জগন্নাথপুরে সোহাগ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৩
জগন্নাথপুরে চালঞ্চল্যকর মাদ্রাসা ছাত্র সোহাগ হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত শিশুসহ ৩ জনকে জানাগেছে, চলতি বছরের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের জয়দা গ্রামের তৈয়বুর রহমান টিটুর ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র মাহবুবুর রহমান সোহাগ (১৭) নিখোঁজ হয়। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে স্থানীয় গ্রামের হাওরে হতভাগ্য সোহাগের গলাকাটা ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখতে পান এলাকাবাসী। খবর পেয়ে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহত সোহাগের পিতা তৈয়বুর রহমান টিটিু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মোট ৩ জনকে আটক করেন। আটককৃতরা হচ্ছে জয়দা গ্রামের আছন খানের ছেলে আসলম খান, আবদুর রহমান উরফে করম আলীর ছেলে আবদুল বাতেন ও আবদুল বাতেনের ভাগ্নে নিজাম উদ্দিনের ছেলে নজমুল মিয়া (১৩)। প্রথমে আসলম খান ও নজমুলকে আটক করে উক্ত হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলেও পরে আবদুল বাতেনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে-আবদুল বাতেন গ্রেফতার হওয়ার আগে গত ২৩ মার্চ আবদুল বাতেন বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে উক্ত গুপ্ত হত্যা মামলায় এলাকার নিরীহ মানুষদের হয়রানী না করতে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন একই গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামছুল হকের সাথে তাদের জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে।
এরই জের ধরে অতীতে গ্রামের আংগুর মিয়া নামের এক ব্যক্তি হত্যা করে আবদুল বাতেনের লোকজনকে ফাসাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া সোহাগ হত্যাকা-ের সাথেও তাদেরকে ফাসানো হয়েছে। সেই সাথে সোহাগ হত্যাকান্ডের ঘটনায় অন্যান্য আসামিদের সাথে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামছুল হকের ভাই নজরুল হককেও আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় সরজমিনে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে জানান, মাদ্রাসা ছাত্র সোহাগ খুবই ভাল একটি ছেলে ছিল। তার সাথে কারো কোন শত্রুতা ছিল না। কে বা কারা এবং কি কারণে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তা এখনো অজানা। তবে ঘটনার পর থেকে গ্রামের একটি হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়া পরিবারসহ অনেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাদেরকে ধরতে পারলে হয়তো ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হতে পারে। এ ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত আবদুল বাতেন ও নজমুলের পরিবারের লোকজন জানান, আবদুল বাতেন ও শিশু নজমুল ভাল লোক। তারা অভিযোগ করে বলেন, নজমুল সোহাগের খেলার সাথী হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সাথে আবদুল বাতেন পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করায় তাকেই ফাসানো হয়েছে। এ ব্যাপারে হতভাগ্য মাদ্রাসা ছাত্র সোহাগের পিতা তৈয়বুর রহমান টিটু বলেন, আমার পুত্র হত্যার বিচার চাই। যে বা যারা আমার অবুঝ শিশুকে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তবে এ ঘটনায় যেন কোন নিরপরাধ লোককে জড়ানো না হয়। সে ব্যাপারে নজর রাখতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
জানতে চাইলে চাঞ্চল্যকর সোহাগ হত্যা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. মঈন উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত নজমুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার মামা আবদুল বাতেনের বাড়ি থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা দা উদ্ধার করা হয় এবং এ ঘটনায় পরে আবদুল বাতেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।