আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় জলমহাল নিয়ে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে। গত ৬ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগটি দায়ের করেছেন উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৎস্যজীবী নশই দাশ। অভিযোগে প্রকাশ,পাটলী ইউনিয়নের নলজুড় নদী তৃতীয় খন্ড জলমহালটি হামিদপুর গ্রামের মধ্যে অবস্থিত।

জলমহালের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে এই গ্রামের প্রায় ৫০টি মৎস্যজীবী পরিবারের অবস্থান। গত ৬/৯/২০২১ইং তারিখে বর্ণিত জলমহালটি ১৪২৮ বাংলা সনে টোকেন ফি গ্রহনের মাধ্যমে বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য হামিদপুর গ্রামের মৎস্যজীবীদের পক্ষে ধীরেন্দ্র মাৎস্য দাস জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন। গত ১৫/৯/২০২১ইং উক্ত আবেদনটি আমলে নিয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) এস.এম রেজাউল করিম,জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রথম আবেদনকারী গোড়ারগাঁও নিবাসী বিধুনমগং ও দ্বিতীয় আবেদনকারী হামিদপুর নিবাসী ধীরেন্দ্র মাৎস্য দাশগং এর আবেদন বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদপুর গ্রামের মৎস্যজীবীদের আবেদনের বিষয়টি আমলে নেননি।

বাববার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ধর্না দিয়েও আবেদনের বিষয়ে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় গত ২ অক্টোবর পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম.এ মান্নান এমপির কাছে লিখিত আবেদন করেন হামিদপুর গ্রামের মৎস্যজীবীরা। হামিদপুর গ্রামের মৎস্যজীবীদের উক্ত লিখিত আবেদনটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান এমপি। কিন্তু মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশ লঙ্গন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২৬/৯/২০২১ইং তারিখে নিজের স্বাক্ষরিত একখানা তদন্ত প্রতিবেদন ৪/১০/২০২১ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কথিত প্রতিবেদনে বিধুনম কে একমাত্র আবেদনকারী মর্মে স্বীকার করে গোড়ারগাঁও গ্রামের ৩১ জন মৎস্যজীবীদের পক্ষে মতামত প্রদান করা হয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিধুনমগংরা হচ্ছেন জলমহালের ২ কিলোমিটার দূরবর্তী গোড়ারগাঁও এবং ৩ কিলোমিটার দূরবর্তী জগন্নাথপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। কথিত ৩১ জন মৎস্যজীবীদের মধ্যে ১০ জনই হচ্ছেন জগন্নাথপুর পৌরসভার নাগরিক। আবার ৩১ জনের মধ্যে কেহই জলমহালটির তীরবর্তী নন। হামিদপুর গ্রামের মৎস্যজীবীরা বলেন,দীর্ঘদিন ধরে আমরা আমাদের গ্রামের মধ্যে অবস্থিত খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছি। টোকেন ফি দ্বারা দুরবর্তী অন্য গ্রামের লোকজন এই খালটি ভাগিয়ে নিয়ে আমাদেরকে পথে বসানোর পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। আমরা টোকেন ফি নিয়ে আমাদের খালটি আমাদেরকে বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এরালিয়া বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, নলজুড় নদী তৃতীয় খন্ড জলমহালটি কাগজেপত্রে একটি জলমহাল হলেও হামিদপুর গ্রামের মৎস্যজীবীরা এটিকে একটি উন্মুক্ত খাল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। তাদের একমাত্র আয়ের উৎসই হচ্ছে খালের মধ্যে মাছ ধরা। তারা এই খালে না নামলে আমরা এলাকাবাসী মাছ খেতে পারবনা। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাজেদুল ইসলাম বলেন,আমার উপর আনীত অভিযোগটি একেবারেই সঠিক নয়। কারণ আমি নিজে কোন মন্তব্য বা মতামত দেইনি। উপজেলা মৎস্য অফিসার যে মতামত বা প্রতিবেদন দিয়েছেন আমি সেটি জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করেছি মাত্র। এছাড়া আমি কাউকে কোন জলমহাল লীজ দিতে পারিনা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমরা লিখি লীজ দেয়া যেতে পারে। সিদ্বান্ত নেয়ার এখতিয়ার জেলা প্রশাসনের। সুতরাং এখানে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি অবশ্যই জেলা প্রশাসক দেখবেন। তিনি মাত্র একমাস হয় জগন্নাথপুরে যোগদান করেছেন এখনও ভৌগলিকভাবে সমগ্র এলাকা ঘুরার সুযোগ তার হয়নি উল্লেখ করে বলেন,জলমহালের দূরবর্তী বা তীরবর্তী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এবং মৎস্যজীবী সনাক্ত করার বিষয়টি উপজেলা মৎস্য অফিসের উপর বর্তায়। এখানে কোন অনিয়ম বা ত্রæটি হলে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দিলে আমি নিজেও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে পারি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn