চান মিয়া’র পাঠানো ছাতকের কিছু সংবাদ
৭টি মহিষের মধ্যে শেষ সম্বলটুকুও এখন নেই
ছাতকে হাওরের পানিতে ডুব দিয়ে খাদ্য খাওয়ায় ইউরেনিয়ামের বিষাক্ত তেজসক্রিয়ায় একই পরিবারের ৭টি মহিষের মধ্যে সর্বশেষ সম্বল মহিষটিও মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৭এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টায় উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামে এঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাতিরকান্দি গ্রামের মৃত আবদুল কাহার-কালা মিয়ার পুত্র লিলু মিয়ার একমাত্র সম্বল ছিল ৭টি মহিষ। এগুলো দিয়ে তিনি অন্যের জমি বর্গা চাষ করতেন। লিলু মিয়ার নিজের কোন জমি-জমা না থাকলেও আমন ও বোর মৌসুমে মহিষের বদৌলতেই ভাড়াল ভর্তি ধান তুলতেন। স্বামি-স্ত্রী, ২সন্তান, মাতা ও একভাইসহ ৬সদস্যের পরিবার চলতো সূখেও স্বাচ্ছন্দ্যে। কিন্তু হঠাৎ করে এসূখি পরিবারের উপর বজ্রপাত যেন আঘাত হানলো। একপর্যায়ে গত ২২ ও ২৪এপ্রিল ৭টির মধ্যে ৬টি মহিষ মারা যায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৭এপ্রিল) বেঁচে থাকা অপর মহিষটিও মারা গেছে। ৭টি মহিষ হারিয়ে লিলু মিয়া এখন পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন। চিরাচরিত নিয়মে গ্রামের পার্শ্ববর্তী নাইন্দার হাওরে পানিতে ডুব দিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে এগুলো অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুবরণ করতে থাকে। মারা যাওয়ার আগে পেট ফুলেও ১০৭ডিগ্রীর উপরে জ্বর থাকে। মারা যাবার পর পায়খানার রাস্তাও মূখ দিয়ে রক্ত বের হয়। এব্যাপারে লিলু মিয়ার চাচাতো ভাই গোলাম মোস্তফা তালুকদার জানান, মহিষগুলো ছিল তিনির পরিবার নির্বাহে একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সবগুলো মহিষ মারা যাওয়ায় পরিবারের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা- কখনও পূরণ হবার নয়। এব্যাপারে সহায়তার জন্যে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাক্তার ছাইফুল ইসলামও ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার আবদুস শহিদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার (২৭এপ্রিল) ঢাকা থেকে একটি তদন্ত টিম এসে জীবিত মহিষটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কিন্তু রাতেই এটি মারা যাওয়ায় শুক্রবার (২৮এপ্রিল) মহিষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যক্ষ কেটে ময়না তদন্তের জন্যে নিয়ে আসা হয়েছে।
১০টাকা কেজির চাল না পেয়ে হতদরিদ্রদের বিক্ষোভ
ছাতকে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির ১০টাকা কেজির চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ডিলাররা হতদরিদ্রদের চাল আত্মসাত করতে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা ছল-ছাতুরী। অনেকে মাসের সব চাল বাজারে বিক্রি করে কার্ডধারীদের স্বাক্ষর রেখে চাল না দিয়েই খালি হাতে তাদেরে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে চলতি এপ্রিল মাসের চাল না পেয়ে শুক্রবার (২৮এপ্রিল) চরমহল্লাবাজারে বিক্ষোভ করেছেন হতদরিদ্ররা। চরমহল্লা ইউপির ১, ২, ৩ ও ৪নং ওয়ার্ডের ডিলার জনৈক ফজলুল করিম ২০এপ্রিল সরকারি গুদাম থেকে ৭মেঃটন চাল উত্তোলন করেন। কিন্তু এগুলো চরমহল্লাবাজারে বিতরনের কথা থাকলেও বিতরন না করায় তারা এ বিক্ষোভ কর্মসূটি পালন করেন। জানা গেছে, কর্তৃপক্ষে সুষ্টু তদারকি না থাকায় ডিলাররা একমাসের চাল নেয়ার সময় একই সাথে দু’মাসের টিপ সহি রেখে প্রতারনার মাধ্যমে গরিবের চাল আত্মসাত করছেন। গত ২০এপ্রিল এসব ওয়ার্ডের ৭মেঃটন চাল সরকারি গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়। এব্যাপারে ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনও গিয়াস উদ্দিনসহ অনেকে জানান, এপ্রিল মাসের চাল হতদরিদ্রদের মধ্যে এখনো বিতরণ করা হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার আবুল হাসনাত জানান, ১০টাকা কেজির চাল ডিলাররা বিতরণ করে থাকেন। এগুলোর তদারকিও করেন সংশ্লিষ্টরা। এব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাহাব উদ্দিন অভিযোগ পেলে জড়িত ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
১২হাজার হেক্টর ভূমির সাড়ে ৪শ’কোটি টাকার ক্ষতি
ছাতকে এবারে চৈত্র মাসের প্রথম দিকে আসা আগাম বন্যায় ১২হাজার হেক্টর জমির বোর ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উপজেলার ৮৪হাজার ৪শ’ ৩০পরিবারে নেমে চরম অমানিশা। বন্যায় সাড়ে চার শ’কোটি টাকার ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছেন এলাকাবাসি। ১৩ইউনিয়নও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ছাতক উপজেলায় অন্যান্য এলাকার ন্যায় আগাম বন্যায় কৃষকের সব স্বপ্ন স্বাধ ভেঙ্গে দিয়েছে। এখানে পানিতে তলিয়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১২হাজার হেক্টর জমির ফসল। এখানে ৮৪হাজার ৪শ’ ৩০টি পরিবার ছাড়াও আদিবাসি সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে ২হাজার ৮শ’ ২৬জন। এরমধ্যে অনেক পরিবার ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও সমাজের সকল শ্রেণীর পরিবার বিভিন্নভাবে কৃষি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। অনেকের জমি না থাকলেও জমি প্রান্তিক ও বর্গা নিয়ে ফসল ফলান। এখানে ১২টি খালের প্রায় সবগুলোই এখন কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। সোয়া ৩লক্ষাধিক জনসংখ্যার এ উপজেলায় জলমহাল রয়েছে ৬০টি। এবারে ১১হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে বোর ফসল ফলানো হয়। এতে সাড়ে ৪শ’কোটি টকার চাল উৎপাদন হতো। কিন্তু বন্যায় তাদেরে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে। ফলে এখন ধনী-গরিব সবাই যেন এককাতারে এসে দাড়িয়েছেন। এরমধ্যে সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগে কৃষক যেন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানে ধান না ওঠায় গোখাদ্য সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। এঅবস্থায় অনেকে পানির দরে বিক্রি করছেন গবাদিপশু। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসির উল্লাহ জানান, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ১০হাজার কৃষকের নামে জনপ্রতি ৩ কেজি চাল ও নগদ ৫শ’টাকা করে বরাদ্ধ এসেছে। এগুলো ১২দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একে বদরুল হক জানান, আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ৩৮হাজার ২শ’ ৬জন কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। এদিকে সুনামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা আসার খবরে এখন কৃষককূলে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে। ধান, মাছ, হাঁস, গবাদিপশু ও সবজিসহ সব কিছু হারিয়ে নির্বাক ক্ষতিগ্রস্থদের জন্যে প্রধামন্ত্রী কি নতুন বার্তা নিয়ে আসছেন এ প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন ছাতকবাসী।