কোটাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ভারত
প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলছে ‘ভারত বন্ধ’ আন্দোলন। ‘রিজার্ভেশন’ বা কোটা প্রথার বিরোধীরা ডেকেছে এই আন্দোলন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। হঠাৎ কোটাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। ১০ এপ্রিল বিহারের পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বিহারের আরা জেলায় বিক্ষোভ এবং ভাঙচুরের ঘটনায় এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হতে দেখা গেছে। এছাড়াও পাটনা, বেগুসারাই, লাখিসারাই, মুজাফফরপুর, ভোজপুর, শেখপুরা এবং দারভাঙা জেলায় শত শত মানুষ বিক্ষোভ করে, রাস্তা বন্ধ করে দেয়, রেল চলাচল আটকে দেয় এবং মার্কেট বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে। চাকরি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘রিজার্ভেশন’ বা কোটার প্রতিবাদে বিহারে আন্দোলন হয়। এই আন্দোলনে যোগদানকারী বেশিরভাগ মানুষই উচ্চবর্ণের হিন্দু। গত সপ্তাহে নিম্নবর্ণের দলিত শ্রেণীর মানুষের ডাকা এক ‘বন্ধ’ বা বিক্ষোভ আন্দোলন চলাকালীন ভাঙচুর ও মারামারি হওয়াতে রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। কিছু এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয় এবং বেশি সংখ্যক মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। রিজার্ভেশন সমর্থক এবং রিজার্ভেশন বিরোধী দুই দলের মাঝে সংঘর্ষে বিহারের আরা শহরে আহত হয়েছে এক ডজনেরও বেশি মানুষ। পরে পুলিশের লাঠিচার্জে এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে ওই শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাটনা, বেগুসারাই, লাখিসারাই, মুজাফফরপুর, ভোজপুর, শেখপুরা এবং দারভাঙা জেলায় শত শত মানুষ রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করে। এদিকে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর, মুজাফফরনগর, শামলি এবং হাপুরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফিরোজাবাদ জেলায় স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু কিছু জেলায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তরাখন্দের নৈনিতাল এলাকায় বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিছিল এবং বিক্ষোভও নিষিদ্ধ করা হয়। এই ঘটনায় মধ্য প্রদেশে সর্বমোট আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ওই রাজ্যে নিরাপত্তা সবচাইতে বেশি জোরদার করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২টি জেলায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গোয়ালিয়র-চাম্বাল এলাকায় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে ৬ হাজার পুলিশ। ১০ এপ্রিল রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারফিউ জারি ছিল। রাজস্থানেরও বিভিন্ন শহরে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, গত সপ্তাহে বর্ণবাদের প্রতিবাদে একইভাবে পথে নেমেছিল দলিত শ্রেণীর মানুষ। ২০ মার্চ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শিডিউলড কাস্ট অ্যান্ড শিডিউলড ট্রাইবস অ্যাক্ট (এসসি/এসটি অ্যাক্ট) আইনের ধারায় পরিবর্তন আনে। এই আইনের আওতায় নিম্নবর্ণের দলিত শ্রেণীর মানুষের ওপর বর্ণবৈষম্যমূলক কোন অপরাধ হলে অপরাধীকে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করতে পারত পুলিশ। কিন্তু আইনে পরিবর্তন আনার ফলে দ্রুত গ্রেফতার করা আর সম্ভব হবে না। দলিতদের আশঙ্কা, এর ফলে আরও বেড়ে যাবে তাদের ওপর অপরাধ এবং অত্যাচারের মাত্রা। ২ এপ্রিল, সোমবার এই আইন পরিবর্তনের প্রতিবাদে পথে নেমে আসেন দলিত শ্রেণীর হাজার হাজার মানুষ। ভারতের অন্তত ১০টি রাজ্যে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। রেলওয়ে আটকানো হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকানপাট।