্ররা দেশের স্বার্থের কথা ভাবে না। তারা ভাবে নিজেদের স্বার্থের কথা। রাজনীতিতে তাদের যে আদর্শ ছিল তা আজ ভূলুণ্ঠিত। আর স্বার্থ যেখানে মুখ্য, সংঘাত সেখানে অনিবার্য। ছাত্র সংগঠনগুলো শুধু যে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে থাকে তা নয়, সংগঠনের অভ্যন্তরেও সংঘাত দানা বেঁধে ওঠে-স্বার্থে সামান্য আঘাত লাগলেই। ছাত্র সংগঠনগুলো অতিমাত্রায় দলীয় রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়ায় তাদের মধ্যে সহিংসতা বাড়ছে। সংগঠনগুলো সামান্য কারণেই প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হচ্ছে। অনেক মেধাবী ছাত্রের জীবন এভাবে অকালে ঝরে পড়ছে। সংঘাতের কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ। অথচ ছাত্র রাজনীতি এমন হলে তা থেকে অসততার, অন্যকে অত্যাচার করার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হবে। আর তা প্রায় হয়েই গেছে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়ায় কারা? আমরা কিন্তু জানি; এবং সব বুঝি। স্বাধীন দেশে ছাত্র রাজনীতি দলীয় ছত্র-ছায়ায় কতোটা প্রয়োজন সে কথায় না গেলাম, কিন্তু উদ্দেশ্য আর লক্ষ্যের ধার না ধারি ভাব নিয়ে যারা রাজনীতির নামে ‘ভাইগিরি’ করছে, এরা কারা? ছাত্ররা সবাই মিলে একটা দল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা শিক্ষা ব্যবস্থায় দাবি আদায়ের পাশাপাশি জন দুর্ভোগে এগিয়ে যেতে পারে তারা। কিন্তু তারা করছে ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি, দলবাজি এসব। বড় বড় নেতাদের তারা আমলেই নেয় না, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও বাস্তবে তারা মানে না। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি আজকাল বড় হলে যা হয়! দেশ যখন নানা ধরনের সংকট অতিক্রম করছে ঠিক সেই সময়ে সরকারি দলের সহযোগী এসব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মেতেছে ধর্ষণ আর সংঘর্ষে। নীতি আদর্শের সামান্য কোনো বালাই যে এদের মধ্যে নেই, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামমুখর জীবনের নানা দিক নিয়ে এরা যদি সত্যি পড়াশোনা করতো, আমার মনে হয় না, এরা কোনো জঘন্য কিছু করতে পারতো। এরা ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিতে পারে। কিন্তু কে হায় নগদ নারায়ণ ছেড়ে আদর্শের লড়াই করবে?
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ আর যুবলীগের এক শ্রেণির নেতাকর্মীরা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি টেন্ডারবাজী ও খুনোখুনিই যেন তাদের প্রধান কাজ। ছাত্রলীগ ছাত্র সংগঠন হলেও ছাত্রদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলন, ছাত্রদের লেখায়-পড়ায় এগিয়ে নিতে উৎসাহ দেওয়া ইত্যাদি ছেড়ে তারা নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলে নেমেছে। সবচেয়ে খারাপ লাগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পরও তারা থামছে না। টেন্ডারবাজি থেকে ভর্তিবাণিজ্য- সব কিছুতেই সংগঠনটি অপ্রতিরোধ্য। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া, জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার ৬৮ বছর। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক ঝাঁক মেধাবী ও প্রগতিশীল ভাবাদর্শের ছাত্রনেতাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভার মধ্য দিয়ে এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা ঘটে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং এগারো দফা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বাধীকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ মুজিব বাহিনী গঠন করে, যুদ্ধে অংশগ্রহন করে এবং বাংলাদেশ বিজয় লাভে ভূমিকা পালন করে।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ধংসাত্বক এবং আইনবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা যেতো আগে থেকেই; তবে বর্তমানে এটা সহ্যের বাইরে গেছে। বাংলাদেশে এই ছাত্র সংগঠনটি দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয় যখন এই সংগঠনের কিছু সদস্য বিশ্বজিৎ নামের একজন দর্জি দোকানীকে হরতাল চলাকালে ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাতের সময় কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। বিশ্বজিৎ সে সময় হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়াও সংগঠনটি প্রায়সময় ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, খুন, লুটপাটসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা দুর্ধর্ষ ক্যাডার জসিমউদ্দিন মানিক ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণের ‘সেষ্ণুরি উৎসব’ পালন করেছিল। আর এখনকার কীর্তিগুলোও এর চেয়ে কম নয়।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাশেদের কোচিং সেন্টারে ঢুকে তাকে বেদম মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতা রনি। এর আগে গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ চৌধুরীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সমালোচিত হন রনি। এছাড়া ২০১৬ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া বোর্ড স্কুল কেন্দ্রের বাইরে থেকে ভোটের সিলসহ রনিকে আটকের পর তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়। রনিকে আটকের সময় তার কাছে একটি নাইন এমএম পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। ওই সময় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে ইউপি ভোটে দায়িত্বরত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হারুন অর রশিদ ছাত্রলীগ নেতা রনিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু এদের কি আর জেলে থাকতে হয়?
গত ১৭ জুলাই তারিখে বাড়ি থেকে ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। বগুড়ার এই প্রভাবশালী নেতা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হননি, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দলীয় ক্যাডার ও এক নারী কাউন্সিলরকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন। শুক্রবার বিকেলে তাঁরা কিশোরী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। (সূত্র- http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1270381) গত ১১ জানুয়ারি ময়মনসিংহের মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীকে জোর করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ১০ নং হবিরবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর কবির। (সূত্র- http://m.ntvbd.com/bangladesh/132377)
গত ৮ মে, সোমবার কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা ও মনোহরপুর গ্রামের দুই মেয়ে কোটচাঁদপুরে আসে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঢাকায় যাওয়ার জন্য। রাতে তারা ট্রেনের জন্য কোটচাঁদপুরে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় যুবলীগ নেতা কৃষ্ণ, রাজু, সবুজ, আজগার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহিন তাদের উঠিয়ে নিয়ে প্রথমে বিহারীপাড়া ও পরে সরকারি কেএমএইচ ডিগ্রি কলেজের পেছনে রিকশাচালক আজিমের কলোনিতে নিয়ে যান। সেখানে সারা রাতভর মেয়ে দুইটির উপর নির্যাতন চালানো হয়। (সূত্র http://www.dhakatimes24.com/2017/05/10/32067)
গত ১৬ জুলাই চাঁদা না দেয়ায় স্বামীকে আটকে রেখে রাতভর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন হোসেন মোল্লা। (সূত্র- http://www.somoynews.tv/pages/details/82360)
তাছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ধর্ষণচেষ্টার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক তারিক হাসান তারেক।(সূত্র – http://m.banglatribune.com/country/news/156619
এছাড়াও নারীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলছে বাংলাদেশে গত বছর (২০১৬ সালে) এক হাজারেরও বেশি নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।(সূত্র- http://www.bbc.com/bengali/news-38548834)
যে ছাত্র সংঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত সেই ছাত্র সংঠনের কর্মী, নেতা-নেত্রীদের এমন অমানবিক, অনৈতিক এবং চরদখলের মত লাঠি হাতে শিক্ষাঙ্গনে মারামারি সাজে না। তাছাড়া, ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের কুকীর্তি, দখলবাজী, চাঁদাবাজী আর অনৈতিক কর্মকান্ডের ফলাফল ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেখেছি। সাধারন মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে নেগেটিভ মনোভব প্রকাশ করেছে এবং ভোট প্রদানের সময় সেই মনোভাব প্রয়োগ করেছে। ৯০ দশকে একটি সংগঠিত ছাত্র সংঠন কিভাবে নিম্মমুখী জনপ্রিয়তা গ্রহন করছে সেটাও দেখছি। প্রচন্ড প্রভাব নিয়ে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে থাকা একটি ছাত্র সংঠন আজ প্রায় মৃয়মান! কেন এই হাল সেটা কি ছাত্রলীগের সংগ্রামী নেতা-নেত্রী, কর্মীরা একটু ভেবে দেখেছেন?
দূর্নীতিবাজদের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হওয়া সময়ের ব্যাপার। সময় আছে সংশোধন হবার, সময় আছে অপরাধীদের সাজা দেবার, সন্ত্রাসীদের দলকে থেকে বিতারিক করার, দলকে কলুষমুক্ত করতে হবে, তা নাহলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে চরম মুল্য দিতে হবে। সন্ত্রাসীরা নিজ স্বার্থে চেহারা পরিবর্তন করতে পারলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কিন্তু পারবেন না। ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ আর যুবলীগের সন্ত্রাসীদের ধরতে বা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে খুব বেশি কষ্ট বা সমস্যা হবার কথা না। সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার। প্রতিটি ঘটনার পত্রিকায় স্থিরচিত্র আছে। পত্রিকায় নামও এসেছে, এক্ষুনি এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করুন। তদন্ত নামে সময়ক্ষেপন মানেই অপরাধীদের পুনরায় আপরাধ সংগঠনের সুযোগ করে দেয়া। যেসব কর্মী বা নেতাদের টেন্ডারবাজি ও ধর্ষণের খবর কিছুদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, এদের রেহাই না দিয়ে অনতিবিলম্বে পুলিশকে গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করুন, দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, পরবর্তী ঘটনাবলী এমনিতেই কমে আসবে। প্রতিটি পর্যায়ের ছাত্র নেতাদের অর্থের হিসেব নিন। ছাত্র নেতারা কিভাবে কোটি টাকার মালিক বনে যায বের করুন। কোন ছাত্রনেতা বা নেত্রীর বিরুদ্ধে একবারও যদি চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠে সাথে সাথে তাকে সংগঠনের পদ থেকে সরিয়ে দিন, পরবর্তী নেতারা একটু হলেও ভাববে। আর তা না হলে, অনেক দাম দিতে হবে দলের।
ছাত্রজীবন হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের সময়। জ্ঞান বিজ্ঞান, ইতিহাস দর্শন নিয়ে ভাবতে হবে, অধ্যয়ন করতে হবে সাহিত্য ও সংস্কৃতি। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা খুলে দেখতে পাই ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের চিত্র। অশুভ রাজনীতির হাতছানিতে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে তারা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ নষ্ট করছে। দলীয় রাজনীতির অশুভ স্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে দিলে বিদ্যার্জন ব্যাহত হতে বাধ্য। আর যে ছাত্রসমাজের ওপর দেশ ও জাতির অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা, যারা একদিন দেশের হাল ধরবে, তাদের মধ্যে এ হানাহানি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ না হলে দেশ কিভাবে উন্নত হবে? অনেক বাবা-মা কষ্ট করে তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান। অনেক আশা ও স্বপ্ন থাকে তাদের মনে—একদিন সন্তান মানুষ হয়ে তাদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটাবে। কিন্তু সন্ত্রাসের কারণে যখন তাদের সন্তান লাশ হয়ে বাড়ি আসে, তখন সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। মোটকথা ছাত্রদের রাজনীতি হবে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের উন্নয়নে। ছাত্র সংগঠনগুলো চলবে তাদের নিজস্ব ধারায়। প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আদর্শগত কিছু অমিল থাকলেও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে হবে, প্রতিযোগিতা আর প্রতিহিংসা এক জিনিস নয়। মনে রাখতে হবে, যারা তরুণদের বিপথগামী করার মন্ত্র শিখিয়ে কার্য হাসিল করছে, তারা দেশের প্রকৃত বন্ধু নয়, সে হোক কোনো বড় রাজনৈতিক দলের নেতা। আমাদের কজন নেতা দেশপ্রেমিক? আর যারা ছাত্র রাজনীতি করে, তাদের কয়জন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে, সে কী কারণে রাজনীতি করে? তারা যে ইতিহাসের কথা মুখে আওড়ায়, তার কিছু কি নিজেরা ধারন করে? আজকের ছাত্র নেতারা হয়তো জানে না, ইতিহাস কাউকে ছাড় দেয় না। আজ তারা যা করে যাচ্ছে তার ইতিহাস একদিন লেখা হবে। তখন তা আর ঢাকবে কে?
লেখক- তরুণ কবি ও কলামিস্ট।