ক্রিকেট উৎসবের অপেক্ষায় সিলেট
মান্না চৌধুরী-রাজিন সালেহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন অনেকদিন হয়। তাপস বৈশ্য স্থায়ী হয়েছেন আমেরিকায়। অলক কাপালী আর এনামুল হক জুনিয়র এখনো পেশাদার ক্রিকেটার। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ, বিপিএল খেলছেন নিয়মিত। কাপালী,এনামুল স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে ফেরার। তাপসের সঙ্গে বাকি তিনজনের দেখা হয় না বেশ কিছুদিন।ব্যস্ততা রাজিন, অলক, এনামুলকেও এক করে না সবসময়। জাতীয় লীগ বা বিসিএল’র খেলা তিন তারকার মিলন ঘটায়। সিলেটের হয়ে তিনজনই জাতীয় লীগ খেলছেন নিয়মিত। আগামী নভেম্বরে সাবেক চার তারকা ক্রিকেটারকে দেখা যেতে পারে একসঙ্গে। সিলেটের মাটিতে প্রথম টেস্ট ম্যাচের সাক্ষী হতে তারা থাকবেন মাঠে। রাজিন, অলক, এনামুল দেশেই আছেন। তাপসেরও তখন আমেরিকা থেকে উড়ে আসার কথা। শুধু রাজিন, অলকরা নন ঐতিহাসিক সেই ক্ষণটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় আসলে পুরো সিলেটই। ইতিহাসের সাক্ষী হতে এখনো তিন মাস বাকি। কিন্তু উত্তাপ শুরু হয়েছে বিসিবি’র দিন কয়েক আগের এক ঘোষণায়। চলছে ক্ষণগণনা, বাড়ছে মাঠে বসে খেলা দেখার আকাঙ্ক্ষা। টিকিটের জন্য তাই এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে তৎপরতা। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৮ বছর পর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে সিলেটের। গড়ে ওঠার পাঁচ বছরের মাথায় দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে নভেম্বরে অভিষেক হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। ২০১৪ সালে সিলেট শহরতলীর লাক্কাতুরায় প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠে ১৪ হাজার ধারণ ক্ষমতার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পাহাড়, টিলা আর চা বাগান ঘেরা স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য এরই মধ্যে মুগ্ধ করেছে দেশ-বিদেশের অনেককে। চার বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের জন্য দ্রুত কাজ শেষ করা হয় দেশের অষ্টম আন্তর্জাতিক ভেন্যুর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক অভিষেক। ছেলেদের ছয়টি আর মেয়েদের অনেকগুলো ম্যাচ হয়েছে সেবার সিলেটে। এরপর লম্বা বিরতি। কাজের চাপে চাপা পড়ে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম। গ্যালারির আসন সংখ্যা বাড়ানোসহ মাঠ গ্যালারির আধুনিকায়নে লম্বা সময় ব্যয় হয়। সিলেটবাসীর হতাশাও তাই বাড়ে। কাজ শেষ হলে গত বছরের শেষে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ভেন্যু হয় সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বিপিএলের আট ম্যাচে সিলেটের গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। বিপিএলের পর চলতি বছরের ১৮ই ফেব্রুয়ারি সিলেটে হয় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। বিপিএল আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ক্রিকেট উৎসব দেখে সিলেটে ম্যাচ আয়োজনে আগ্রহী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আগামী ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। এদিকে ওয়ানডের আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণায় সিলেটে এখন ক্রিকেটের হাওয়া। ২ টেস্ট আর তিন ওয়ানডে খেলতে আগামী ১৬ই অক্টোবর ঢাকা আসবে জিম্বাবুয়ে দল। ১৯শে অক্টোবর প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে হবে ২১শে অক্টোবর মিরপুরে। অন্য দুই ওয়ানডে ম্যাচের ভেন্যু চট্টগ্রাম। ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ হবে ২৪ ও ২৬শে অক্টোবর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু হবে সিলেটে। ৩রা নভেম্বর দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হবে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। ১১ই নভেম্বর মিরপুরে হবে দ্বিতীয় টেস্ট। সিলেটের আগে দেশের আরো সাতটি ভেন্যুতে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম, নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম ও বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের সাক্ষী হয়ে আছে। আগামী ১৫ই নভেম্বর ২ টেস্ট আর তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে হবে সিলেটে।
রাজিন সালেহ পত্রিকা পড়েই জেনেছেন বিষয়টা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ নিজের শহরে টেস্ট ম্যাচ দেখবেন বলে অনেকটাই রোমাঞ্চিত। এখন তাবলীগ জামাত নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটে রাজিনের। আর রাজিন বলেন, টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হবে সিলেট স্টেডিয়ামের, এই ক্ষণটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। এই পাঁচদিন মাঠ আর বাসাই হবে আমার ঠিকানা। সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি ফরহাদ কোরেশীর আনন্দটাও বাঁধভাঙা। তিনি বলেন, সিলেটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলা হয়েছে। বিপিএল আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচও হয়েছে। কিন্তু এসব আয়োজনও যেন পূর্ণতা দিচ্ছিল না সিলেটকে। ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য টেস্ট এবার হবে সিলেটে। সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচও। তাই একজন সিলেটি হিসেবে আমি আনন্দিত।