ছাতকের কিছু খবর পাঠিয়েছেন মাহবুব আলম
একদিনে ৪জন ও ৪দিনে ৬জনের মৃত্যু
ছাতকে সন্ত্রাসী হামলা, সংঘাত-সংঘর্ষ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও গুপ্ত হত্যাসহ একদিনে ৪জনসহ চার দিনে ৬জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। ১৫মে’ থেকে ১৮ম’ পর্যন্ত চার দিনে পৃথক ঘটনায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৮মে’ একদিনে খুন ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে ৪জন। মৃত ৬জনের মধ্যে ৩জনই জাউয়া এলাকার বাসিন্দা। ১৫মে’ বিকেলে ফুটবল খেলা নিয়ে নোয়ারাই ইউপির বড়গল্লা ও উলুরগাও গ্রামবাসির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় লোকমান আহমদ (২৫) নামের এক যুবক নিহত হয়। আহত হয় কম পক্ষে আরো ২৫ব্যক্তি। আটক হয় মেহমানসহ ৩ জন। ১৮মে’ জাউয়াবাজারে হাবিদপুর জাউয়া কোনাপড়ার মধ্যে সংঘর্ষে হাবিদপুর গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের পুত্র হাফেজ আবু সাইদ (২৮) নামের এক মাদরামা শিক্ষক নিহত হয়। সংঘর্ষ থামাতে প্রায় ঘন্টাখানেক পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বিনন্দপুরের গ্রামের অইছত উল্লাহর পুত্র সুলতান আলী (৫৫) নামের অপর এক বৃদ্ধ। ১৮মে’ অপর ঘটনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরন করেন হুমায়ূন কবির (৩৫) ও মামুন আহমদ (২৬) নামের দু’সহোদর। উপজেলার চরমহল্লা ইউপির গারুচোরা-বল্লভপুর গ্রামের মরহুম সিরাজুল ইসলাম মেম্বারের বাড়িতে চালের গ্রীলের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে তারা মারা যান। দু’ সহোদর উত্তর খুরমা ইউপির রাখা রসুলপুর গ্রামের মুহুম জমির আলীর পুত্র। ১৬মে’ ফেঞ্চুগঞ্জ রেল ষ্টেশনের পাশ থেকে মুন্তাহিন রাজ্জাক মামুন (২৫) নামের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে জিআরপি পুলিশ। সে শাহজালাল বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র। মুন্তাহিন রাজ্জাক মামুন ছাতক উপজেলার জাউয়া এলাকার বাসিন্দা এবং নর্থ-ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. আবদুর রাজ্জাক ও ডা. হুসনে আরার পুত্র। জানা গেছে সে প্রায় এক বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছিল।
সহায়তার দাবিতে ব্র্যাক অফিস ঘেরাও
ছাতকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্র্যাকের গ্রাহকদের সহায়তা না দেয়ায় ব্র্যাকের দোলারবাজার ব্রাঞ্চের সামনে বিক্ষোভ ও অফিস ঘেরাও করেছে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। শনিবার দুপুরে ব্র্যাক কার্যালয়ের সামনে শতাধিক মহিলা গ্রাহক ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। এসময় তারা ম্যানেজারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেন। এছাড়া তারা এককালীন নগদ অর্থ সহায়তা, দীর্ঘ মেয়াদী সুদমক্ত ঋণ, চলমান কিস্তি মওকুপেসহ অন্যান্য দাবি জানান। এ সময় দোলারবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের নারী গ্রাহকদের মধ্যে আম্বিয়া বেগম, পিয়ারা বেগম, আয়শা বেগম, রহিমা আক্তার, জমিলা খাতুন, ফিরোজা বেগম, খুদেজা বেগম, সমছুন্নেছা, মায়া বেগম, আম্বিয়া খাতুন, মনোয়ারা বেগম, আয়েশা আক্তার, নিয়তি রানী দাস, সুধা রানী দাস, নুরজাহান বেগম, নেহারুন নেছা, শেলী রানী দাস, সুশান্তি বৈদ্য, গুলবাহার বেগম, শাহানারা বেগম, সালেহা খাতুন, সায়রা বেগম, দিলারা বেগম, জুবেদা খাতুন, জাহানারা বেগম, ফুল নাহার, লক্ষ্মী রানী দাস, ছায়ারুন নেছা, আনোয়ারা বেগম, হাসনা বেগম,শাহানা আক্তার, মর্জিনা বেগম, শবনম বেগম, তেরাবান নেছা, আলেয়া বেগমসহ শতাধিক নারী উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপরে দোলারবাজার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবদুস সাত্তার জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হতদরিদ্র গ্রাহকদের মধ্যে এ ব্রাঞ্চ থেকে ৯শ’জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তালিকা বাতিল করে দেন। কোন সহায়তা আসলে গ্রাহকদের প্রদান করবেন বলে তিনি জানান। ব্র্যাকের এরিয়া ম্যানেজার খলিলুর রহমান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্র্যাকের গ্রাহকদের মাঝে চলতি মাসের প্রথম সাপ্তাহে ১৩ শ’ লোকজনের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার ৫টি ব্র্যাক অফিসের মধ্যে দোলারবাজার শাখার আওতাধিন কোন ক্ষতি না হওয়ায় এখানে কোন অনুদান দেয়া হয়নি।
৬ গ্রামবাসির প্রতিবাদ সভা
ছাতকের ছৈলা-আফজালাবাদ ইউপির খলাগাঁও গ্রামে ৬গ্রামবাসির এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্টিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ইউপি সদস্য মিলন লাল ধরের সভাপতিত্বে ও ফয়জুল হকের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, সাহিদ আলী, হানিফ আলী, গৌরাঙ্গ, মনাই মিয়া, ছায়েদ মিয়া, আবদুল মালিক, আবদুল আহাদ, আকিক মিয়া, বাবুল মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, নিবারণ দাস, আবদুল করিম, জিলু মিয়া, সুরেশ দাস, আবদুস শহিদ, আজাদ মিয়া। সভায় মোশাহিদ আলী, মছদ্দর আলী, ইলিয়াছ মিয়া, মনির উদ্দি, আবদুল খালিক মনাই, কামাল উদ্দিন, আবদুল হামিদ, শামিমুল আলম, আনসার আলী, দ্বীপঙ্কর, সাবেক মেম্বার লিলু মিয়াসহ খলাগাঁও, বিনোদপুর, বাগইন, কহল্লা, বানারশিপুরসহ ৬গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, খলাগাঁও গ্রামের মৃত সাজ্জাদ মিয়ার বসত ঘরে গৃহ পরিচারিকার কাজে নিয়োজিত সুজিনা বেগম (১৭)কে গৃহকর্তার পুত্র মামুন, মনাফ মিয়ার পুত্র রোমান ও চেরাগ আলীর পুত্র রাজু তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এতে সে ৪মাসের অন্তঃসত্তা হলে তার পিতা ওয়ার্ড মেম্বার মিলন লাল ধরসহ গ্রামের কিছু লোককে অবহিত করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর দু’দিন পর হাসপাতাল থেকে ঘটনার মূল ঘটনাকারিদের প্ররোচনায় হাসপাতাল থেকে তাকে কৌশলে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। পরে সুজিনাকে বাদি সাজিয়ে সুনামগঞ্জ আদালতে আরজু মিয়ার পুত্র ফয়জুল হক, আবদুর রউফের পুত্র ছমির ও বশর মিয়ার পুত্র কবিরকে অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা (পিটিশন নং ৯৪/২০১৭ইং) দায়ের করে। বক্তারা নিরাপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়েরি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান। হাসাপাতাল থেকে পালিয়ে যাবার পর সুজিনার পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তাদের মূল বাড়ি দিরাই উপজেলার পুরাতন কর্নগাঁও গ্রামে।
দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি
বৃহত্তর ছাতকের দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে ‘দক্ষিণ ছাতক দোলারবাজার’ নামে পৃথক উপজেলা ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্টিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে দোলারবাজারে উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আলী আকবরের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাওলানা জিয়াউর রহমানের পরিচালনা অনুষ্টিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট মুরব্বী সুনাহর আলী, যুগ্ম সম্পাদক নাসির মিয়া নেছার, নূর মিয়া, মৌলভীবাজার ডিভি পুলিশ পরিদর্শক মো. লুৎফুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক হাসিম উল্লাহ, ছায়েদ মিয়া, আরিফ আহমদ-জমির মেম্বার, আরব আলী, আবদুল আলিম মেম্বার, মাহমুদ আলী মেম্বার, ফটিক মিয়া, রইছ আলী মেম্বার, আবুল কালাম মেম্বার, নজরুল ইসলাম, আবদুল খালিক, মন্তাজ আলী, রইছ আলী, শামছ মাহবুব, নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আবদুর রহমান, আবদুল আউয়াল, সালেহ আহমদ, টিএম রায়হান, আকবর আলী, হেলাল আহমদ, ফখর উদ্দিন, আবু সালেহসহ দোলারবাজার, দক্ষিণ খুরমা, ছৈলা-আফজালাবাদ, ভাতগাঁও, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ও সিংচাপইড় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নের দাবিতে দোলারবাজারে এক মানববন্ধব কর্মসূচি পালন করা হয়। বক্তারা বলেন, ভৌগলিক ক্ষেত্রে দোলারবাজার হচ্ছে মধ্যবর্তী স্থান। এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধিন ভূমি। রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, ব্যাংকসহ একটি নদী বন্দর। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক উন্নত। এজন্যে তারা সরকারের কাছে এখানেই দক্ষিণ ছাতক উপজেলা সদর ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন।