খালেদা জিয়ার দণ্ড হলে আরেক ইতিহাস
হাসপাতাল আমার কাছে নিঃসঙ্গ-বিষাদ। তবুও সে গভীর মমতায় মাঝে মধ্যেই আমাকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের শয্যায়। শরীর বিকল হলে অসহায়ের মতো সমর্পণ করি। নিয়ম ভেঙে, প্রথা ভেঙে চলার ক্ষমতা তখন থাকে না। যে যাই বলুক, ভালো চিকিৎসক আর বাড়ির মতো সেবা মিলে বলেই ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল বরাবর আমার পছন্দের। দেশের প্রখ্যাত বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলী হোসেন সকাল-রাত্রি রোগীদের যে সেবা দেন, সবাই হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন। ল্যাবএইডে কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাহবুবুর রহমান আমার হৃদয় মেরামতের দায়িত্ব পালন করেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের ডা. মমিনুজ্জামন, দিল্লীর স্কটের অশোক শেঠ, নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড জুইস হাসপাতালের ডা. অ্যালেক্সজান্ডার হয়ে নিয়মিত দেখবাল মাহবুবুর রহমান করেন। ডা. মাহবুব একজন প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্টই নন, রোগীদের সঙ্গে তার বিনয়ী ব্যবহার মুগ্ধকর। চিকিৎসা সেবাকে দেশে যারা ইবাদতের মতো নিয়েছেন তিনি তাদের একজন।
ল্যাবএইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আবু শামীম চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে সাফল্য দেখিয়েছেন তার মূল শক্তি হচ্ছে রত্ন সংগ্রহে তিনি ভুল করেননি। এক বছর আগে ফুসফুসের কোল্ড এ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। অধ্যাপক আলী হোসেন গভীর যত্নে সেরে তুলেছিলেন। এবারও অনিয়মিত জীবনযাপন, দূষিত নগরীর কুফল, শ্বৈত্যপ্রবাহের আঘাত সময় মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হওয়ায় রীতিমতো আজাব ভোগ করেছি। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছি। কিন্তু এবারের মতো কখনো অসুখ আমাকে এত শাস্তি দিতে পারেনি। কাঁশিতে গোটা শরীর ব্যাথায় কুঁকড়ে যায়, মাধবীর টেলিফোন হাত থেকে পরে যায়।
হাসপাতালের কেবিনের টেলিভিশনে খবর, টক শো দেখতে গেলেই অস্বস্তি বাড়ে। অসুস্থ শরীরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরে। দেশে একের পর এক ঘটনা রাজনীতিকে মুখোমুখি সংঘাতের পথেই টানছে না; দেশের মানুষকেও আলোড়িত করছে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দু’দিন আগেই দেশের বর্ষীয়ান শিল্পপতি জয়নুল হক শিকদারের সঙ্গে শরীয়তপুরের বেদরগঞ্জের মধুপুর গ্রামে উড়ে গিয়েছিলাম। গ্রাম আমাকে টানে। কিন্তু সেখানে না গেলে জানা হতো না, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকারীরা দেশটাকে কতটা বদলে দিচ্ছেন?
এক সময়ের বিস্তীর্ণ জলাশয়খ্যাত মধুপুরের মা-বাবার স্মৃতি বিজড়িত কবর ও মসজিদকে ঘিরে আবেগ অনুভূতি নিয়ে একজন জয়নুল হক শিকদার বদলে দিচ্ছেন উন্নয়নে। জলের মধ্যে দ্বীপের ওপর নান্দনিক বাড়িই তৈরি করেননি, মনোয়ারা হক মেডিকেল কলেজ, জে আই শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হল, শিক্ষক অফিসারদের ডরমেটরি, এরোনটিকেল প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট গড়ে তোলায় এক সময়ের অঝোপাড়াগা খ্যাত মধুপুর এখন তার হাতের ছোঁয়ায় ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে। কি পরিকল্পিতভাবে দক্ষিণাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষাই নিচ্ছে না, ডাক্তার থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে তরুণরা বেরিয়ে আসছে যরা কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।
আসাম থেকে শৈশব কাটিয়ে আসা সোহরাওয়ার্দী, ভাসানীর সান্নিধ্য থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিবিড় আদর্শিক ও আত্নার বাঁধনে জড়ানো জয়নুল হক শিকদারের বাহিরে যতো কড়া, ভিতরে ততো কোমল। অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদরাও তাকে পিতার মতো সম্মান করেন। নিরবে-নিভৃতে শুধু দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প বাণিজ্য খাতেই যে ব্যাপক বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন তা নয়। নিরবে-নিভৃতে মানবিক হৃদয় নিয়ে গরীবের জন্য, অসহায়ের জন্য কাজ করে যাচ্চেন। আল্লাহ ভীরু, নামাজি ও অলি-আওলিয়াদের মাজারপ্রেমী এই মানুষটি বিশ্বাস করেন, গরিবের দোয়া কাজে লাগে, বড় লোকের দোয়া নয়।
প্রায় ৯০ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসেও তার প্রখর স্মৃতিশক্তি, মেধা ও সকাল-রাত্রি কর্মস্পৃহা দেখে অবাক হতে হয়। তার বদলে দেয়া মধুপুর ঘুরে এসে ভেবেছিলাম সরকারের উদ্দেশ্যে লিখবো বেসরকারিখাতকে আরো বেশি প্রসারিত করে শিল্পবান্ধব হয়ে উঠার। আগ্রাসী বিনিয়োগকারী ও সাহসী শিল্পপতিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার। বেসরকারি খাত ছাড়া উন্নত আধুনিক রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা যাবে না। আধা সমাজতান্ত্রিক, রক্ষণশীল ধ্যান ধারণায় আর যাই হোক দেশকে সিঙ্গাপুরের মতো করা যাবে না।
যাক, কথা বললেই নানান কথা এসে যায়। দেশে এই মুহুর্তে রাজনীতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় কি হবে এই নিয়ে। সকল মহলই যেন প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে খালেদা জিয়া এই মামলায় দণ্ডিত হচ্ছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায়ে তিনি দণ্ডিত হলে কারবাস যাপন করতে হচ্ছে। মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়ে উচ্চ আদালতে তার আইনজীবীরা আপিল করতে গেলে রোববার, সোমবার গড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার ৩-৪ রজনী জেল খাটা হয়ে যাবে। এমনটি অনেকে মনে করছেন। তবে নিম্ন আদালত রায়ে দণ্ডিত করার পাশাপাশি জেলহাজতে না দিয়ে যদি জামিন দিয়ে দেয় তাহলে খালেদা জিয়া ঐ তিন চার রাতের জেলভাত খেতে হবে না। আর যদি নিম্ন আদালত জামিন না দিয়ে দণ্ডিত করে জেলহাজতে পাঠায় তাহলে রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়ে আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আপীল করবেন। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত মামলা স্থগিতাদেশ দিয়ে জামিন দিলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হবেন না। তবে দণ্ডিত হলে জামিনে কাটালেও রাজনৈতিক ময়দানে, আদালতের বারান্দায় অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজ হিসাবে নিয়মিত দৌঁড়ঝাপ করতে হবে। সামনে কি ঘটে সেটি অনেক নাটকীয়তায় ভরা থাকবে এটি মনে হচ্ছে। রাজনীতিতে মৃদুমন্দ উত্তাপ থাকলেও আগুন জ্বলবে না। দহন থাকবে কিন্তু বিস্ফোরণমূখী পরিস্থিতে যাবে না।
ওয়ান ইলেভেনের সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি আওয়ামী লীগ সরকার চালিয়ে যাওয়ায় টানা ১০ বছরে বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ২৩৬ কার্যদিবসের মামলায় ২৮ কার্যদিবস বেগম খালেদা জিয়া তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অতীত তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি এটিকে যেমন রাজনৈতিক মামলা হিসাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে, তেমনি সরকার ও তার আইনজীবীরা মামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্তকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। গণমাধ্যমের ভূমিকা তো রয়েছেই। মামলায় যদি বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত হন, তবে এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনিই হবে দ্বিতীয় সরকার প্রধান যিনি একটি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হলেন। সেনাশাসক এরশাদের আগে পরে কোনো সরকার প্রধানকেই দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হতে হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে ১৯ টি মামলা এরশাদের ওপর দায়ের হয়েছিল। সেই সব মামলার অনেকগুলো পর্যবেক্ষকদের বিবেচনায় রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাও ছিল। ২৭ বছরে সব মামলা নিষ্পত্তিও হয়নি। সব সরকারই এরশাদের মামলা নিয়ে ইঁদুর বিড়াল খেলেছেন। জনতা টাওয়ার মামলায় রওশন এরশাদ টাওয়ার হারিয়েছেন। টাওয়ার চলে গেছে রাষ্ট্রের হেফাজতে। মাঝখানে এরশাদ দণ্ডিত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, জরিমানা দিয়ে বেরিয়েছেন।
বিচারের রায়ে বেগম খালেদা জিয়া পুত্র তারেক রহমানসহ দণ্ডিত হলে রাজনৈতিক বিষ্ফোরণ যে ঘটবে না সেটি বলা যায়। বিএনপির রাজনৈতিক শক্তি দমনের পরীক্ষায় এই সরকার অতীতে যেমন উত্তীর্ণ হয়েছে এবারও তেমনি রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে। কিন্তু প্রশ্ন অনেকগুলো সামনে এসে যায়। আমরা সব সময় বলে আসছি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। খালেদা জিয়ার মামলা যদি তার দলের অভিযোগ অনুযায়ী রাজনৈতিক হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়- এরশাদের মামলাও কি রাজনৈতিক ছিল? দুজনের মামলাই যদি রাজনৈতিক হয়, তাহলে আগামী দিনেও অনেককে রাজনৈতিক মামলার প্রতিহিংসা পোহাতে হবে? আর সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী যদি বলা হয়ে থাকে, এটি ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন; তাহলে দেশের মানুষের জন্য কি আগামী দিনে ন্যায় বিচারের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে? এই সত্যই কি তবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যত বড়ই ক্ষমতাবান হন না কেন; অপরাধ করে থাকলে একদিন তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে না, শাস্তিও ভোগ করতে হবে। সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমধিকার রয়েছে। কারো জন্য আইন ছোট, কারো জন্য বড় হতে পারে না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন-এমনটি হতে পারে না।
একের পর পর ক্ষমতাবানদের জন্য বিচারের দরজা এভাবে উন্মুক্ত হতে থাকলে আমরা আশাবাদী হতেই পারি যারা জনগণের সম্পদ লুট করে নেন, যারা ব্যাংকিং সেক্টর, শেয়ারবাজার থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে নিয়ে যায় তাদেরও একদিন বিচার হবে। ন্যায় বিচারের দরজা খুলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই বিচার হয়ে থাকলে দেশ ও মানুষের জন্য শুভ ইঙ্গিত। ভোটের বছর শুরুতেই উত্তেজনা, নাটকীয়তায় ভরপুর হয়ে উঠলো খালেদার বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে। সেলুলয়েডর ফিতায় এই বছরের রাজনীতির দৃশ্যপট একের পর এক মানুষ দেখবে, উপভোগ করবে, তুমুল কৌতুহল নিয়ে বসে থাকবে শেষ দৃশ্যের উত্তেজনায়।
তথ্য প্রযুক্তি আইন ৫৭ ধারা বাতিলের জন্য গণমাধ্যম স্বোচ্চার ছিল। বহুবার লিখেছি, বলেছি ৫৭ রশিতে বাঁধা আমার দু’হাত খুলে দাও। তুমুল সমালোচনা, প্রতিবাদের মুখে সরকার সেটি বিলুপ্ত করলেও সেই ধারায় বর্ণিত অপরাধ ও শাস্তির বিধান পুর্নবিন্যাস করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ খসড়া অনুমোদন করেছে সরকার। আইনটির ৩২ ধারা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ডিজিটাল অপরাধের বদলে গুপ্তচরবৃত্তির সাজার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঢুকে কেউ কোনো কিছু রেকর্ড করলে তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এরজন্য ১৪ বছরের জেল, ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিস্তারিত বর্ণনায় না গিয়ে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই ৩২ ধারায় এমন শাস্তির বিধান থাকলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে পতিত দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি, আধাসরকারি ও সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান লাঘামহীন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবে। চোখের সামনে সত্য দেখে ও শুনে গণমাধ্যম তার তথ্য-উপাত্ত, প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে না। একজন গণমাধ্যমকর্মী হয়ে উঠবে গুপ্তচর। স্বাধীন গণমাধ্যম হোঁচট খাবে। দেশের সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীসহ সিভিল সোসাইটির সঙ্গে আলোচনা না করে এই রকম একটি স্বাধীন গণমাধ্যম বিরোধী সংবিধানের চেতনার সঙ্গে বিপরীতধর্মী আইনপ্রণয়ন যুক্তিযুক্ত হবে না। ৯ বছর দাপটের সঙ্গে সেনাশাসক এরশাদ রাষ্টপরিচালনা শেষে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সাড়ে ৬ বছর জেল খেটেছেন। জেলে থেকে দু’দুবার ৫ টি করে আসনে বিজয়ী হলেও টের পেয়েছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। বেগম খালেদা জিয়া গণরায়ে দু‘বার এবং সাংবিধানিকসহ ৩ বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার ক্ষমতার আশ্রিতদের দাপটের তাপ কতটা অসহনীয় সেদিন দেখেছিল বাংলাদেশ। এক হাওয়া ভবনের দাপটে তার সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরাও শান্তিতে ঘুমাতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একুশের গ্রেনেড হামলায় উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও আজকের রাজনৈতিক জীবনের সবচে দুঃসময়ে একটি গণমিছিল ক্ষমতা দেখানো যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতানির্ভর ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয়, এটি সরকারে না থাকলেই বুজা যায়; থাকলে বুঝা যায় না।
৭৫ এর একুশ বছর আওয়ামী লীগ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। ২০০১ এর পর ৭ বছর দেখেছে। শিক্ষা কতটা নিয়েছে জানি না? এরশাদ দেখেছেন, জেনেছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। খালেদা জিয়া দেখছেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। তাদের পরিণতি দেখে আওয়ামী লীগের উপলব্ধি করা উচিত, ক্ষমতা আসলেও চিরস্থায়ী নয়। কাল হোক, পরশু হোক একদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে যাবে। সেইদিন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের ওপর যাতে পরবর্তী শাসকেরা অন্যায় জুলুম করতে না পারে, আওয়ামী লীগ পরবর্তী শাসকরা যাতে স্বৈরশাসকের প্রতিহিংসার রূপ নিয়ে মানুষের অধিকার খর্ব করে গণমাধ্যমের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিয়ে দমবন্ধ পরিস্থিতির অন্ধকার যুগ নামাতে না পারে সেই বিবেচনা রাখা উচিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়, মানুষের অধিকারের পথ রুদ্ধ হয়, প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে যায় এমন পথ বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নিতে পারে না। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের অধিকার ও মানুষের অধিকারের পক্ষে না থাকলে মানুষ দাঁড়াবে কোথায়?
লেখক: প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন