ছাতকে ১২ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা, বাদী নিরাপত্তাহীন
ছাতকে ১২ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা দায়ের করে বিপাকে পড়েছেন বাদী। তাকে অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। গত ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর পুত্র শহীদুল ইসলাম সরু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষদের হত্যা, লুটপাট, ধর্ষন জ্বালাও-পোড়াওসহ নানা অপরাধের ঘটনায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে নোয়ারাই ইউনিয়নের আছদনগর গ্রামের মৃত মফিজ আলীর পুত্র আজিজুর রহমান ও সাদক আলী, মৃত ওয়াজিদ আলীর পুত্র রমজান আলী, মৃত চান্দ আলীর পুত্র সিরাজ আলী, মৃত মন্তাজ আলীর পুত্র এতিম উলাহ, বেতুরা গ্রামের মৃত সিদ্দিক আলীর পুত্র খোয়াজ আলী, মৃত মুজেফর আলীর পুত্র মুসলিম আলী, মৃত মাহমদ আলীর পুত্র ইছবর আলী, মির্জাপুর গ্রামের মৃত মছদ্দর আলীর পুত্র ইলিয়াছ আলী, মৃত রুছমত আলীর পুত্র ছুরত মিয়া, মৃত ইছাক আলীর পুত্র ছুরাব আলী ও মৃত হুশিয়ার আলীর পুত্র ওয়ারিছ আলীকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামীরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে স্বক্রিয়ভাবে সহায়তা করে হত্যাকান্ডসহ এলাকার বহু নিরীহ মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতঘরে লুটপাট, গবাদি পশু লুট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। যুবতীদের সম্ভ্রমহানি, ধর্ষণ এবং খুন করে লাশ গুম করেছে এ রাজাকার বাহিনী। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি (বাংলা ১০ আশ্বিন) বেতুরা গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মতচ্ছির আলী ওরফে ফকির চেয়ারম্যানের বাড়িতে গোপনে বৈঠক করে আসামীরা সরাসরি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নোয়ারাই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পৈচাশিকভাবে তান্ডব চালিয়েছিল। রাজারগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলী ও তার ভাইদের বাড়ি-ঘর ভেঙে বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র, নগদ অর্থ ও গবাদিপশু লুটপাট করে রাজাকাররা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাজারগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলী, মুক্তিযোদ্ধা আয়াত উল্লাহ, জোড়াপানি গ্রামের নুরুল ইসলাম, গোদাবাড়ি গ্রামের সোনাবান বিবি, মুক্তিযোদ্ধা আজব আলীসহ আরো অনেকের বাড়ি-ঘর ভেঙে বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র, নগদ অর্থ ও গবাদিপশু লুটপাট করে নিয়ে যায় আসামীরা। বাংলা ২২ আশ্বিন মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়া জোড়াপানি গ্রামের আব্দুস ছামাদকে চোখ ও হাত-পা বেঁধে বেতুরা গ্রামের লঞ্চঘাটে নিয়ে উল্লেখিত আসামীরা তাকে হত্যা করে। রাজারগাঁও গ্রামের হাজী ফুলজান বিবি, গোদাবাড়ি গ্রামের সোনা উদ্দিনসহ অঞ্জাত আরো ৪-৫ জনকে হত্যা করে এ বাহিনী তাদের লাশ সুরমা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এসব ঘটনায় রাজারগাঁও গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর পুত্র শহীদুল ইসলাম সরু ২০১০ সালের ২২ জুলাই সিলেটের ডিআইজি বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। শহীদ হাজী ফুলজান বিবির পুত্র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ ২০১০ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি সুনামগঞ্জের আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছেন।
বর্তমানে এসব আসামীরা পুরো উপজেলায় তাদের মতাবলম্বিদের নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে ৭১’এর মতোই অপরাধ ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. অরুনাভ দাশ সন্দীপ জানান, ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার শহীদুল ইসলাম সরু’র দায়েরী মামলাটি আদালত গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়েছেন। শহীদুল ইসলাম সরু জানান, মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। তারা তাকে একের পর এক প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।