কেমন মেয়ে সানিয়া মির্জা?
ভারতীয় টেনিস সার্কিটে সানিয়া মির্জাকে নিয়ে কত গল্প। সেগুলো আবার আমজনতার জানা নেই। খবরের ভিতরকার খবর ক’জন আর জানেন। সেগুলো জানলে সানিয়াকে নিয়ে তৈরি হওয়া আলোআঁধারি পরিবেশ হয়তো কেটে যেত। সানিয়া মির্জা মানুষটা কেমন? টেনিস কোর্টে তো তিনি খুবই আগ্রাসী। বাস্তব জীবনেও কি তিনি সেরকমই? সানিয়াকে খুব কাছ থেকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বলছেন হায়দরাবাদি কন্যা কোর্টের ভিতরে শুধু আগ্রাসী নন, ভীষণরকমের আগ্রাসী। জেতার জন্য মরিয়া চেষ্টা করেন। তাঁর জেতার পথে কেউ যদি কাঁটা হয়ে দেখা দেন, তাহলে সানিয়া সেই কাঁটা উপড়ে ফেলতেও পিছপা হন না। এমনটাই তাঁর জেতার তাগিদ। প্রয়োজনে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কবিতর্কও জুড়ে দেন তিনি। তবে সেই তর্ক মোটেও সীমা ছাড়িয়ে যায় না। খেলার মতোই সানিয়ার সভাবও আগ্রাসী। যেটা নিজে ঠিক বলে মনে করেন, সেটাকেই আঁকড়ে ধরেন। কেরিয়ারের শুরুর দিকে অনেকেই সানিয়া সম্পর্কে বলতেন, এই শট খেলা উচিত নয়, ওই শট খেলা উচিত নয়। সানিয়া কারোও কথা শোনেননি। নিজের মতো করে খেলে গিয়েছেন। নিজের উপরে অগাধ বিশ্বাস ছিল। আর তার জোরেই সানিয়া আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। নিজেকে একেবারেই বদলাননি তিনি। সানিয়া-পরিচিত একজন বলছিলেন, ‘‘ওকে আগেও যেমন দেখেচি, এখনও সেইরকমই দেখছি।’’
কোর্টে আগ্রাসী।
এতটা আগ্রাসী হলেন কীভাবে সানিয়া? তাহলে কি তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ‘ডোন্ট কেয়ার’ একটা ভাব আছে? ওয়াকিবহাল মহল বলছে উলটো কথা। সানিয়ার বাবা ইমরান মির্জা খুবই ভদ্রমানুষ। মা-ও তাই। সানিয়া একটু ব্যতিক্রমী। অবশ্য খেলোয়াড়রা তো এরকমই হন। সানিয়াঘনিষ্ঠ এক জন বলছিলেন, ‘‘আম্পায়ারের কোনও সিদ্ধান্ত ওর অপছন্দ হলেই চ্যালেঞ্জ জানায়। সহজে মানতে চায় না। ওকে বোঝাতে হবে। না-বুঝলে ও কিছুতেই মানবে না।’’ আবার খুব একটা অবুঝও নন সানিয়া। ইনচিওন এশিয়ান গেমসের মিক্সড ডাবলস ফাইনালের আগে খুব বৃষ্টি হয়। কিছুতেই আর বৃষ্টি থামে না। কিন্তু ফাইনাল তো করতেই হবে। বাধ্য হয়েই আয়োজকরা এসে আউটডোরের পরিবর্তে ইনডোরে ফাইনালের আয়োজন করেন। সানিয়ার কাছে গিয়ে বিষয়টা জানান আয়োজকরা। হায়দরাবাদি কন্যা বিষয়টা ভালভাবেই নেন। গোটা টুর্নামেন্ট আউটডোরে খেলার পরে ফাইনালে ইনডোরে নামেন সানিয়া। কোর্টে নামার পরে বোঝাই যায়নি অনভ্যস্ত কোর্টে খেলছেন। বিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দেন চ্যাম্পিয়ন এই তারকা। তার পরে সবাই বলতে শুরু করেন, ‘‘সানিয়াই আসলে সোনাটা জিতেছেন।’’
সাফল্যের হাসি। এরকমই সানিয়া। সুন্দরী তো বটেই। যেখানেই তিনি যান, সেখানেই সবাই তাঁকে ঘিরে ধরেন। সেলিব্রিটি হওয়ায় খুব সহজে তাঁর কাছে এখন আর পৌঁছনোও যায় না। অতিথি হিসেবে কোনও অনুষ্ঠানে গেলে আকাশছোঁয়া দর হাঁকান। সব অর্থেই সানিয়া ক্রাউডপুলার। দোহা এশিয়ান গেমসে কেবলমাত্র সানিয়াকে দেখার জন্যই জনপ্লাবন হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন এক আম্পায়ার। দোহায় যেখানে খেলা হচ্ছিল, সেখানে হাজার ছয়েক মানুষের বসার ব্যবস্থা ছিল। সানিয়ার খেলা দেখার জন্যই স্টেডিয়ামের বাইরে কুড়ি হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। এমনই জাদু সানিয়ার।
লক্ষ্যে অবিচল।
এ হেন টেনিস তারকা কিন্তু মোটেও সংস্কারের দাস নন। খেলতে নামার আগে নির্দিষ্ট হাতে র্যাকেট ধরেন না। একটা গেম শেষের পরে এসেই ধুপ করে বসে পড়েন চেয়ারে। সংস্কার নেই কোনও। মহিলাদের সার্কিটে একমাত্র সানিয়ারই বোধহয় সংস্কার নেই। খেলার বাইরে সানিয়া আবার অন্য মানুষ। গালগল্প করতে খুব ভালবাসেন। অন্যান্য মেয়েদের মতো লাজুক প্রকৃতির নন। বলিউডের নায়কনায়িকার সঙ্গে কানেকশন খুবই ভাল। খেলা হয়ে গেলে, তা নিয়ে আর ভাবতেই চান না। এমনটাই সানিয়া মির্জা।